যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী

যুক্তরাষ্ট্রের ইসরায়েলবিরোধী বিক্ষোভ ছড়িয়েছে বিশ্বব্যাপী

সংগৃহীত

ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় চলমান ইসরায়েলি গণহত্যা ও আগ্রাসনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনের উত্তাপ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়ছে। প্রতিবেশী কানাডা থেকে শুরু করে আন্দোলনের ঢেউ আছড়ে পড়েছে সুদূর অস্ট্রেলিয়াতেও। 

গেল বছরের ৭ অক্টোবরের পর থেকে প্রায় সাত মাস ধরে গাজায় গণহত্যা চলাচ্ছে ইসরায়েল। তেল আবিবের এমন বর্বর হামলার প্রতিবাদে উত্তাল হয়ে উঠেছে যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়। বিক্ষোভ দমনে গত এক সপ্তাহে আটক করা হয়েছে ২ হাজারেও বেশি শিক্ষার্থীকে। চলছে ধরপাকড়। এরমধ্যেই ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ফিলিস্তিনপন্থীদের ওপর হামলা চালায় ইসরায়েলপন্থীরা।

যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে এত অভিযান, ধরপাকড় ও দমন-নিপীড়নেও দমছে না ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন। বরং, নিপীড়িত ফিলিস্তিনিদের অধিকার রক্ষায় বিক্ষোভের এই ঢেউ আছড়ে পড়ছে যুক্তরাষ্ট্রের বাইরেও।

কানাডা
বৃহস্পতিবার (২ মে) থেকে কানাডার টরন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, ইউনিভার্সিটি অব ব্রিটিশ কলম্বিয়া এবং অটোয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু গেড়ে অবস্থান নিয়েছেন ফিলিস্তিনপন্থী বিক্ষোভকারীরা। তাদের দাবি— ইসরায়েলের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সম্পর্ক ছিন্ন করাসহ দেশটিতে যাবতীয় বিনিয়োগ ও সহায়তা বন্ধ করতে হবে। এছাড়া মন্ট্রিলের ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ বিক্ষোভ দমনে পুলিশি হস্তক্ষেপ চাইলেও কোনো প্রতিক্রিয়া দেখায়নি নিরাপত্তা বাহিনী।

অস্ট্রেলিয়া
বিক্ষোভের আঁচ লেগেছে ইসরায়েলের আরেক ঘনিষ্ঠ মিত্র অস্ট্রেলিয়ায়। দেশটির শীর্ষস্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শুরু হয়েছে ইসরায়েলবিরোধী আন্দোলন। বিক্ষোভের সঙ্গে প্রতিদিনই যুক্ত হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।

সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁবু স্থাপন করে অবস্থান নেন বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী। এ সময় যুক্তরাষ্ট্র ও বিশ্বের অন্য দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে চলমান আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা জানান তারা। বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত সংস্থাগুলো থেকে সিডনি বিশ্ববিদ্যালয়কে বিচ্ছিন্ন হওয়ার দাবি তোলেন।

জার্মানি
গত শুক্রবার জার্মানির বার্লিনের হামবোল্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের বাইরের বিক্ষোভকারীদের সরিয়ে দিতে পুলিশ হস্তক্ষেপ করে।

পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়, অন্য জায়গায় ক্যাম্প করতে বিক্ষোভকারীরা অস্বীকৃতি জানান। এরপরই পুলিশ বেশ কিছু বিক্ষোভকারীকে জোর করে সরিয়ে দেয়।

বার্লিনের মেয়র কাই ওয়েগনার এই বিক্ষোভের সমালোচনা করেছেন। তিনি এক্সে (সাবেক টুইটার) বলেছেন, এই শহর (বার্লিন) যুক্তরাষ্ট্র বা ফ্রান্সের মতো ঘটনা দেখতে চায় না।

আয়ারল্যান্ড
আয়ারল্যান্ডের ট্রিনিটি কলেজ ডাবলিনের শিক্ষার্থীরা শুক্রবার অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন। তারা তাদের এই প্রতিবাদী কর্মসূচিকে ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি হিসেবে বর্ণনা করেন।

মেক্সিকো
মেক্সিকোর বৃহত্তম বিশ্ববিদ্যালয় ইউএনএএমের বেশকিছু শিক্ষার্থী গত বৃহস্পতিবার দেশটির রাজধানীতে একটি ক্যাম্প স্থাপন করেন। তারা নানা স্লোগান দেন। এসব স্লোগানের মধ্যে ছিল ‘ফিলিস্তিন মুক্ত করো’ ও ‘নদী থেকে সমুদ্র, ফিলিস্তিন হবে মুক্ত’। মেক্সিকোর এই বিক্ষোভকারীরা চান, দেশটির সরকার ইসরায়েলের সঙ্গে সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করুক।

সুইজারল্যান্ড
সুইজারল্যান্ডের লুসান বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি ভবনের প্রবেশদ্বার বৃহস্পতিবার থেকে দখল করে আছেন প্রায় ১০০ শিক্ষার্থী। বিক্ষোভকারী এই শিক্ষার্থীরা ইসরায়েলকে একাডেমিক বয়কট এবং গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির আহ্বান জানাচ্ছেন। তাদের শান্তিপূর্ণ এই কর্মসূচি কাল সোমবার পর্যন্ত চলবে।

জর্ডান
যুক্তরাষ্ট্রের শিক্ষার্থীদের প্রতি সংহতি জানিয়ে বিক্ষোভ হয়েছে জর্ডানেও। গাজায় ইসরায়েলি আগ্রাসন বন্ধ ও যুক্তরাষ্ট্রের আন্দোলনে দমনপীড়নের প্রতিবাদে শনিবার আম্মানের রাজপথে নামেন শতশত শিক্ষার্থী। এছাড়াও জাপান, ইতালি, মেক্সিকো ও লেবাননসহ বিশ্বের বহু দেশে শিক্ষার্থীরা গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যা ও আগ্রাসন বন্ধের দাবিতে বিক্ষোভ করেছে। সূত্র: সিএনএন