পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে কী বলছে ভারত?

পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে কী বলছে ভারত?

পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে কী বলছে ভারত?

পাকিস্তানের নির্বাচন নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোনো মন্তব্য করেনি। তবে সাবেক আইএফএস, আইপিএস ও সেনা অফিসাররা জানিয়েছেন, ভারতের কাছে আসল বিষয় হলো- পাকিস্তানে ভারতের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসে মদত দেয়া বন্ধ করছে কিনা।

 ‘ভারতের চিন্তা নিরাপত্তা
সাবেক আইপিএস অফিসার শান্তনু মুখোপাধ্যায় ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ‘ভারত তার খুবই কাছের প্রতিবেশী দেশের নির্বাচনের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখছে। যে সরকারই আসুক না কেন, ভারত দেখবে তার স্থায়িত্ব কতটা এবং ভারতের নিরাপত্তার উপর তার কতটা প্রভাব পড়বে। ভারত কখনই চায় না, নিরাপত্তা নিয়ে তাদের চিন্তাটা বেড়ে যায়।’

তিনি জানিয়েছেন, ‘ভারত নিরপেক্ষভাবে পাক নির্বাচনের গতিপ্রকৃতির উপর নজর রাখছে। এটা পাকিস্তানের নির্বাচন। সে দেশের মানুষ ভোট দেবে। ভারতের একটাই চিন্তা, তা হলো, দেশের নিরাপত্তা নিয়ে। সেখানে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে, সেটাই দেখা হবে।’

ইলেকশন নয়, সিলেকশন
পাকিস্তানে ভারতের সাবেক রাষ্ট্রদূত অজয় বিসারিয়া বার্তাসংস্থা এএনআই-কে দেয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘পাকিস্তানের নির্বাচনে কী হবে তা এখনই বলে দেয়া যায়। পাকিস্তানের সেনা আগে থেকে ঠিক করে রেখেছে কাকে তারা প্রধানমন্ত্রী হিসাবে চায় এবং সম্ভবত সেই মানুষটি হলেন নওয়াজ শরিফ। তাই ৮ ফেব্রুয়ারি যা হবে, তা ইলেকশন না বলে সিলেকশন বা বাছাই করে নেয়া বলাটাই ভালো।’

বিসারিয়া বলেছেন, ‘পাকিস্তানের মধ্যে থেকে যে রিপোর্ট আসছে, তাতে বলা হচ্ছে, সেনা সেখানে প্রাক নির্বাচনী কাজকর্ম করছে, নির্বাচনের পরেও করবে। তারা এমন সরকার চায়, যা সেনার কথায় চলবে। তারা স্পষ্ট করে দিয়েছে যে, তারা নওয়াজ শরিফকেই চায়। ইমরানকে এবার চায় না বলে তাকে বাইরে রাখার সব চেষ্টা হয়েছে। সেনা এমন জোট চায় যা তারা নিয়ন্ত্রণ করবে।’

সেনার একটা দেশ আছে
অজয় বিসারিয়ার সাথে একমত ভারতীয় সেনার সাবেক লেফটন্য়ান্ট জেনারেল উৎপল ভট্টাচার্য। ডিডাব্লিউকে তিনি বলেছেন, ‘একটা চালু কথা আছে, আমাদের দেশে একটা সেনাবাহিনী আছে। আর পাকিস্তানের ক্ষেত্রে বলা হয়, সেখানে সেনাবাহিনীর একটা দেশ আছে।’

তার মতে, ‘এটা তো প্রথমবার এরকম হচ্ছে না। পাকিস্তানের রাজনীতি তো দীর্ঘদিন ধরে সেনাই নিয়ন্ত্রণ করে। পাকিস্তানের গণতন্ত্রকে পশ্চিমা দেশগুলোতে বলে বনসাই গণতন্ত্র। ইমরান খানও তো গতবার সেনার আশীর্বাদে ক্ষমতায় আসতে পেরেছিলেন।

‘তিনি কথা বেশি বলেন, মাথা গরম মানুষ। বিশ্ববিখ্যাত ক্রিকেটার, অন্যতম সেরা অধিনায়ক। ক্রিকেট চর্চার কারণে বলতে পারি, রিচি বেনোর সাথে তার তুলনা চলে। তাকেও সেনাই ক্ষমতায় এনেছিল। মিয়ানমারে একই অবস্থা। শ্রীলঙ্কাতেও প্রায় একইরকম অবস্থা। পাকিস্তানে এমন একটা নির্বাচন হচ্ছে, যার ফলাফল ঘোষণা করা হয়ে গেছে।’

বিসারিয়া বলেছেন, ‘এবার যদি নিরপেক্ষ ও অবাধ নির্বাচন হতো, তাহলে ইমরানই আবার ক্ষমতায় আসতেন বা সবচেয়ে বড় দলের নেতা হতেন। কিন্তু তার হাত থেকে শুধু যে ব্যাট নিয়ে নেয়া হয়েছে তাই নয়, তিনবার ক্লিন বোল্ড করে দেয়া হয়েছে। তিনটি রায় তার বিরুদ্ধে গেছে।’

সম্পর্ক ভালো হবে?
উৎপল ভট্টাচার্য মনে করেন, ‘পাকিস্তানের সাথে টু চ্যানেল ডিপ্লোমেসি চালাতে হবে। নওয়াজের সাথে ভারত অনেকদিন কাজ করেছে। ভারত এখনো যখন কথা বলে, রাওয়ালপিণ্ডি ও ইসলামাবাদ দু’জনের সাথেই কথা বলে। ইসলামাবাদ পাকিস্তানকে চালায় না। চালায় রাওয়ালপিণ্ডি।’

তার মতে, ‘ভারত ও পাকিস্তানের মধ্য়ে ঠান্ডা যুদ্ধ চলছে। ম্যানেজমেন্ট ইফ কোল্ড ওয়ার তো করতেই হবে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী বাজপেয়ী বলেছিলেন, প্রতিবেশীকে বদলানো যায় না। তাছাড়া ভারত এখন আগের থেকে অনেক বেশি শক্তিশালী।’

বিসারিয়া বলেছেন, ‘উদ্য়োগটা পাকিস্তানের তরফ থেকে আসতে হবে। ভারতের ভোটও হয়ে যাওয়ার পর জুন-জুলাইতে কিছু হতে পারে।’

শান্তনু মুখোপাধ্যায় মনে করেন, ‘পাকিস্তানের সাথে ভারতের আলোচনা বন্ধ হওয়ার কারণ, ইসলামাবাদ একদিকে সন্ত্রাসে সমানে মদত দিচ্ছিল, অন্যদিকে আলোচনায় বসতে চাইছিল। এই দুই কাজ একসাথে করা যায় না। পাকিস্তানে নতুন সরকারের ক্ষেত্রে এটাই দেখতে হবে, ভারত প্রসঙ্গে তারা কী মনোভাব দেখায়। আমাদের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তা বাড়লে আলোচনা হবে না। পাকিস্তান সন্ত্রাসবাদে মদত দিলে, উৎসাহ দিলে কথা বলার কোনো জায়গা থাকবে না।’
সূত্র : ডয়চে ভেলে