কেয়ামত ও কেয়ামতের পূর্ব লক্ষণ

কেয়ামত ও কেয়ামতের পূর্ব লক্ষণ

প্রতিকী ছবি।

পৃথিবীর বয়স যতই বাড়ছে আমরা ততই কেয়ামতের সম্মুখীন হচ্ছি। প্রশ্ন হলো- কেয়ামত কী?

পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, অবশ্যই কেয়ামত আসবে, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই কিন্তু অধিকাংশ লোকই এ অমোঘ সত্য বিশ্বাস করে না। (সুরা আল মোমেন, আয়াত ৫৯)। যখন কেয়ামতের ঘটনাটি সংঘটিত হবে, তখন কেউই তার সংঘটিত হওয়ার অস্বীকারকারী থাকবে না।

(সুরা আল ওয়াকিয়া, আয়াত ১-২)।

সেদিন এর অবস্থা সম্পর্কে কোরআনে বর্ণিত হয়েছে, পৃথিবী যখন প্রবল কম্পনে কম্পিত হবে, পর্বতমালা সম্পূর্ণরূপে চূর্ণবিচূর্ণ করে দেওয়া হবে, অতঃপর তা বিক্ষিপ্ত ধূলিকণায় পরিণত হয়ে যাবে। (সুরা ওয়াকিয়া আয়াত ৪, ৫, ৬)। তাহলে আমরা জানতে পারলাম কেয়ামতের দিন পৃথিবীর অবস্থা কি হবে।

তাহলে সেদিনটি আসার আগে আমাদের কী করা উচিত? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, হে মানুষ সেদিনটি আসার আগেই তোমরা তোমাদের মালিকের ডাকে সাড়া দাও, মনে রেখ আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে যে দিনটির প্রতিরোধকারী কেউ থাকবে না। সেদিন তোমাদের জন্য কোনো আশ্রয়স্থলও থাকবে না আর না তোমাদের পক্ষে সেদিন কেয়ামতের দিন অস্বীকার করা সম্ভব হবে। (সুরা আশ শুরা, আয়াত ৪৭)।

কেয়ামতের পূর্ব লক্ষণগুলো কী বা কীভাবে আমরা জানতে পারব কেয়ামত সন্নিকটে? কেয়ামত নিকটবর্তী বা তার পূর্বলক্ষণ হলো ক্রমাগতভাবে ফেতনা বৃদ্ধি পাওয়া।

ফেতনা হলো ক্রমাগত সমস্যা, ইমান নষ্ট হয়ে যাওয়া, মানুষের মধ্যে মায়া মমতা, দয়া লোপ পাওয়া, রক্তপাত বা হানাহানি বৃদ্ধি পাওয়া, মিথ্যার প্রসার ঘটা, ইসলামী জ্ঞান উঠে যাওয়া, গান বাজনার প্রসার ঘটা, আমানত উঠে যাওয়া, মিথ্যা সাক্ষী দেওয়া, সুদ খাওয়ার প্রবণতা বেড়ে যাওয়া, ঘুষের আধিক্য বেড়ে যাওয়া, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা, এমন কি মানুষ জানবেও না সে কত ধরনের সমস্যা বা ফেতনার সম্মুখীন হচ্ছে। রসুল (সা.) বলেছেন, তখন ধৈর্য ধরা বা ইমানের ওপর স্থির থাকা এত কঠিন হবে যে, যেমন আগুনের কয়লা হাতে রাখা কঠিন। রসুল (সা.) আরও বলেছেন, কিয়ামতের আগে ইলম ওঠে যাবে এবং অজ্ঞতার বিস্তার ঘটবে। (বুখারি)। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, কেয়ামত কায়েম হবে না যতক্ষণ না ফোরাত তার মধ্যস্থিত সোনার পর্বত বের করে দেবে।

লোকেরা এ নিয়ে লড়াই করবে এবং এক শর মধ্যে নিরানব্বই জনই মারা যাবে। তাদের প্রত্যেকেই মনে করবে সম্ভবত আমি বেঁচে যাব। (মুসলিম শরিফ, ৭০০৮)।

অতিবৃষ্টি, বন্যা, খরা, তীব্র ঠাণ্ডা, দাবদাহ, ঘন ঘন ভূমিকম্প ও বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ব্যাপক হারে দেখা দেবে, এতে করে মাঠঘাট ফসলহীন হয়ে পড়বে। লোকেরা এত পরিমাণ সম্পদশালী হয়ে উঠবে তখন জাকাত গ্রহণকারী কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না।

চতুর্দিক থেকে ইসলামের ওপর এত পরিমাণ হামলা আসবে যেভাবে নেকড়ের দল শিকারের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে।

 

যখন কেয়ামত সংঘটিত হবে তখন কী ঘটবে? পবিত্র কোরআনে আল্লাহ বলেন, যখন পৃথিবী তার কম্পনে প্রকম্পিত হবে। যখন সে তার বোঝা বের করে দেবে। (সুরা যিলযাল, আয়াত ১-২)। কেয়ামতের আগে ১০টি নিদর্শন। ১) ধোঁয়া, ২) দজ্জালের আবির্ভাব ৩) দাব্বাতুল আরদ্ব (পৃথিবীর প্রাণী) ৪) পশ্চিম দিক থেকে সূর্যোদয় ৫) ঈসা (আ.) এর আগমন ৬) ইয়াজুজ-মাজুজের আগমন ৭) পূর্বদিকে ভূমিধস ৮) পশ্চিম দিকে ভূমিধস ৯) আরব ভূমিতে ভূমিধস ১০) কাফিররাই শুধু কেয়ামত অস্বীকার করবে।

 

আল্লাহ বলেন, আর কাফিররা বলে, আমাদের কাছে কেয়ামত আসবে না। বলুন অবশ্যই হ্যাঁ, শপথ আমার রবের। নিশ্চয় তোমাদের কাছে তা আসবে। (সুরা সাবা, আয়াত ৩)। কেয়ামতকে প্রতিহত করার শক্তি কারও থাকবে না। আল্লাহ আরও বলেন, বরং তা তাদের ওপর আসবে অতর্কিতভাবে এবং তাদের হতভম্ব করে দেবে। 

ফলে তারা তা রোধ করতে পারবে না এবং তাদেরকে অবকাশও দেওয়া হবে না। (সুরা আল আম্বিয়া, আয়াত ৪০)।

 

সুতরাং প্রতিটি মুমিন বান্দার উচিত কেয়ামত সংঘটিত হওয়ার আগে জীবনের প্রতিটি মুহূর্তকে শেষ মুহূর্ত বিবেচনা করে ওপরে উল্লিখিত কাজগুলো থেকে বিরত থাকা। কেয়ামতের দিন কোনো বিনিময়ই গ্রহণযোগ্য হবে না। আল্লাহ বলেন, তোমরা সেদিনটিকে ভয় করো যেদিন একজন মানুষ আরেকজনের কোনো কাজেই আসবে না। না সেদিন কোনো বিনিময় নেওয়া হবে। (সুরা বাকারা, আয়াত ১২৩)।

 

আল্লাহ রব্বুল আলামিন মুসলমান জাতিকে কেয়ামতের সব আলামত ও ভয়াবহতা থেকে নিরাপদ রাখুন। ইমান ও নেক আমলের ওপর জীবনযাপন করার তৌফিক দান করুন।