উত্তরাঞ্চলে ফুল বিক্রেতারা ১ বিলিয়ন টাকা লাভের আশা করছেন

উত্তরাঞ্চলে ফুল বিক্রেতারা ১ বিলিয়ন টাকা লাভের আশা করছেন

উত্তরাঞ্চলে ফুল বিক্রেতারা ১ বিলিয়ন টাকা লাভের আশা করছেন

একুশে ফেব্রুয়ারি (আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস), ভালোবাসা দিবস, পহেলা ফাল্গুন, পহেলা বৈশাখ এবং ২৬ শে মার্চ (স্বাধীনতা দিবস) ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে ফুল তোলা, প্যাকেজিং এবং পরিবহন সংক্রান্ত কাজগুলো এখন উত্তরাঞ্চলে তাদের উচ্চ চাহিদার শীর্ষে রয়েছে।

অনেক বেকার ও শিক্ষিত যুবক এই অ লে চাকরি খোঁজার পরিবর্তে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষে ঝুঁকেছেন। তাদের অনেকেই তাদের বসতভিটাতে উৎপাদিত ফুল বিক্রি করে লাভবান হতে শুরু করেছেন।সূত্রমতে, বর্তমানে সারা বছর দেশে ফুলের বাজারের পরিমাণ ১২ বিলিয়ন টাকার (১,২০০ কোটি) বেশি।

আসন্ন ২১ ফেব্রুয়ারি, পহেলা ফাল্গুন, ভালোবাসা দিবস এবং পহেলা বৈশাখকে লক্ষ্য করে ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীরা সারা দেশে ৫ বিলিয়ন টাকা (৫০০ কোটি) টার্নওভারের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছেন।

বিগত বছরের মতো এ বছরও পাবনা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, রংপুর ও গাইবান্ধা জেলাসহ এ অঞ্চ লের কৃষক ও ব্যবসায়ীরা উল্লিখিত উৎসবগুলোকে কেন্দ্র করে ১ বিলিয়ন টাকার (১০০ কোটি) লেনদেনের দিকে নজর দিচ্ছেন বলে অভ্যন্তরীণ সূত্রে জানা গেছে।পাবনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের (এইডি) সূত্র জানায়, দেশের সর্বত্র কৃষি পণ্য হিসেবে ফুলের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে।ফুলের বাজার প্রতি বছর ১০ শতাংশ হারে বাড়ছে, যদিও এক সময় যশোর ছিল বাণিজ্যিক ফুল উৎপাদনের অন্যতম স্থান।

তবে এখন ঢাকার সাভারের গোলাপগ্রাম, পাবনা, বগুড়া, গাজীপুর, ময়মনসিংহ, ঝিনাইদহ, চুয়াডাঙ্গা, রংপুর, দিনাজপুর, চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মেহেরপুর, রাঙ্গামাটি, টাঙ্গাইল, নারায়ণগঞ্জ, সিরাজগঞ্জ, মানিকগঞ্জ ও নাটোরসহ দেশের প্রায় সব জেলায় বাণিজ্যিকভাবে ফুলের চাষ হচ্ছে। এতে উত্তরা ল ফুল চাষি ও ব্যবসায়ীদের কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে।

সূত্রমতে, ১৯৯১ সালে, সরকার ফুলকে রপ্তানিযোগ্য পণ্য হিসাবে তালিকাভুক্ত করে। কারণ দেশের প্রায় ২ মিলিয়ন মানুষ এখন চাষ, পরিবহন এবং বিক্রিসহ ফুল সম্পর্কিত কাজে জড়িত।

এর মধ্যে উত্তরা লে প্রায় ৭০০, ঢাকায় ৫০০, সিলেটে ৭০০, চট্টগ্রামে ৫০০ এবং কক্সবাজারে ৬০০সহ ৬৪টি  জেলায় প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার খুচরা ফুল বিক্রেতা রয়েছে।

ডিএই, পাবনার উপ-পরিচালক ড. জামাল উদ্দিন বলেন, "এ অ লের মাটি ও আবহাওয়া ফুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। এছাড়া বাজারে চাহিদা ও লাভজনকতার কারণে ফুলের চাষ ও ব্যবসা হচ্ছে ব্যাপক হারে। ইতোমধ্যে অনেক কৃষক ফুল চাষ করে তাদের অনেক পরিবর্তন করেছেন। অন্যদিকে, এটি দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।"

পাবনা জেলার সদর উপজেলার ফুল চাষী নীরব আলী বলেন,"শিক্ষা শেষ করে প্রায় তিন বছর চাকরি খুঁজলাম। কিন্তু পাইনি। ভালো উপায় না পেয়ে আমার বাবার জমিতে পরীক্ষামূলকভাবে ধনে, গোলাপ, গাঁদা এবং চন্দ্রমল্লিকা ফুলসহ বিভিন্ন ধরণের ফুল চাষ শুরু করি।”

"প্রথম মেয়াদে ভালো লাভ পেয়ে আমি আমার কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এখন তিন বিঘা জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ করেছি। ঢাকার শাহবাগ ও খামারবাড়ি, বগুড়া ও সিরাজগঞ্জ শহরের বিভিন্ন স্থানের ব্যবসায়ীরা আমার কাছে এসে ফুল সংগ্রহ করেন। একটি ন্যায্য মূল্য যা আমাকে আমার জীবনে আশার রশ্মি দেখায়,” তিনি যোগ করেছেন।

সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার আরেক কৃষক শের আলী বলেন, "ফুল চাষ এবং ব্যবসা দু’টোই আমার ভাগ্য বদলে দিয়েছে। আমি আমার জমিতে বিভিন্ন ধরণের ফুল চাষ করি এবং নিজস্ব উদ্যোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করি। তবে যমুনা নদী এলাকায় দুর্বল যোগাযোগ ব্যবস্থার কারণে মালামাল বহন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়ি। তবে আমি আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করব কারণ আমি বিশ্বাস করি যে এটি এখন আমার জন্য অন্যান্য কাজের চেয়ে ভালো।"

তিনি আরো বলেন, আমি যদি ঋণ ও পরিবহন সুবিধা পাই; তা’হলে ভবিষ্যতে আমাকে আমার ব্যবসা বড় পরিসরে সম্প্রসারণ করতে হবে।পাবনার জেলা প্রশাসক মুঃ আসাদুজ্জামান বলেন,“কেউ যদি তার ফুলের ব্যবসা বাড়ানোর জন্য কোনো সহযোগিতা চায় তা’হলে আমরা প্রয়োজন অনুযায়ী সব ধরণের সহযোগিতা করব।”