বগুড়ায় আট বছরে খুন ৬০৬

বগুড়ায় আট বছরে খুন ৬০৬

প্রতীকী ছবি

বগুড়া জেলা খুনের রঙের লাল হয়ে উঠছে। তুচ্ছ ঘটনা থেকে শুরু করে পূর্ব বিরোধ, শত্রুতা, আধিপত্য, রাজনৈতিক, মাদক ও বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজির টাকার ভাগবাটোয়ারা, জমিজমা, পারিবারিক দ্বন্দ্ব নিয়ে খুনের ঘটনা ঘটছেই। কারো কারো নৈতিক স্থলন এবং সামাজিক মূল্যবোধ কমে যাওয়ার কারণেই খুনের ঘটনা বাড়ছে। পুলিশের তথ্যমতে গত ৮ বছরে ৬০৬ জন খুন হয়েছে।

জানা যায়, রাতে কিংবা দিনে কোনো না কোনো ঘটনায় বগুড়ার ১২টি উপজেলায় খুনের ঘটনা প্রায়ই ঘটছে। বিগত দিনে এত খুনের ঘটনা না থাকলেও সম্প্রতি এসে খুনের ঘটনা বাড়ছে।

বগুড়া জেলা পুলিশের বিশেষ শাখার এক হিসাব মতে, প্রতিহিংসা, আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক দ্বন্দ্ব, মাদক ও বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ, চাঁদাবাজির টাকার ভাগবাটোয়ারা, জমিজমা নিয়ে, এমনকি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করেও খুনের ঘটনা ঘটছে। এর মধ্যে শহরে রাজনৈতিক আধিপত্য বিস্তার, ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ ও তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে খুনোখুনির ঘটনা ঘটছে।

২০১৬ সাল থেকে ২০২১ সাল পর্যন্ত গত ৬ বছরে জেলায় ৪৪৬ জন মানুষ খুন হয়। এ ছাড়া ২০২২ সালে জেলায় খুন হন আরও ৮৯ জন। আর ২০২৩ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত খুন হয়েছে ৭১ জন। সব মিলিয়ে গত ৮ বছরে জেলার ১২টি উপজেলায় খুনের শিকার হন মোট ৬০৬ জন।

আলোচিত খুনের ঘটনার মধ্যে রয়েছে, চলতি বছরের গত ২৩ এপ্রিল ঈদের ছুটিতে জেলা শহরের সাতমাথা এলাকায় প্রধান ডাকঘরে নৈশ প্রহরীর দায়িত্বে থাকা অফিস সহায়ক প্রশান্ত আচার্যকে খুন করে ভোল্ট কেটে প্রায় ৮ লাখ টাকা লুটের ঘটনা। পরে এ ঘটনায় পুলিশ শফিকুল ইসলাম নামে একজনকে গ্রেফতার করে। সে প্রধান ডাকঘরে ডাকাতি ও প্রহরী প্রশান্ত আচার্যকে খুনের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।

এর আগে, গত ২১ এপ্রিল রাত সোয়া ১২টার দিকে বগুড়া সদর থানার সামনে ঈদ মার্কেটে আসা শতশত মানুষের সামনে অধ্যাপক রেজাউল করিম পান্নাকে উপর্যুপরি ছুরিকাঘাতে হত্যা করে। ঘটনার পরপরই পালিয়ে যাওয়ার সময় জনতার সহযোগিতায় হত্যাকারী সম্রাটকে পুলিশ একটি চাকুসহ গ্রেফতার করেছে। গ্রেফতার সম্রাট জবানবন্দিতে উল্লেখ করে জমিজমা নিয়ে বিরোধের জের ধরে অধ্যাপক পান্নাকে সে হত্যা করেছে। অধ্যাপক পান্না ও ঘাতক সম্রাটের বাড়ি শহরের ফুলবাড়ি মধ্যপাড়ায়।

গত ৯ মে রাতে জেলা শহরের মালগ্রাম উত্তরপাড়া এলাকায় বেলতলা মসজিদের পেছনে সাদাফ ছাত্রাবাসের কাছে সন্ত্রাসীরা স্বেচ্ছাসেবকলীগ নেতা নাহিদ হাসানকে কুপিয়ে হত্যা করে। এ হত্যার ঘটনায় র‌্যাব ও পুলিশ বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করে। এদের মধ্যে আব্দুস সামাদ নামে এক আসামি হত্যার দায় স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেয়।

জবানবন্দিতে সে উল্লেখ করে, বালু ব্যবসার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিরোধের জের ধরে নাহিদকে হত্যা করা হয়। ১০ মে রাতে সদরের নামুজা এলাকায় রাজ্জাক (৫০) নামে এক গরু ব্যবসায়ীকে কুপিয়ে খুন করে দুর্বৃত্তরা। ১৭ মে দুপুরে বগুড়া সদরের রাজাপুর ইউনিয়নের কুটুরবাড়ি এলাকায় জীবন নাহার নামে এক গৃহবধূকে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। জায়গা-জমি নিয়ে বিরোধের জের ধরে তাকে হত্যা করে প্রতিপক্ষ। এ ঘটনায় একজন পুলিশ সদস্যসহ কয়েকজনের নামে মামলা দায়ের হয়েছে।

বগুড়ার সচেতন মহল বলছে, বগুড়ায় আগের থেকে খুনের সংখ্যা বেড়েছে। মানুষের সাথে মানুষের দ্বন্দ্ব বেড়েছে। মানবিকতা কাজ করছে না। নৈতিক শিক্ষাগুলো কাজে আসছে না। যে কারণে খুনের ঘটনাগুলো ঘটেই যাচ্ছে। পুলিশ বিষয়গুলো তদন্ত করছে ঠিকই। কিন্তু মানুষ যদি নৈতিকতা থেকে দূরে যায় তাহলে স্থলন হবেই। আর স্থলন হলে সেখানে নানা অপরাধই ঘটে। সকলকে সামাজিকভাবে দায়িত্ববোধ হতে হবে।

বগুড়া পুলিশ সুপার সুদীপ কুমার চক্রবর্ত্তী জানান, পুলিশ সদস্যরা সকল ঘটনায় অতি দ্রুততার সাথে তদন্ত করে ঘটনায় দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় নিয়ে আসছে। পুলিশ সদস্যরা সার্বক্ষণিক দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছে। বগুড়ায় ঘটে যাওয়া অধিকাংশ খুনের ঘটনাগুলোর তদন্ত প্রায় শেষ এবং আসামিও গ্রেফতার করা হয়েছে।

তিনি বলেন, ইদানিং মানুষ তার সামাজিক মূল্যবোধ ভুলে যাচ্ছে। সমাজের প্রতি দায়িত্ববোধ কমে যাচ্ছে। অথচ এটি হওয়ার কথা ছিল না। আমাদের সামাজিক মূল্যবোধ বাড়লে খুনের সংখ্যাও কমে যাবে।