নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র হচ্ছেন এমপিসহ ১১ আওয়ামী লীগ নেতা

নৌকা না পেয়ে স্বতন্ত্র হচ্ছেন এমপিসহ ১১ আওয়ামী লীগ নেতা

ফাইল ছবি

‘স্বতন্ত্র প্রার্থী’ হলে বাধা দেওয়া হবে না-এমন ইঙ্গিত আসার পর লক্ষ্মীপুরে নৌকার বিরুদ্ধে ভোটে দাঁড়ানোর ঘোষণা দিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন অন্তত এক ডজন আওয়ামী লীগ নেতা। এদের মধ্যে মনোনয়ন না পাওয়া সংসদ সদস্য ও উপজেলা চেয়ারম্যান যেমন আছেন, তেমনি আছেন কেন্দ্রীয় নেতারাও। তবে শেষ পর্যন্ত কারা থাকছেন ভোটের মাঠে, সেটি নিশ্চিত হতে অপেক্ষা করতে হবে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ দিন পর্যন্ত।

দলীয় সূত্রে জানা যায়, জেলার চারটি আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন ৩৫ জন। এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ১০জন। লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক) আসনে ৮ জন, লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে ১০ জন এবং লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন ৭ জন।

গত ২৬ নভেম্বর দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের লক্ষ্মীপুরের ৪টি নির্বাচনী আসনে দলীয় প্রার্থী হিসেবে চারজনের নাম ঘোষণা করেন। তারা হলেন-

লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে ড. আনোয়ার হোসেন খান। তিনি উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি ও বর্তমান সংসদ সদস্য। 

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর-সদর আংশিক) আসনে অ্যাডভোকেট নুরউদ্দিন চৌধুরী নয়ন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও বর্তমান সংসদ সদস্য। ওই আসনে উপনির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন পেয়ে তিনি বিগত সংসদের সদস্য নির্বাচিত হন। 

লক্ষ্মীপুর-৩(সদর) আসনে গোলাম ফারুক পিংকু আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন। তিনি জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি। চলতি মাসের ৫ তারিখ আসনটির উপ-নির্বাচনে তিনি দলীয় মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচিত হন। 
লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি) আসনে মনোনীত প্রার্থী আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির কৃষি ও সমবায় বিষয়ক সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী। তিনি প্রথমবারের মতো প্রত্যক্ষ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন লাভ করেন। তবে এর আগে তিনি দশম জাতীয় সংসদে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।

আগামী ৭ জানুয়ারির ভোটকে সামনে রেখে দলীয় প্রার্থীদের নামগুলো ঘোষণা করার আগেই মনোনয়নপ্রত্যাশী প্রায় সাড়ে তিন হাজার নেতার সঙ্গে মত বিনিময়ে বিশেষ বার্তা দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। মত বিনিময় থেকে বের হয়ে এসে নেতারা জানান, প্রধানমন্ত্রী তাদেরকে বলেছেন- ২০১৪ সালের নির্বাচনের মতো কোনো আসনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় পাস দেখতে চান না তিনি। সব আসনেই যেন ‘ডামি (বিকল্প)’ প্রার্থী থাকে। এ বার্তা পাওয়ার আগে প্রতীক না পেলে ভোটে দাঁড়াবেন না ঘোষণা দেওয়া নেতারাও এখন উল্টো চিন্তা করছেন। পরদিনই তার প্রতিফলন দেখা গেছে মাঠের চিত্রে।

লক্ষ্মীপুরের ৪টি আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চাওয়া ৩৫ জনের মধ্যে নৌকার টিকেট না পাওয়া ১১ জনই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তারা হলেন- 

লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে কেন্দ্রীয় যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য হাবিবুর রহমান পবন।

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর) আসনে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্য সেলিনা ইসলাম (মানবপাচারের অভিযোগে কুয়েতে সাজাপ্রাপ্ত সাবেক সাংসদ শহিদুল ইসলাম পাপুলের স্ত্রী), সাবেক ছাত্রনেতা এএফ জসিম উদ্দিন, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মিরাজ মুক্তাধির।

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে ঢাকার মোহাম্মদপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি অধ্যক্ষ এমএ সাত্তার, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য এম এ হাসেম, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য খোকন চন্দ্র পাল, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক শিল্প বিষয়ক সম্পাদক দেলোয়ার হোসেন, জেলা সেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বেলায়েত হোসেন বেলাল।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে সাবেক সংসদ সদস্য মো. আব্দুল্লাহ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য ইস্কান্দার মির্জা শামীম।

জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় এবং সুত্রে জানা যায়, বুধবার (২৯ নভেম্বর) বিকেল পর্যন্ত লক্ষ্মীপুর জেলা প্রশাসক ও রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৪৫ জন। যার মধ্যে আওয়ামী লীগ ৭ জন, স্বতন্ত্র ২০ জন এবং জাতীয় পার্টিসহ অন্যান্য দলের ১৮জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।

এর মধ্যে লক্ষ্মীপুর-১ (রামগঞ্জ) আসনে ১০ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, তরিকত ফেডারেশন, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট এবং ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী রয়েছে।

লক্ষ্মীপুর-২ (রায়পুর ও সদর আংশিক) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১১ জন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি, জাসদ, বাংলাদেশ ইসলামি ফ্রন্ট এবং ইসলামি ফ্রন্ট বাংলাদেশ এর প্রার্থী রয়েছে। এছাড়া মনোনয়ন না পাওয়া একজন সংসদ সদস্য এবং নৌকার মাঝির স্ত্রীও রয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ১৬ জন। তাদের মধ্যে জাতীয় পার্টি, তৃণমূল বিএনপি, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, জাকের পার্টি, বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির প্রার্থী রয়েছে। এছাড়া স্বতন্ত্র পার্থীর তালিকায় একজন উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানও রয়েছেন।

লক্ষ্মীপুর-৪ (রামগতি-কমলনগর) আসনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন ৮ জন। তাদের মধ্যে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বাংলাদেশ সুপ্রীম পার্টি ও বিকল্পধারার প্রার্থী রয়েছে