এমপি হিসেবে শপথ আজ, কাল মন্ত্রিসভা

এমপি হিসেবে শপথ আজ, কাল মন্ত্রিসভা

ছবি: সংগৃহীত

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নির্বাচিতরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নেবেন আজ বুধবার। সকাল ১০টায় সংসদ ভবনে শপথকক্ষে তাদেরকে শপথ বাক্য পাঠ করাবেন এখন পর্যন্ত বিদ্যমান একাদশ সংসদের স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসেই তারা শপথ নিচ্ছেন।

শপথ গ্রহণ শেষে বেলা ১২টায় সংসদ ভবনে এবারের নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়া আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সভা হবে। ওই সভায় নতুন সংসদ নেতা নির্বাচন করবেন আওয়ামী লীগের এমপিরা। নির্বাচিত করা হবে দ্বাদশ সংসদের উপনেতাও। এছাড়াও দ্বাদশ সংসদে সরকারি দলের চিফ হুইপ ও হুইপদেরও নির্বাচিত করা হতে পারে। আওয়ামী লীগের সংসদীয় দলের সেক্রেটারি নূর-ই-আলম চৌধুরী আওয়ামী লীগ দলীয় এমপিদের যথাসময়ে সভায় উপস্থিত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন।

আজ এমপিদের শপথের পর আগামীকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের কাছে শপথ গ্রহণ করবে নতুন মন্ত্রিসভার সদস্যরা। আর এর মধ্য দিয়ে টানা চতুর্থবারের মতো সরকার গঠন করতে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে টানা চতুর্থবার এবং ষষ্ঠবারের মতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করার মাধ্যমে বিরল রেকর্ড গড়তে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা। 

মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন গতকাল সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, আগামীকাল সন্ধ্যা সাতটায় বঙ্গভবনে মন্ত্রিসভার শপথ অনুষ্ঠানের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। নতুন মন্ত্রিসভায় কারা থাকছেন, আকার  কেমন হচ্ছে- এ প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, এবিষয়ে তিনি এখনো নির্দেশনা পাননি।

৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ২৯৯টি আসনে ভোট গ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে চট্টগ্রামের একটি আসনের ফলাফল স্থগিত রয়েছে। নির্বাচনে ২২২টি আসনে জয় পেয়েছে আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি (জাপা) জয় পেয়েছে ১১ আসনে। আওয়ামী লীগের পদধারী নেতারা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে ৬২ আসনে জয় পেয়েছেন। এছাড়া আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জাসদ) ১টি করে দুটি আসনে জয়ী হয়েছে। আর বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি জয় পেয়েছে ১টিতে। গতকাল মঙ্গলবার এই নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশ করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গেজেট প্রকাশের পরদিনই, অর্থাৎ আজ শপথ নিতে যাচ্ছেন নবনির্বাচিত এমপিরা। আর এমপিদের শপথ গ্রহণের পরদিনই, অর্থাৎ আগামীকাল নতুন মন্ত্রিসভার শপথ।

আওয়ামী লীগের সভাপতি শেখ হাসিনাসহ দলটির ২২২ জন নির্বাচিতদের মধ্যে আজ শপথ নেবেন ২২১ জন। কারণ, ঢাকা-৪ আসনের ফলাফল গতকাল হাইকোর্ট স্থগিত করেছেন। জাপার পক্ষ থেকে গতকাল দুপুরে জানানো হয়েছিল যে- দলটির নির্বাচিত ১১জন এমপি আজ শপথ নেবেন না। দলের চেয়ারম্যান জিএম কাদের ঢাকার বাইরে থাকার কারণে এবং আগামীকাল সকাল ১১টায় দলীয় এমপিদের বৈঠকের পর শপথের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। তবে, কয়েক ঘণ্টা পরেই সন্ধ্যায় পৌনে সাতটায় জাপার যুগ্ম দফতর সম্পাদক মাহমুদ আলম স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, জাপার এমপিরা আজই শপথ নেবেন। আজ সকাল ১০টার মধ্যে সংসদ ভবনে বিরোধী দলীয় উপনেতার কার্যালয়ে দলের নবনির্বাচিত সকল এমপিকে উপস্থিত থাকার অনুরোধ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আগামীকালের পূর্বঘোষিত সভাটিও বাতিল করা হয়েছে।

সংবিধান অনুযায়ী সাধারণ নির্বাচনের ফলাফলের গেজেট প্রকাশের পর নতুন নির্বাচিত সংসদ সদস্যদের শপথ পড়ান স্পিকার। গেজেট প্রকাশের তিনদিনের মধ্যে যদি স্পিকার সংসদ সদস্যদের শপথ পাঠ পরিচালনা করতে না পারেন বা না করেন তাহলে এর পরবর্তী তিন দিনের মধ্যে শপথ পাঠ পরিচালনা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার। আর কোনো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে তিনি শপথ না নিলে তার আসন শূন্য হবে। তবে এই ৯০ দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে স্পিকার যথার্থ কারণে তা বাড়াতে পারবেন। গত একাদশ সংসদ নির্বাচনে জয়ী হয়েও নির্ধারিত এই সময়ের মধ্যে শপথ না নেওয়ায় বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের বগুড়া-৬ আসনটি শূন্য ঘোষণা করা হয়েছিল। সাধারণত বেশি আসন পাওয়া দলের সংসদ সদস্যরা প্রথমে এবং এরপর পর্যায়ক্রমে অন্যরা সংসদ সদস্য হিসেবে শপথ নিয়ে থাকেন। আর নিয়ম অনুযায়ী অন্যদের শপথ পাঠ করানোর আগে স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী দ্বাদশ সংসদের সদস্য হিসেবে নিজে নিজেই শপথ নেবেন।

একাদশ সংসদের মেয়াদ পূর্তির ১৯ দিন আগেই নতুন এমপিরা দায়িত্ব নিচ্ছেন
সংবিধানে সংসদের মেয়াদের বিষয়ে বলা হয়েছে, ‘রাষ্ট্রপতি পূর্বে ভেঙে না দিয়ে থাকলে প্রথম বৈঠকের তারিখ হতে পাঁচ বছর অতিবাহিত হলে সংসদ ভেঙে যাবে।’ অর্থাৎ স্বাভাবিক হিসেবে সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর। বর্তমান একাদশ সংসদের মেয়াদ শেষ হবে আগামী ২৯ জানুয়ারি। তবে, এর ১৯দিন আগেই আজ দ্বাদশ সংসদের এমপিরা শপথ গ্রহণের মাধ্যমে কার্যভার নিতে যাচ্ছেন। ফলে নবম ও দশমের মতো একাদশ সংসদও বাস্তবে পুরোপুরি পাঁচ বছর পূর্ণ করতে পারছে না। অবশ্য, এক্ষেত্রে সংবিধান কিংবা আইনের কোনো ব্যত্যয় ঘটছে না। 

সংসদের মেয়াদকাল ও এমপিদের শপথ নিয়ে সংবিধানেও কিছু অস্পষ্টতা রয়েছে। ২০১৮ সালে ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচনের পরেও একই প্রশ্ন উঠেছিল। দশম সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একাদশ সংসদের নবনির্বাচিত সদস্যরা শপথ নিতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে তখন আলোচনা হয়। সংবিধান বিশেষজ্ঞদের মতে, আগেভাগে শপথ নিতে আইনি কোনো বাধা নেই। এক্ষেত্রে, আগের সংসদ আপনা-আপনি বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

সংবিধানে বলা আছে, সংসদের মেয়াদ অবসানের প্রেক্ষাপটে ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে নির্বাচিতরা  মেয়াদ অবসানের আগে তাদের কার্যভার গ্রহণ করবেন না। আবার সংবিধানের অন্য একটি অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, শপথ আবশ্যক এমন ক্ষেত্রে শপথ নেওয়ার সঙ্গে-সঙ্গে কার্যভার গ্রহণ করেছেন বলে গণ্য হবে।

সংসদ সদস্যদের দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষেত্রে সংবিধানের ১২৩ (২)(খ) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, তবে শর্ত থাকে যে- এই দফার (ক) উপ-দফা অনুযায়ী অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে নির্বাচিত ব্যক্তিরা, উক্ত উপ-দফায় উল্লিখিত মেয়াদ সমাপ্ত না পর্যন্ত সংসদ সদস্য হিসেবে কার্যভার গ্রহণ করবেন না। উল্লেখ্য, (ক) উপধারায় বলা হয়েছে, মেয়াদ অবসানের কারণে সংসদ ভেঙে যাওয়ার পূর্ববর্তী ৯০ দিনের মধ্যে সংসদ সদস্যদের সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এক্ষেত্রে, ১৪৮ অনুচ্ছেদে শপথের সঙ্গে সঙ্গে দায়িত্ব গ্রহণের কথা বলা হলেও ১২৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে, আগের সংসদের মেয়াদ শেষ না হওয়ার আগে নতুনরা দায়িত্ব নিতে পারবেন না।

২০১৪ সালের ২৯ জানুয়ারি শুরু হওয়া দশম সংসদের মেয়াদ ছিল ২০১৯ সালের ২৮ জানুয়ারি পর্যন্ত। তবে, ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর নির্বাচনের পর ২০১৯ সালের ৩ জানুয়ারি শপথ নেন একাদশ সংসদের এমপিরা। সংবিধানের ১২৩ বিধান মানা হলে সংসদের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে নবনির্বাচিত এমপিরা দায়িত্ব নিতে পারেন না। আবার ১৪৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী এক্ষেত্রে কোনো বাধাও নেই।