মা-বাবার অধিকার

মা-বাবার অধিকার

প্রতিকী ছবি।

আল্লাহর ইবাদতের পর সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মা-বাবার অধিকার প্রদান করা। বৈধ কাজে নির্দেশ পালনে তাদের আনুগত্য করা সন্তানের জন্য ওয়াজিব-আবশ্যক।

আল্লাহ বলেন, তোমার রব নির্দেশ দিয়েছেন, তোমরা তাকে ছাড়া অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করবে (সূরা বনি ইসরাইল : ২৩)। আল্লাহর কঠোর আদেশ হচ্ছে, আমি মানুষকে মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি (সূরা নিসা : ৩৬)। অসংখ্য হাদিসে মহানবি (সা.) মা-বাবার প্রতি সন্তানের দায়িত্ব ও কর্তব্যের কথা বলেছেন। যেমন পিতার সন্তুষ্টিতে প্রতিপালকের সন্তুষ্টি এবং পিতার অসন্তুষ্টিতে আল্লাহর অসন্তুষ্টি (সুনানে তিরমিজি-১৮৯৯)। তাদের অবাধ্যতা অমার্জনীয় অপরাধ।

এ অপরাধের জন্য দুনিয়াতে বা মৃত্যুর আগেও এর শাস্তি দেওয়া হয়ে থাকে। মহানবি (সা.) বলেন, আল্লাহ তাঁর ইচ্ছানুযায়ী সব গুনাহই ক্ষমা করে থাকেন, একমাত্র মা-বাবার অবাধ্যতার গুনাহ ছাড়া (সুনানে তিরমিজি : ২৫১১)। নিম্নে কুরআনের আলোকে মা-বাবার অধিকারগুলো তুলে ধরা হলো-

 

সদ্ব্যবহার : মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করা নফল নামাজ, সদকা, সাওম, হজ, ওমরা এবং আল্লাহর পথে জিহাদ করার চেয়েও উত্তম।

 

সেবা যত্ন করা : মা-বাবার অসুখ-বিসুখ হলে যত্নসহকারে সেবা-শুশ্রূষা করা প্রয়োজন। মা-বাবা যাতে সুখে-শান্তিতে জীবনযাপন করতে পারেন সন্তানের সেদিকে সুদৃষ্টি রাখতে হবে। হাদিসে এসেছে, আল্লাহর সন্তুষ্টি বাবার সন্তুষ্টির মধ্যে এবং আল্লাহর অসন্তুষ্টি বাবার অসন্তুষ্টির মধ্যে নিহিত (সুনানে তিরমিজি : ১৮৯৯)। অতএব, সন্তানকে সর্বাবস্থায় মা-বাবার সেবায় নিয়োজিত থাকতে হবে। মন-প্রাণ দিয়ে তাদের সেবা করবে। এটাকে নিজের মুক্তির মাধ্যম মনে করতে হবে।

ডাকে সাড়া দেওয়া : মা-বাবা ডাকা মাত্র সাড়া দিতে হবে। সবার আগে তাদের কথা পালন করতে হবে।

 

বার্ধক্যে সেবা : বার্ধক্যে উপনীত হলে তাদের বিশেষভাবে সেবা যত্ন করা প্রয়োজন। আল্লাহ বলেন, তোমার সামনে তাদের একজন বা উভয়ই যদি বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাদের প্রতি উহ! কথাটিও উচ্চারণ করবে না। তাদের সঙ্গে কর্কশ ভাষায় কথা বলবে না। তাদের সঙ্গে নম্রভাবে কথা বলবে। তাদের প্রতি দয়াপরবশ হয়ে বিনয়ের সঙ্গে বাহু প্রসারিত করে দাও। তাদের সেবায় আত্মনিয়োগ কর (সূরা বনি ইসরাইল-২৩-২৪)। মা-বাবা দরিদ্র বা অসহায় হলে তাদের ভরণপোষণের দায়িত্ব পালন করতে হবে। আল্লাহ বলেন, হে নবি বলুন! তোমরা যে সম্পদ ব্যয় কর, তা তোমাদের মা-বাবার ও নিকটাত্মীয়দের জন্য ব্যয় করবে (সূরা বাকারা : ২১৫)।

 

কৃতজ্ঞতা প্রকাশ : ইসলামে আল্লাহর শোকর গুজারির সঙ্গে সঙ্গে মা-বাবার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করার প্রতি অধিক গুরুত্ব আরোপ করে বলা হয়েছে : আর তোমার প্রতিপালক নির্দেশ দিয়েছেন যে, তোমরা তাকে ব্যতীত অন্য কারও ইবাদত করবে না এবং মা-বাবার সঙ্গে সদ্ব্যবহার করবে (সূরা নিসা : ৩৬)।

 

সম্মান করা : মা-বাবার মান-মর্যাদার প্রতি সম্পূর্ণ সতর্ক দৃষ্টি রাখতে হবে। তাদের প্রয়োজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মহান আল্লাহর নির্দেশ : তুমি তাদের প্রতি উহ্! (ঘৃণা বা দুঃখব্যঞ্জক) শব্দটিও বল না এবং তাদের তিরস্কার কর না বরং তাদের সঙ্গে অতিসম্মানের সঙ্গে কথা বল (সূরা বনি ইসরাইল : ২২)।

আনুগত্য করা : জীবনের সর্বক্ষেত্রে সর্বদা মা-বাবার আদেশ-নিষেধ মান্য করা ও তাদের আনুগত্য করা সন্তানের জন্য ওয়াজিব তথা অপরিহার্য কর্তব্য। তবে মা-বাবা যদি ইসলামবিরোধী কোনো কার্যকলাপ করার নির্দেশ দেন এবং এ ব্যাপারে শক্তি প্রয়োগ করেন, তাহলে সন্তান মা-বাবার এ অন্যায় আদেশ অমান্য করে আল্লাহর বিধান অনুসরণ করবে; কিন্তু এমতাবস্থায়ও সন্তান মা-বাবাকে পরিত্যাগ করতে পারবে না, তাদের সঙ্গে উত্তম ব্যবহার করতে হবে।

 

আর্থিক সহায়তাদান : মা-বাবাকে উত্তমভাবে আর্থিক সহায়তাদানের কথা বলতে গিয়ে মহান আল্লাহ বলেন, যে মালই তোমরা খরচ কর তার প্রথম হকদার বৃদ্ধ বয়সের অসহায় অবস্থাতে তাদের লালন-পালনের দায়-দায়িত্ব সন্তানের ওপর (সূরা বাকারা : ২১৫)।

 

ক্ষমা প্রার্থনা ও দোয়া : মা-বাবার অসহায় ও দুর্বল বয়সে এবং মৃত্যুর পর নিজের শৈশবের কথা স্মরণ করে ভালোবাসা ও রহমতের আবেগে বারবার আল্লাহর দরবারে তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা ও দোয়া করতে হবে। মহান আল্লাহ বলেন, হে আমার প্রতিপালক! তাদের ওপর রহম কর। যেমন শিশুকালে তারা আমাকে লালন-পালন করেছিলেন (সূরা বনি ইসরাইল : ২৪)।

ওয়াদা, অছিয়ত ও ঋণ আদায় করা : মা-বাবার মৃত্যুর পর তাদের দাফন-কাফনের পর তাদের ওয়াদা-অছিয়ত এবং ঋণ থাকলে তা আদায় করা সন্তানের কর্তব্য। মা-বাবার আত্মীয়, বন্ধুদের সঙ্গে ভালো ব্যবহার করা, তাদের অবর্তমানে তাদের বন্ধুবান্ধব ও আত্মীয়স্বজনের সঙ্গে সুন্দর ব্যবহার করাও সন্তানের কর্তব্য।

 

লেখক : শিক্ষক ও গবেষক