সবকিছু আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে

সবকিছু আল্লাহর কাছেই চাইতে হবে

সংগৃহীত

বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত ধর্মপরায়ণ ও সহজ-সরল। আলেম উলামা ও পীর-মাশায়েখদের প্রতি তাদের শ্রদ্ধা অপরিসীম। তবে দেশের বড় একটি জনগোষ্ঠীর পর্যাপ্ত ধর্মীয় জ্ঞান না থাকায় জড়িয়ে পড়ছে ইসলাম বহির্ভূত নানা কর্মকান্ড ও কুসংস্কারে। তাই দেখা যায়, কখনো কোনো কিছুর আশা আর বিশ্বাস নিয়ে ছুটে যায় বাবার মাজার, বটগাছ ও ভন্ড পীরের দরবারে। ঠিক তেমনি একটি ঘটনা ঘটেছে নাটোরের নালপুর জেলার রামকৃষ্ণপুর গ্রামে। নির্দিষ্ট সময়ে রামকৃষ্ণপুর গ্রামের গোঁসাইজীর আশ্রমের বটগাছের নিচে নারীরা সন্তান লাভের আশায় কাপড়ের আঁচল বিছিয়ে বসে থাকেন। তাদের বিশ্বাস বটগাছের ফুল ওই আঁচলে পড়লে ছেলে আর পাতা পড়লে মেয়ে সন্তান হবে। ইসলামে এসব বিশ্বাস শিরক, যা মুসলমারনদের জন্য বর্জনীয়।

ইসলামের বিধানে, মানুষের মনের আশা পূরণ, সন্তান লাভ, কল্যাণপ্রাপ্তি ইত্যাদি সবকিছুই একমাত্র আল্লাহর হুকুমে হয়ে থাকে। তিনি ছাড়া অন্য কারও এ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার কোনো ক্ষমতা নেই। এর ওপর দৃঢ় বিশ্বাস রাখা প্রতিটি মুমিন-মুসলমানের জন্য ফরজ।

গায়েবি বিষয়ে তথা উপায়-উপকরণের ঊর্ধ্বে কোনো বিষয়ে আল্লাহ ছাড়া অন্য কারও কাছে কিছু চাওয়া মারাত্মক অপরাধ, যা ব্যক্তিকে শিরক পর্যন্ত পৌঁছে দেয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘সে আল্লাহকে ছাড়া এমন কিছুকে ডাকে, যা না পাবে অপকার করতে, আর না উপকার; এটাই চরম বিভ্রান্তি।’ সুরা হজ : ১৩

কোরআন মাজিদের অন্যত্র আল্লাহতায়ালা ইরশাদ করেন, ‘তাকে ছেড়ে দিয়ে তোমরা যাদের প্রতি ঝোঁকো, তাদের ডাকো কিন্তু তারা তোমাদের থেকে বিপদ-আপদ দূর করার কোনো ক্ষমতা রাখে না, আর তা বদলাবারও না।’ -সুরা ইসরা : ৫৬

আলোচ্য বিষয়ে হাদিসে ইরশাদ হয়েছে, হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, হজরত রাসুলুল্লাহ (সা.) আমাকে সম্বোধন করে বলেছেন, হে বৎস! তুমি যদি (কোনো কিছু) চাও তবে আল্লাহর কাছে চাও। আর যদি সাহায্য প্রার্থনা করো তবে আল্লাহর কাছেই সাহায্য প্রার্থনা করো। জেনে রেখো, যদি সব মানুষ সংঘবদ্ধভাবে তোমার উপকার করতে চায় তবে তারা ততটুকু উপকারই করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ তোমার জন্য লিখে রেখেছেন। আর যদি তারা তোমার ক্ষতি সাধন করতে চায় তবে ততটুকুই ক্ষতি করতে পারবে যতটুকু আল্লাহ নির্ধারণ করে রেখেছেন। জামে তিরমিজি : ২৫১৬

কোরআন মাজিদের সুরা নুহে বর্ণিত আছে যে, হজরত নুহ (আ.)-এর যুগে কিছু লোক ওয়াদ, সুয়া, ইয়াগুস, ইয়ায়ুক, নসর নামক প্রতিমার কাছে আরাধনা করত, নিজেদের প্রয়োজনে তাদের কাছে চাইত, অনুরূপ জাহিলিয়াতের যুগেও লোকেরা লাত, মানাত, উজ্জাসহ নিজেদের হাতে প্রস্তুতকৃত অসংখ্য প্রতিমার কাছে বিভিন্ন জিনিস চাইত, আল্লাহতায়ালা কোরআন মাজিদের বহু আয়াতে এর অসাড়তার বর্ণনা করেছেন। পাশাপাশি তিনি ছাড়া অন্য কারও কাছে কিছু চাওয়াকে স্থায়ীভাবে নিষেধ করে বলেন, ‘সুতরাং আল্লাহর সঙ্গে তোমরা অন্য কাউকেও ডেকো না।’ সুরা জিন : ১৮

তাই গায়েবি বিষয়ে, বিশেষ করে সন্তান লাভের জন্য আল্লাহ ছাড়া অন্য যে কারও কাছে কিছু চাওয়া অজ্ঞতা, বোকামি ও বৃথা। চাই সে মানুষ হোক অথবা জীবজন্তু, গাছপালা বা বটবৃক্ষ। আমাদের উচিত একনিষ্ঠভাবে আল্লাহর কাছে চাওয়া, তিনি বান্দার দোয়া কবুল করেন, বান্দার জন্য কল্যাণের ফয়সালা করেন। ‘তোমাদের প্রতিপালক বলেছেন, তোমরা আমার কাছে দোয়া করো আমি তোমাদের দোয়া কবুল করব।’ সুরা মুমিন : ৬০

অনুলিখন : মুহাম্মাদ শরিফ মাহমুদ