এমপি পদে লড়ছেন প্রাইভেট ক্লিনিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী

এমপি পদে লড়ছেন প্রাইভেট ক্লিনিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী

মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ময়মনসিংহ-১ (হালুয়াঘাট-ধোবাউড়া) আসনে প্রার্থী হয়েছেন একটি প্রাইভেট ক্লিনিকের পরিচ্ছন্নতাকর্মী মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম।

বৃহস্পতিবার (৩০ নভেম্বর) গণমুক্তি জোটের প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দেন তিনি। শনিবার (২ ডিসেম্বর) তার মনোনয়ন বৈধ ঘোষণা করা হয়।

মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগমের বাড়ি হালুয়াঘাট উপজেলার গাজীরভিটা ইউনিয়নের বোয়ালমারী গ্রামে। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছেন তিনি।

শনিবার সরেজমিনে তার পরিবারের সঙ্গে কথা হয়। তার মা আছিয়া খাতুন বলেন, ‘আমরা গরিব মানুষ। মাইয়াডা লইয়া চারজনের সংসার। মাইয়াডার আয় রোজগার দিয়ে চলে সংসার। বহু শখ কয়রা বিয়া দিছিলাম। হেই সংসারও টিকল না। এহন হুনি (শুনি) মাইয়া এমপি প্রার্থী দাঁড়াইছে।’

জানা গেছে, ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বোররচর এলাকার ফারুক মিয়ার সঙ্গে প্রায় ১২ বছর আগে বিয়ে হয় মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগমের। তার ঘরে রয়েছে দুই সন্তান। বড় ছেলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ে। এক মেয়ে পড়ে শিশু শ্রেণিতে। দুই বছর ধরে তাদের কোনো খোঁজখবর রাখেন না ফারুক মিয়া। এ অবস্থায় দুই বছর ধরে মায়ের সঙ্গে হালুয়াঘাটে বসবাস করছেন রোকেয়া। কখনও ক্লিনিকে, কখনও অন্যের বাসায় কাজ করে চলে তার সংসার।

আছিয়া খাতুনের ভাষ্য, আগে হালুয়াঘাটে ইনসাফ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করতেন, এখন পাশের সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করেন মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম। সেখানে চার হাজার টাকা বেতন দেয়। এ টাকা দিয়েই সংসার চলে তাদের। তিনি বলেন, ‘কয়েক দিন আগে কল আসে আমার মেয়ের কাছে। তখন বলে, ‘তোমার এলাকার নাম দেও ও তোমার পুরো নাম বল’। তারপর থেকে শুনতেছি আমার মেয়েকে নাকি এমপি দাঁড় করাইছে। আমার মেয়ে এমপি দাঁড়াবে কেমনে? আমরা যে জায়াগায় থাকতাচি দেখতাচুন এটা সরকারি জায়গা, খাস জায়গা।’

বৃদ্ধদের হাঁটার ছড়ি প্রতীকের প্রার্থী মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম বলেন, ‘আমার ননাসের জামাই শহিদুল ইসলাম গণমুক্তি জোটের রাজনীতি করেন। কয়েকদিন আগে আমাকে কল দিয়ে এমপি হওয়ার বিষয়ে আমাকে জানান। বলেন, আমার কোনো টাকা-পয়সা লাগবে না, তারা এ বিষয়ে দেখবেন। এ থেকে আমি মনোনয়নপত্র দাখিল করি।’

কারও প্ররোচনায় প্রার্থী হয়েছেন কিনা বা কেউ ভয়ভীতি দেখিয়ে প্রার্থী করিয়েছেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমি নিজের ইচ্ছোয় প্রার্থী হয়েছি। আমি আশাবাদী মানুষ আমাকে সমর্থন করবে। সকলের কাছে দোয়া ও ভোট চাই।’

কথা হয় সেবা ডায়াগনস্টিক সেন্টারের পরিচালক নাজমুল হুদার সঙ্গে। তিনি বলেন, মোছাম্মৎ রোকেয়া বেগম আগে ইনসাফের পরিচ্ছন্নতার কাজ করতেন। এখন অন্যের বাড়িতে পরিচ্ছন্নতার কাজ করেন। আমার এখানেও মাঝে মাঝে কাজ করেন। তিনি এই অফিসের কোনো স্টাফ না।

জানতে চাইলে ময়মনসিংহ জেলা গণমুক্তি জোটের সভাপতি শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘এটি একটি নতুন দল। আমরা তৃণমূলে পরিচিতি বাড়াতে প্রতিটি আসনে প্রার্থী করিয়েছি। ময়মনসিংহ-১ আসনের প্রার্থী আমার ছোট বোন রোকেয়া বেগম। সে গরিব মানুষ। আপনাদের সকলের সহযোগিতা কামনা করি।’