শেষ ওভারে ২৪ রান নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারালো জিম্বাবুয়ে

শেষ ওভারে ২৪ রান নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে হারালো জিম্বাবুয়ে

সংগৃহীত

রোমাঞ্চের নানা অলি-গলি পেরিয়ে ম্যাচ গড়াল শেষ ওভারে, যেখানে জিম্বাবুয়ের প্রয়োজন ছিল ২০ রান। আগের ম্যাচের নায়ক এবং এদিনও শুরুতে ব্যাট হাতে আলো ছড়ানো অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউসের হাতে বল তুলে দিলেন লঙ্কান অধিনায়ক, কিন্তু এবার আর পারলেন না অভিজ্ঞ ক্রিকেটার। তার ওপর ঝড় বইয়ে দিয়ে দলকে অসাধারণ এক জয়ের আনন্দে ভাসালেন লুক জঙ্গুয়ে ও ক্লাইভ মাদান্ডে।

কলম্বোয় মঙ্গলবার (১৬ জানুয়ারি) দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি ৪ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে সমতা ফেরায় জিম্বাবুয়ে। প্রতিপক্ষের ১৭৩ রান তারা পেরিয়ে যায় ১ বল বাকি থাকতে। প্রথম ম্যাচ ৩ উইকেটে জিতেছিল শ্রীলঙ্কা। দুই ইনিংস মিলিয়ে এই ম্যাচে মোট রান হয়েছে ৩৫১। টি-টোয়েন্টি এই দুই দলের মধ্যে লড়াইয়ে যা সর্বোচ্চ। টি-টোয়েন্টিতে ছয়বারের দেখায় শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথম জয়ের স্বাদ পেল জিম্বাবুয়ে। সেটাও এলো এমন এক পরিস্থিতিতে, শেষের আগে যা হয়তো ভাবতে পারেনি অনেকেই।

শেষ ওভারের শুরুতেই লড়াই নতুন নাটকীয় মোড় নেয়। প্রথম ডেলিভারি ‘ফ্রন্ট ফুট নো বল’ করে বসেন ম্যাথিউস, লং-অন দিয়ে ছক্কায় ওড়ান জঙ্গুয়ে। পরের দুই বলে চার ও ছক্কা হাঁকিয়ে দলকে লক্ষ্যের ধারে নিয়ে যান তিনি। প্রতিটি ডেলিভারির পরই ক্যামেরা ধরা হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার ড্রেসিং রুমের দিকে এবং প্রতিবার যেন আরও বেশি ক্ষুব্ধ হয়ে উঠছিলেন লঙ্কান কোচ ক্রিস সিলভারউড।

পরের বল রাউন্ড দা উইকেট থেকে করেন ম্যাথিউস। ব্যাটে লাগাতে পারেননি জঙ্গুয়ে। লঙ্কানদের ম্যাচে ফেরার সুযোগ আসে এর পরের বলেই, ছক্কার চেষ্টায় বল আকাশে তুলে দেন জঙ্গুয়ে। কিন্তু সহজ ক্যাচ মুঠোয় জমাতে পারেননি মাহিশ থিকশানা, আসে এক রান। শেষ ২ বলে যখন দরকার ২ রান, লেগ সাইড দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে দেন মাদান্ডে, বুনো উল্লাসে মাতে জিম্বাবুয়ে। ওভার থেকে আসে ২৪ রান! দুটি করে ছক্কা-চারে ১২ বলে অপরাজিত ২৫ রান করা জঙ্গুয়ে বল হাতে নেন ২ উইকেট। ম্যাচ সেরার পুরস্কার জেতেন তিনিই। ২ ছক্কায় ৫ বলে ১৫ রান করেন মাদান্ডে। জিম্বাবুয়ের জয়ের ভিত অবশ্য গড়ে দেন ক্রেইগ আরভিন। ২ ছক্কা ও ৬ চারে ৫৪ বলে ৭০ রানের দায়িত্বশীল ইনিংস খেলেন তিনি।

রান তাড়ায় শুরুতেই অবশ্য উইকেট হারায় জিম্বাবুয়ে; দ্বিতীয় ওভারে রিভিউ নিয়ে বেঁচে গিয়েও কিছু করতে পারেননি টিনাশে কামুনহুকামউই, ফিরে যান একটু পরই। তবে দ্বিতীয় উইকেটে ৭৪ রানের জুটি গড়ে জিম্বাবুয়েকে লক্ষ্যের পথে এগিয়ে নেন আরভিন ও ব্রায়ান বেনেট। তাদের জুটি ভাঙার পর নিয়মিত বিরতিতে কয়েকটি উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া যায় জিম্বাবুয়ে। ৩৮ বলে ফিফটি ছোঁয়া আরভিনও সপ্তদশ ওভারে ফিরে গেলে জিম্বাবুয়ের বিপদ আরও বাড়ে। অনেকে হয়তো তাদের হার দেখে ফেলেছিলেন তখন। সেখান থেকেই ১৪ বলের অবিচ্ছিন্ন ৩৫ রানের জুটিতে দলকে স্মরণীয় জয় এনে দেন জঙ্গুয়ে ও মাদান্ডে।

ম্যাচের প্রথমভাগে সব আলো ছিল চারিথ আসালাঙ্কা ও ম্যাথিউসের ওপর। ১৭ রানে ৪ উইকেট হারানো দলকে কক্ষপথে রাখেন তারাই। চমৎকার ব্যাটিংয়ে দুজনে গড়েন ৭৯ বল স্থায়ী ১১৮ রানের জুটি, টি-টোয়েন্টিতে যা শ্রীলঙ্কার পঞ্চম উইকেটে সর্বোচ্চ। আগের রেকর্ডটি ছিল ভানুকা রাজাপাকসা ও আসালাঙ্কার ৮৬ রানের জুটি। ৩ ছক্কা ও ৫ চারে ৩৯ বলে ৬৯ রানের বিধ্বংসী ইনিংস খেলেন আসালাঙ্কা। ম্যাথিউসের ৫১ বলে ৬৬ রানের অপরাজিত ইনিংসটি গড়া ২ ছক্কা ও ৬ চারে। তাদের নৈপুণ্যে লড়াই করার মতো পুঁজি পেলেও দিন শেষে তা যথেষ্ট হয়নি। আগামীকাল বৃহস্পতিবার সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে মুখোমুখি হবে দুই দল।


সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা: ২০ ওভারে ১৭৩/৬ (নিসাঙ্কা ১, মেন্ডিস ৪, পেরেরা ০, সামারাউইক্রামা ১৬, আসালাঙ্কা ৬৯, ম্যাথিউস ৬৬*, শানাকা ৯, হাসারাঙ্গা ০*; এনগারাভা ৪-০-৩০-১, মুজারাবানি ৪-০-৩৬-২, জঙ্গুয়ে ২-০-৩২-২, মাসাকাদজা ৩-০-২৫-২, রাজা ৪-০-২৫-০, উইলিয়ামস ৩-০-২৪-০)

জিম্বাবুয়ে: ১৯.৫ ওভারে ১৭৮/৬ (কামুনহুকামউই ১২, আরভিন ৭০, বেনেট ২৫, রাজা ৮, উইলিয়ামস ১, বার্ল ১৩, জঙ্গুয়ে ২৫, মাদান্ডে ১৫*; মাদুশাঙ্কা ৪-০-২৪-১, থিকশানা ৪-০-২৫-২, চামিরা ৪-০-৩০-২, আসালাঙ্কা ১-০-৮-০, হাসারাঙ্গা ৪-০-৪১-১, ম্যাথিউস ১.৫-০-৩৫-০, শানাকা ১-০-১৩-০)

ফল: জিম্বাবুয়ে ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: লুক জঙ্গুয়ে

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা