ইসলামে কুশল বিনিময়ের শিষ্টাচার

ইসলামে কুশল বিনিময়ের শিষ্টাচার

প্রতীকী ছবি।

প্রতিটি মানুষকে প্রতিদিন অসংখ্য মানুষের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে হয়। চলার পথ থেকে শুরু করে মসজিদে, অফিসে, বাজারে বিভিন্ন জায়গায় বিভিন্ন পরিচিত-অপরিচিত মানুষের সঙ্গে কথাবার্তা বলতে হয়। এই কুশল বিনিময় যদি হয়, সুন্নত মোতাবেক তাহলে তা একদিকে মানুষের ব্যক্তিত্বকে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলবে, তেমনি সুন্নত পালনের সওয়াবও পাওয়া যাবে। নিম্নে কোরআন-হাদিসের আলোকে কুশল বিনিময়ের কিছু শিষ্টাচার তুলে ধরা হলো—

সালাম করা : কারো সঙ্গে দেখা হলে সালাম করা নবীজি (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত।

এই সুন্নত আদায়ে যেমন সওয়াব পাওয়া যায়, তেমনি নিজেদের মধ্যেও মহব্বত বাড়ে। আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মানুষের মধ্যে আল্লাহর কাছে সর্বাধিক উত্তম ওই ব্যক্তি, যে আগে সালাম দেয়।’ (আবু দাউদ, হাদিস : ৫১৯৭)

মুসাফাহা করা : আল বারাআ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : দুজন মুসলিম পরস্পর মিলিত হয়ে মুসাফাহা করলে পরস্পর বিচ্ছিন্ন হওয়ার আগেই তাদের ক্ষমা করে দেওয়া হয়। (আবু দাউদ, হাদিস : ৫২১২)

হাসিমুখে কথা বলা : মানুষের সঙ্গে হাসিমুখে কুশল বিনিময় করাও নবীজি (সা.)-এর অন্যতম সুন্নত।

এতে সদকার সওয়াবও পাওয়া যায়। পরস্পর আন্তরিকতা প্রদর্শনও হয়। রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘প্রতিটি ভালো কাজ সদকাস্বরূপ। তোমার ভাইয়ের সঙ্গে হাসিমুখে সাক্ষাৎ করা এবং তোমার বালতির পানি দিয়ে তোমার ভাইয়ের পাত্র ভর্তি করে দেওয়াও নেক আমলের অন্তর্ভুক্ত।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭০)

অন্যত্র রাসুল (সা.) বলেন, ‘হাস্যোজ্জ্বল মুখ নিয়ে তোমার ভাইয়ের সামনে উপস্থিত হওয়া তোমার জন্য সদকাস্বরূপ।’ (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৫৬)

ভালো কথা বলা : কুশল বিনিময়ের অন্যতম শিষ্টাচার হলো, ভালো ও ইতিবাচক কথাবার্তা বলা। নেতিবাচক বা খারাপ কথাবার্তা না বলা। হাদিস শরিফে রাসুল (সা.) বলেছেন, ...‘যে লোক আল্লাহ ও শেষ দিনে বিশ্বাস রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে, অথবা চুপ থাকে।’ (বুখারি, হাদিস : ৬০১৮)

মানুষের জ্ঞানের পরিধি বুঝে কথা বলা : কথা বলার সময় এদিকে লক্ষ্য রাখা উচিত, যার সঙ্গে কথা বলা হচ্ছে, তার জ্ঞানের পরিধি কেমন, সে আদৌ কথার মাহাত্ম্য বুঝতে পারবে কি না, যদি সে নির্বোধ বা অবুঝ হয়, তাহলে তার সঙ্গে সাবধানে কথা বলা উচিত, অন্যথায় ফিতনার আশঙ্কা রয়েছে।

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) বলেন, যখন তুমি কোনো সমপ্রদায়ের কাছে এমন কোনো হাদিস বর্ণনা করবে, যা তাদের বুঝে আসে না তখন তা তাদের কারো কারো পক্ষে ফিতনা হয়ে দাঁড়াবে। তাই প্রত্যেককে তার জ্ঞানের পরিধি অনুযায়ী কথা শোনানো উচিত। (মুসলিম)

প্রয়োজনে কথার পুনাবৃত্তি করা : কাউকে কোনো কথা বোঝানোর জন্য দরকার হলে কথার পুনরাবৃত্তি করা। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, কিছু মানুষ একবার কোনো কথা বললে তা ভালোভাবে বুঝে উঠতে পারে না। আনাস (রা.) বলেন, নবী (সা.) যখন সালাম দিতেন, তিনবার সালাম দিতেন। আর যখন কোনো কথা বলতেন তখন তা তিনবার বলতেন। (বুখারি, হাদিস : ৯৪)

আত্মপ্রশংসা না করা : কথাবার্তায় নিজের প্রশংসায় পঞ্চমুখ হওয়া শিষ্টাচারবহির্ভূত। ইসলামের দৃষ্টিতে আত্মপ্রশংসা নিন্দনীয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, কাজেই তোমরা আত্মপ্রশংসা করো না। কে তাকওয়া অবলম্বন করেছে, সে সম্পর্কে তিনিই সম্যক অবগত। (সুরা : নাজম, আয়াত : ৩২)

তবে বিপদের আশঙ্কা থাকলে তা থেকে উদ্ধারের জন্য কখনো কখনো আত্মপ্রশংসা করলে ক্ষতি নেই। যখন উসমান (রা.) বিদ্রোহীদের মাধ্যমে অবরুদ্ধ হয়ে পড়েন, সে সময় তিনি তার ঘরের উপরিতলে (ছাদে) উঠে ইসলামের বিজয়ে তাঁর রাখা অবদানগুলো সাহাবায়ে কেরামকে মনে করিয়ে দেন। (বিস্তারিত—তিরমিজি, হাদিস : ৩৬৯৯)

অসৌজন্যমূল্যক কথা না বলা : আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মুমিন কখনো দোষারোপকারী ও নিন্দাকারী হতে পারে না, অভিস্পাতকারী হতে পারে না, অশ্লীল কাজ করে না এবং কটুভাষীও হয় না।  (তিরমিজি, হাদিস : ১৯৭৭)

ঝগড়া এড়িয়ে চলা : আবু উমামাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ন্যায়সংগত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে, আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার...। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮০০)

কথাবার্তায় বিনয়ী হওয়া : ইয়াদ ইবনে হিমার (রা.) বলেন, রাসুল (সা.) বলেছেন, মহান আল্লাহ আমার কাছে (এ মর্মে) ওহি পাঠিয়েছেন যে তোমরা বিনয়ী হও, যতক্ষণ না একে অপরের ওপর জুলুম করে এবং অহংকার করে। (আবু দাউদ, হাদিস : ৪৮৯৫)

কাউকে মন্দ নামে সম্বোধন না করা : এটা ইসলামে নিষিদ্ধ। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, আর তোমরা একে অপরের নিন্দা করো না এবং তোমরা একে অপরকে মন্দ উপনামে ডেকো না। ঈমানের পর মন্দ নাম কতই না নিকৃষ্ট! আর যারা তাওবা করে না, তারাই তো জালিম।  (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১১)