সাতক্ষীরার খড় ও খেজুরের পাতার তৈরী পণ্যে বিশ্ব জয়

সাতক্ষীরার খড় ও খেজুরের পাতার তৈরী পণ্যে বিশ্ব জয়

সংগৃহীত

সাতক্ষীরার খেজুরের পাতা, কাশফুলের গাছ ও খড় দিয়ে তৈরী পণ্য যেন বিশ্ব জয় করেছে। সাত সমুদ্র তের নদী পেরিয়ে সাতক্ষীরার গপিনাথপুর গ্রামের নারীদের হাতের তৈরী বিভিন্ন খড় ও খেজুরের পাতার তৈরী বুনন শিল্পের নান্দনিক বিভিন্ন পন্য সামগ্রী এখন রপ্তানি হচ্ছে ইউরোপ, জার্মানি, ইতালি, স্পেন, অস্ট্রেলিয়া, কানাডা, পেরু, স্পেনসহ আমেরিকার অন্তত ২০ থেকে ২৫টি দেশে।

এসব পন্য সামগ্রীর মধ্যে রয়েছে শপিং বাস্কেট, রাউন্ড বাস্কেট, শ্রাবনী ঢাকনা বাস্কেট, স্কয়ার বাস্কেট, মিনি বাস্কেট, বালতি, সোর্ড, ওয়েষ্ট বাস্কেট, মিরা, ডালি, টেবিলম্যাট ও রাউন্ডম্যাট। সাতক্ষীরার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল নারীদের নিকট থেকে মানসম্পন্ন এসব দৃষ্টিনন্দন পন্য সামগ্রী সংগ্রহ করে তা দুই দশক ধরে ইউরোপ-আমেরিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে আসছে। বছরে সাতক্ষীরা থেকে ২৮ থেকে ৩০ কন্টেইনার খড় ও খেজুর পাতার পন্য বিশ্ব বাজারে রপ্তানি হয়ে থাকে। যার আনুমানিক রপ্তানি মুল্য ২৫ থেকে ২৬ কোটি টাকা। এতে একদিকে যেমন সরকারের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন হচ্ছে তেমনি অর্থনৈতিক ভাবে সাবলম্বী হয়েছে গোপিনাথপুরসহ জেলার অন্তত ৫০০ থেকে ৬০০ পরিবার।

সাতক্ষীরা সদর উপজেলার গোপিনাথপুর গ্রামের প্রায় ৫০ শতাংশ নারী হস্তশিল্পের সাথে জড়িত। তারা সংসারের কাজের পাশাাপাশি খড় আর খেজুর পাতার দিয়ে বিভিন্ন প্রকার দৃষ্টিনন্দন পন্য সামগ্রী তৈরী করে আসছে। এই শিল্পের সাথে জড়িত গোপিনাথপুর গ্রামের গৃহবধু মিনতি রানী সরকার, রিক্তা সরকার, সন্ধ্যা রানী সরকার জানান, তারা দীর্ঘ ১৫ বছর ধরে গৃহস্থলীর কাজে ব্যবহৃত ও বিল্ডিংবাড়ীর সোভাবর্ধনের জন্য এখানকার খড় এবং খেজুর পাতা দিয়ে দৃষ্টিনন্দন ১০ থেকে ১৫ প্রকারের বিভিন্ন পন্য সামগ্রী তৈরী করেন। তাতে তাদের সাংসারিক কাজের বাইরে প্রতি মাসে এই হস্ত শিল্প থেকে প্রতিটি পরিবার ৬ থেকে ৭ হাজার টাকা উপার্জন করে থাকেন। তাদের উৎপাদিত এসব পন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সাতক্ষীরার ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনাল কোম্পানির কাছে বিক্রি করে থাকেন। সেখান থেকে যে অর্থ পান তাতে তাদের ভাল ভাবে সাংসার চলে যায়।

সাতক্ষীরা জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক একে.এম শফিউল আযম জানান, প্রান্তিক পর্যায়ের নারীদের স্বাবলম্বি করে তুলতে সরকার বিভিন্ন ধরনের প্রকল্প হাতে নিয়েছে। তার পাশাপাশি বেসরকারী ভাবে অনেক নারী উদ্যোক্ত তৈরী হয়েছে সাতক্ষীরায়। গোপিনাথপুর গ্রামের ৫ থেকে ৬’শতাধিক নারী খড় ও খেজুর পন্য সামগ্রী তৈরী করে আজ তারা সাবলম্বী। তাদের তৈরি এসব পন্য এখন বিশ্ব বাজার দখল করে নিয়েছে। খেজুর পাতা ও খড়েড় তৈরী পন্য ইউরোপ-আমেরিকারমত বিদেশের ২৫ থেকে ৩০টি দেশে রপ্তানি করে জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখছে। বিশেষকরে গোপিনাথপুরের নারীরা তাদের সাংসারিক কাজকর্ম সামলেও এই হস্তশিল্পের মাধ্যমে একেকজন নারী ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা ঘরে বসে উপার্জন করছেন। এসব নারী হস্তশিল্পের কাজ করে এখন আর্থিক ভাবে স্বচ্ছল।

সাতক্ষীরার রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের ম্যানেজিং ডিরেক্টর মুন্সি খায়রুল ইসলাম জানান, তাদের প্রতিষ্ঠানটি স্থানীয় নারীদের নিকট থেকে শৈল্পিক বিভিন্ন ডিজানের তৈরী খড় ও খেজুর গাছের পাতার তৈরীকৃত বিভিন্ন পন্য সামগ্রী সংগ্রহ করে বিশ্ব-বাজারে রপ্তানি করে আসছে দুই দশক ধরে। নারীদের হাতে বুনন এসব পন্য সামগ্রী ইউরোপ,আমেরিক, সুইডেন, অষ্ট্রেলিয়া, কানাডা জার্মানি, ইতালী, স্পেনসহ প্রায় ২৫ থেকে ৩০টি দেশে ব্যাপক চাহিদা। বছরে প্রায় ৩০ কন্টেইনার খড় ও খেজুর পাতার পন্য রপ্তানি করা হয়ে থাকে। যার আনুমানিক রপ্তানি মূল্য ২৫ থেকে ২৬ কোটি টাকা।

সাতক্ষীরা জেলা প্রসাশক মোহাম্মাদ হুমায়ুন কবির জানান, জাতীয় অর্থনীতিতে সাতক্ষীরা জেলার খড় ও খেজুর পাতার তৈরী হস্ত শিল্প বিশ্ব বাজারে জায়গা করে নিয়েছে। বে সরকারি উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান ঋশিল্পী ইন্টারন্যাশনালের পৃষ্টপোষকতায় হস্তশিল্পের অনেক মানসম্পন্ন পন্য উৎপাদন করছেন নারীরা। সরকারের পক্ষ থেকেও বিভিন্ন প্রকল্পে আওতায় নারীরা সাবলম্বী হচ্ছে। খড় ও খেজুর পাতার পন্যের পাশাপাশি সাতক্ষীরা জেলা থেকে সাদা সোনা খ্যাত চিংড়ি, কাঁকড়া, মধু, আম, পোড়া মাটির টালিসহ বিভিন্ন পন্য বিদেশে রপ্তানি হয়ে থাকে।