গাজায় রক্ত ঝরছেই, আইসিজের রায়ের পরও বেপরোয়া ইসরায়েল

গাজায় রক্ত ঝরছেই, আইসিজের রায়ের পরও বেপরোয়া ইসরায়েল

ছবি: সংগৃহীত

গণহত্যা ঠেকাতে সব ধরনের পদক্ষেপ নিতে আন্তর্জাতিক বিচারালয়ের (আইসিজে) নির্দেশ সত্ত্বেও ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড গাজায় প্রাণঘাতী হামলা চালিয়ে যাচ্ছে ইসরায়েল। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় গতকাল শনিবার দুপুর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় ইসরায়েলের হামলায় অন্তত ১৭৪ জন নিহত হওয়ার খবর জানায়। আইসিজের অভিমত নিয়ে আলোচনা করতে চলতি সপ্তাহেই বৈঠকে বসবে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ। এমন প্রেক্ষাপটে গাজায় ইসরায়েলের হত্যাযজ্ঞ ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে।

গাজায় ইসরায়েলের রক্তক্ষয়ী সামরিক অভিযান থামাতে জাতিসংঘের আদালত আইসিজের কাছে আবেদন করেছিল দক্ষিণ আফ্রিকা। এই আবেদনের প্রেক্ষাপটে দুই দিনের শুনানির পর গত শুক্রবার নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আইসিজে ইসরায়েলকে ‘গণহত্যামূলক কর্মকাণ্ড’ ঠেকাতে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেয়। তবে আদালত অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি কার্যকরের আদেশ দেননি, যা অনেকে প্রত্যাশা করেছিলেন। দক্ষিণ আফ্রিকা ও ফিলিস্তিনিরা স্বাগত জানালেও ইসরায়েলি সরকার আদালতের এই নির্দেশনাকে উড়িয়ে দিয়েছে।

বাইডেনের বিরুদ্ধে মামলার শুনানি

গাজায় হত্যা ও ধ্বংস ঠেকাতে ব্যর্থতার অভিযোগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিরুদ্ধে হওয়া মামলার শুনানি হয়েছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ওকল্যান্ডের এক আদালতে গত শুক্রবার এই শুনানি হয়। বাইডেনের পাশাপাশি মামলায় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিনের নামও যুক্ত করা হয়েছে। আদালতে বাদীপক্ষ অভিযোগ করে, গাজা যুদ্ধে ইসরায়েলকে অস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘ কনভেনশন লঙ্ঘন করছে।

অন্যদিকে বাইডেন প্রশাসনের আইনজীবীরা বলেছেন, আদালতের এই বিষয়ে অভিমত জানানোর কোনো এখতিয়ার নেই। নিউ ইয়র্কভিত্তিক মানবাধিকার সংগঠন দ্য সেন্টার ফর কনস্টিটিউশনাল রাইটস (সিসিআর) এই মামলাটি করেছে। এই মামলায় বাইডেন ও তাঁর শীর্ষ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে গাজায় ইসরায়েলের প্রকাশ্য গণহত্যা ঠেকাতে ব্যর্থতা ও এ কাজে সহযোগিতা করার অভিযোগ তোলা হয়েছে।

ফিলিস্তিনের মানবাধিকার সংগঠন ডিফেন্স ফর চিলড্রেন-প্যালেস্টাইন; আল হক ও গাজাবাসীর স্বজন আট ফিলিস্তিনি ও মার্কিন নাগরিকের পক্ষে মামলাটি করে সিসিআর। শুক্রবার আদালতে বাইডেন, ব্লিনকেন ও লয়েডের আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।

শুনানিতে আদালত গাজায় প্রায় চার মাস ধরে ইসরায়েলি হামলায় ফিলিস্তিনিরা যে বিভীষিকাময় সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে, তাঁর কথা গাজার চিকিৎসক, আইনজীবী, অধিকারকর্মীদের কাছ থেকে শোনেন। গাজায় ইসরায়েলি হামলার শুরু থেকেই পুরনো মিত্রকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। তবে ওয়াশিংটন শেষ দিকে বেসামরিক প্রাণহানি এড়ানোর জন্য ইসরায়েলকে চাপ দিয়ে এলেও তাতে কাজ হচ্ছে না। এ কারণে যুক্তরাষ্ট্র কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়েছে।

নিরাপত্তা পরিষদ বসছে

এদিকে গাজায় ইসরায়েলি হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের শীর্ষ আদালতের অভিমত নিয়ে আলোচনা করতে আগামী বুধবার বৈঠকে বসবে নিরাপত্তা পরিষদ। গত শুক্রবার পরিষদের সভাপতির পক্ষ থেকে এই কথা জানানো হয়েছে। জাতিসংঘের ২২ সদস্যের আরব গোষ্ঠীর রুদ্ধদ্বার বৈঠকের পর আলজেরিয়া নিরাপত্তা পরিষদে বৈঠকের আহবান জানায়। দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, রক্তপাত বন্ধে আইসিজের নির্দেশনা বাস্তবায়নে ইসরায়েলকে বাধ্য করতে এই বৈঠক প্রভাব ফেলবে। 

যুক্তরাজ্যের মন্তব্য

আইসিজের আদেশ নিয়ে এক প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র, কমনওয়েলথ ও উন্নয়ন কার্যালয়ের মুখপাত্র  বলেছেন, তাঁদের দৃষ্টিতে গাজায় ইসরায়েলের কর্মকাণ্ডকে গণহত্যা বলে বর্ণনা করা যায় না। তাঁরা মনে করেন, দক্ষিণ আফ্রিকার মামলার সিদ্ধান্তটা ভুল ও উসকানিমূলক।

চাপে ইউএনআরডাব্লিওএ

এদিকে ৭ অক্টোবর ইসরায়েলি জনপদে হামাসের হামলার ঘটনায় কয়েকজন কর্মীর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ ঘিরে বিপাকে পড়েছে ফিলিস্তিনি শরণার্থীবিষয়ক জাতিসংঘের সংস্থা ইউএনআরডাব্লিওএ। ইসরায়েল বলেছে, তারা যুদ্ধ শেষে গাজায় জাতিসংঘের সংস্থাটির কার্যক্রম বন্ধ করতে চাইবে। ইউএনআরডাব্লিওএ বলেছে, তারা এরই মধ্যে কয়েকজন কর্মীকে বরখাস্ত করেছে। তবে এই পদক্ষেপ দাতা দেশগুলোকে সন্তুষ্ট করতে পারেনি। এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইতালি, অস্ট্রেলিয়া ও কানাডার মতো দেশগুলো জাতিসংঘের এই সংস্থাটিতে অর্থ সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দিয়েছে।

হামলা, মৃত্যু অব্যাহত

দক্ষিণ গাজার খান ইউনিস শহরে গতকাল শনিবারও ইসরায়েলি হামলা ও হামাসের সঙ্গে সেনাদের লড়াই হয়েছে। উত্তর গাজার পর দক্ষিণ গাজায় হামাসের অবস্থান ধ্বংসে ইসরায়েলি বাহিনীর অভিযান চলছে। বতর্মানে দক্ষিণ গাজার প্রধান রণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে খান ইউনিস শহর। চলমান সংঘাত থেকে প্রাণ বাঁচাতে নারী, শিশুসহ হাজারো মানুষ শহরটি ছেড়ে পালাচ্ছে। গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের হালনাগাদ তথ্যানুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলি হামলায় গতকাল বিকেল পর্যন্ত ২৬ হাজার ২৫৭ জন নিহত এবং ৬৪ হাজার ৭৯৭ জন আহত হয়েছে। সূত্র : আলজাজিরা, বিবিসি, এএফপি।