চীনা অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতির পতন

চীনা অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতির পতন

চীনা অর্থনীতির ঊর্ধ্বগতির পতন

আমাদের বেশির ভাগ লোকের কাছে ওজন কমা হলো ইতিবাচক দিক। কিন্তু অর্থনীতির ব্যাপারে তেমনটা নয়। নতুন বিশ্লেষণে দেখা যাচ্ছে যে ১৯৯৪ সালের পর প্রথমবারের মতো চীনের বৈশ্বিক ঊর্ধ্বগতির পতন ঘটেছে। এর ফলে মার্কিন অর্থনীতিকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা ক্রমবর্ধমান হারে সংশয়ের মধ্যে পড়ে গেছে।আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিল এবং অন্যরা নিয়মিতভাবেই প্রবৃদ্ধিতে চীনকে বিশ্বের সবচেয়ে বড় অবদান রাখা দেশ হিসেবে উল্লেখ করে এলেও তা বিভ্রান্তিকর অনুমান বলেই মনে হচ্ছে।

মুদ্রাস্ফীতির সাথে সমন্বয় করার জন্য 'প্রকৃত' জিডিপির মতো সংখ্যা ব্যবহারের মতো বক্তব্য প্রদান করা হয়। কিন্তু আমরা 'নমিনাল' দুনিয়ায় বাস করি, যেখানে মুদ্রাস্ফীতির মাধ্যমে মূল্য ছাড় হয় না, বরং আসল সংখ্যাগুলো থাকে পেচেক এবং স্টোর ট্যাগে। করপোরেট সেল নমিনাল বিষয়। সরকারি ব্যয় এবং কর রাজস্ব নমিনাল। আপনি 'প্রকৃত' ঋণ পেতে পারেন না। আপনি 'প্রকৃত' ডলার দিয়ে ঋণ পরিশোধ করতে পারেন না।

আর এই 'নমিনাল' দুনিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ অর্থনীতি হিসেবে বিরাজ করছে। জেপি মরগ্যান চেজ অ্যান্ড কোম্পানির অর্থনীতিবিদেরা ২০২২ সালের জন্য বৈশ্বিক চূড়ান্ত হিসাব করে জানিয়েছে, বিশ্বের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের ২৮.৪ ভাগ করছে যুক্তরাষ্ট্র। চীন করছে ২০ ভাগ।

চলতি বছরও চীনকে ছাড়িয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর একটি কারণ ইউয়ানের পতন। এছাড়া মার্কিন ভোক্তাদের ঘুরে দাঁড়ানোও আরেকটি কারণ। এই দুই ভূ-কৌশলগত প্রতিযোগী বিশ্বজুড়ে প্রভাব বিস্তারের জন্য লড়াই করতে থাকার প্রেক্ষাপটে আমেরিকান অর্থনৈতিক অবস্থান হতে পারে হ্যান্ডি কার্ড।

জেপিমরগ্যানের অর্থনীতিবিদেরা উল্লেখ করেছেন, বৈশ্বিক জিপিডিতে চীনের হিস্যা হ্রাস পাওয়াটা বিরল ঘটনা। ডলারের বিপরীতে ইউয়ানের নতুন বিনিময় মূল্য নির্ধারণ করার প্রেক্ষাপটে গত বছর ১৯৯৪ সালের পর প্রথমবারের মতো পতন হয়েছিল।অবাক করা বিষয় হলো, চীনের অবস্থান সঙ্কুচিত হয়েছে এমন এক বছরে যখন মার্কিন ফেডারেল রিজার্ভ কয়েক দশকের মধ্যে সুদ হার কয়েক দফা বাড়িয়েছে আগ্রাসীভাবে।

চীনের এই অবস্থার একটি কারণ হলো তাদের জিরো কভিড নীতি। এই নীতির ফলে জনসাধারণ সংক্রমণের মাধ্যমে সুরক্ষা লাভ করতে পারেনি। এছাড়া রিয়েল এস্টেট মার্কেটের ভয়াবহ পতনও দায়ী।এর বিপরীতে মার্কিন জিডিপি গত কোয়ার্টারে ৬ ভাগ বেড়েছে, যা এক বছর আগের চেয়ে বেশি। এর একটি কারণ হলো মুদ্রাস্ফীতি। তবে সেইসাথে ভোগ ব্যয় বৃদ্ধি এবং উৎপাদন বৃদ্ধিও অবদান রেখেছে।

অবশ্য, বর্তমান চ্যলেঞ্জ সত্ত্বেও চীনের তার সম্ভাবনাকে বাস্তব রূপ দেয়ার ব্যাপক সুযোগ পাচ্ছে। তবে জনসংখ্যা কমতে থাকায় কাজটি হবে কঠিন। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র অভিবাসনের মাধ্যমে তাদের ঐতিহ্যবাহী উন্মুক্ত নীতি অব্যাহত রাখায় এই সমস্যা থেকে মুক্তি পাচ্ছে।

এমন এক প্রেক্ষাপটে ব্লুমবার্গের অর্থনীতিবিদেরা মনে করছেন, চীনের পক্ষে কোনোভাবেই বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতিতে পরিণত হওয়া সম্ভব হবে না।আর এটা সত্য প্রমাণিত হলে, নতুন উদীয়মান স্নায়ুযুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র গর্বিত স্থানেই থাকবে, যা কয়েক বছর আগেও অসম্ভব মনে হয়েছিল।
সূত্র : ব্লুমবার্গ