গাজীপুরে মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা, ঘাতক বন্ধু গ্রেপ্তার

গাজীপুরে মুক্তিপণ না পেয়ে হত্যা, ঘাতক বন্ধু গ্রেপ্তার

ছবিঃ সংগৃহীত।

গাজীপুরে বন্ধুকে হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে গাজীপুর পিবিআই'র সদস্যরা। মঙ্গলবার দিবাগত গভীর রাতে তাকে গাজীপুরের কালিয়াকৈর থানার মৌচাক এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। বুধবার দুপুরে তাকে আদালতে পাঠানো হয়েছে।

 

শ্রী জয় চন্দ্র রায় (১৯), দিনাজপুরের পার্বতীপুর থানার দেবপাড়া এলাকার শ্রঈ কমল চন্দ্র রায়ের ছেলে।

 

ভিকটিম আজাদ খান (২০), কালিয়াকৈর উপজেলার কলাবাধা এলাকার ইউনুছ আলীর বাড়ীতে ভাড়ায় থেকে রাজমিন্ত্রির যোগালীর কাজ করতেন।

 

পিবিআই'র পুলিশ সুপার মোহাম্মদ মাকছুদের রহমান জানান, ২৪নভেম্বর রাত সাড়ে ৭টার দিকে আজাদ খান বাসা হতে বের হয়ে নিখোঁজ হন। তার মা তাঁর ছেলের মোবাইল ফোনে কল করলে অজ্ঞাতনামা ব্যক্তি ফোনটি রিসিভ করে। পরে তার ছেলেকে পেতে হলে টাকা দিতে হবে এবং টাকা যোগাড় করে জানাতে বলে।

ছেলেকে সম্ভাব্য সকল স্থানে খোঁজাখুঁজি করেন। পরে ২৭ নভেম্বর সন্ধ্যায় স্থানীয় এক মাসের খামারে ছেলের লাশ পড়ে থাকার খবর পান। মা মোসাঃ মাজেদা খাতুন ছেলে আজাদ খানের লাশটি সনাক্ত করেন এবং কালিয়াকৈর থানায় বাদী হয়ে মামলা করেন।

 

গোপন সংবাদের ভিত্তিতে আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার করে কালিয়াকৈর থানার মৌচাক এলাকা থেকে ২৮ নভেম্বর দিবাগত গভীর রাতে জয় চন্দ্রকে গ্রেপ্তার করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে জয় জানায় যে, জয় ও ভিকটিম আজাদ ছোট বেলার বন্ধু। তারা ছোট থেকেই একই এলাকায় বসবাস করে আসছে। তারা দুজন রাজমিস্ত্রির জোগালীর কাজ করতো। জয় ও ভিকটিম এবং তাদের অপর বন্ধু বাধন একসাথে গাঁজা সেবন করতো। জয়ের অর্থনৈতিক অবস্থা খারাপ থাকায় টাকা রোজগারের কোন উপায় না পেয়ে তার বন্ধু ভিকটিম আজাদকে আটক করে বা হত্যা করে তার পরিবারের নিকট থেকে মুক্তিপণ আদায় করার পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা মোতাবেক গত ২৪ নভেম্বর জয় ভিকটিমকে নিয়ে স্থানীয় মধুর টেক নামক এলাকায় গাজা সেবন করার উদ্দেশ্যে নিয়ে যায়। মধুর টেক মাছের খামারের গাছ তলায় বসে গাঁজা সেবনের জন্য গাঁজার স্টিক তৈরী করার সময় আসামী শ্রী জয় চন্দ্র রায় ভিকটিম আজাদের পিছন থেকে গলার ডান পার্শ্বে তার সাথে থাকা দা দিয়ে স্বজোরে একটি কোপ দেয় এবং তার হত্যা নিশ্চিত করে। 

পরবর্তীতে আসামী জয় চন্দ্র রায় তার বন্ধু ভিকটিম আজাদকে পুকুরের পানিতে ভাসিয়ে অপরপ্রান্তে থাকা ঝোপের নিচে মাটিচাপা দিয়ে ভিকটিমের ব্যবহৃত মোবাইল ও আসামীর চাদরটি নিয়ে সেখান থেকে চলে আসলেও হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা’টি ঘটনাস্থলেই ফেলে আসে। ঘটনাস্থল থেকে আসামী তার অপর বন্ধু বাধনের বাসায় এসে ভেজা কাপড় পরিবর্তন করে বাধনের গেঞ্জি ও লুঙ্গি পড়ে। বাধন কাপড় ভেজার কারণ জিজ্ঞাসা করলে আসামী জানায় যে, ভুতের ভয় পাওয়ায় সে গোসল করেছে। পরবর্তীতে রাত ০৯.৫২ ঘটিকার সময় আজাদের মোবাইল থেকে পর পর দুই বার ভিকটিমের মাকে ফোন দিয়ে তার ছেলের মুক্তিপনের জন্য ৬০ হাজার টাকা চায়। আজাদের মা বিষয়টি আমলে না নেওয়ায় সে ফোন কেটে দেয়। পরদিন ভোরে আসামী শ্রী জয় চন্দ্র রায় পুনরায় ঘটনাস্থলে গিয়ে হত্যাকান্ডে ব্যবহৃত দা’টি নিয়ে এসে ২৫০/— টাকার বিনিময়ে ফেরিওয়ালার নিকট বিক্রয় করে দেয়। ভিকটিম আজাদের ব্যবহৃদ মোবাইলের সিম ভেঙ্গে বাড়ির পাশে লাল মাঠ নামক স্থানে ফেলে দেয় এবং মোবাইল ফোনটি বন্ধ করে আসামীর মায়ের রুমে রেখে দেয়।

গ্রেপ্তারকৃত আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে অপরাধের কথা স্বীকার করে । পরে বুধবার তাকে আদালতে পাঠানো হয়।