কোরআনের বর্ণনায় সুপথপ্রাপ্তদের তিন বৈশিষ্ট্য

কোরআনের বর্ণনায় সুপথপ্রাপ্তদের তিন বৈশিষ্ট্য

প্রতিকী ছবি

মানবজীবনের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো আসমানি হিদায়াত বা সুপথ লাভ করা। পৃথিবীতে অসংখ্য নবী-রাসুল আগমনের উদ্দেশ্যও ছিল এটি। পবিত্র কোরআনে মানুষকে সুপথের অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে কোরআনে সুপথপ্রাপ্তদের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরা হয়েছে।

সুপথ নিত্যকাম্য

সুপথ মুমিনের নিত্যকাম্য বিষয়। মুমিন প্রতিদিনের নামাজে সুরা ফাতিহায় আল্লাহর কাছে সুপথ প্রার্থনা করে। সে বলে, ‘আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি, শুধু তোমারই সাহায্য প্রার্থনা করি। আমাদেরকে সরল পথ প্রদর্শন করো, তাদের পথ যাদেরকে তুমি অনুগ্রহ দান করেছ।’
(সুরা : ফাতিহা, আয়াত : ৪-৬)

সুপথপ্রাপ্তদের তিন বৈশিষ্ট্য

পবিত্র কোরআনে সুপথপ্রাপ্তদের গুণাবলি তুলে ধরে ইরশাদ হয়েছে, ‘কিন্তু আল্লাহ তোমাদের কাছে ঈমানকে প্রিয় করেছেন এবং তাকে তোমাদের হূদয়গ্রাহী করেছেন; কুফরি, পাপাচার ও অবাধ্যতাকে করেছেন তোমাদের কাছে অপ্রিয়। তারাই সত্পথ অবলম্বনকারী, আল্লাহর দান ও অনুগ্রহস্বরূপ; আল্লাহ সর্বজ্ঞ, প্রজ্ঞাময়।’ (সুরা : হুজুরাত, আয়াত : ৭-৮)

উল্লিখিত আয়াতে মহান আল্লাহ সুপথপ্রাপ্ত মানুষের তিনটি বৈশিষ্ট্য বর্ণনা করেছেন। তা হলো :

১. যারা ঈমানকে ভালোবাসে : ঈমান সুস্থ মনের খোরাক ও আরোগ্য এবং তা মানবপ্রকৃতির অনুকূল।

সুতরাং সুপথপ্রাপ্ত ব্যক্তি ঈমানকে ভালোবাসে। আর ঈমানকে ভালোবাসার অর্থ হলো ঈমানের দাবিগুলো পূরণ করতে সে আনন্দ অনুভব করে। ঈমানের দাবিবিরোধী কাজগুলো করলে অন্তরে আক্ষেপ ও কষ্ট হয়। প্রাজ্ঞ আলেমরা বলেন, যাবতীয় নেক আমল ঈমানি দাবির অন্তর্ভুক্ত। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ঈমানের শাখা ৭০টিরও বেশি।

এর সর্বোচ্চ শাখা হচ্ছে আল্লাহ ছাড়া কোনো উপাস্য নেই—এ কথা স্বীকার করা, আর এর সর্বনিম্ন শাখা হচ্ছে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা। আর লজ্জা ঈমানের শাখা।
(সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৫৯)

অন্য হাদিসে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, নামাজে আমার চোখের প্রশান্তি রাখা হয়েছে। (সুনানে নাসায়ি, হাদিস : ৩৯৪০)

বিপরীতে যাদের ঈমানের দুর্বলতা রয়েছে, তারা নেক আমলের শান্তি অনুভব করে না। ইরশাদ হয়েছে, ‘তারা নামাজে শৈথিল্যের সঙ্গে উপস্থিত হয় এবং অনিচ্ছাকৃতভাবে অর্থ সাহায্য করে।’ (সুরা : তাওবা, আয়াত : ৫৪)

২. ঈমান যাদের সৌন্দর্য : আয়াতে বলা হয়েছে, ‘ঈমানকে তোমাদের হূদয়গ্রাহী করেছেন’। ঈমানকে হূদয়গ্রাহী করার অর্থ হলো যারা প্রচলিত ধারণার বিপরীতে ঈমান ও ইসলামকে জীবনের সৌন্দর্য জ্ঞান করে। শরিয়তের নির্দেশনা অনুসারে জীবন যাপন করতে ভালোবাসে। যেমন—মুমিন যুবক দাড়ি লম্বা রাখে এবং টাকনুর ওপর কাপড় পরিধান করে। যদিও বহু নারী এমন ছেলেদের অপছন্দ করে। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও দাড়ি রাখার কারণে যুবককে উচ্চবাচ্য শুনতে হয়।

৩. যারা পাপ কাজ ঘৃণা করে : মুমিন নেক কাজগুলো যেমন ভালোবাসে, তেমনি অপছন্দ করে কুফরি, পাপাচার ও আল্লাহর অবাধ্যতাকে। তারা কুফরি ও আল্লাহর অবাধ্য হওয়াকে কষ্টদায়ক শাস্তি পেয়ে মৃত্যুবরণ করার মতোই অপছন্দ করে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেন, তিনটি গুণ যার মধ্যে আছে, সে ঈমানের স্বাদ আস্বাদন করতে পারে : ক. আল্লাহ ও তাঁর রাসুল তার কাছে অন্য সব কিছু থেকে অধিক প্রিয় হওয়া, খ. কাউকে একমাত্র আল্লাহর জন্যই ভালোবাসা, ৩. কুফরিতে প্রত্যাবর্তনকে আগুনে নিক্ষিপ্ত হওয়ার মতো অপছন্দ করা। (সহিহ বুখারি, হাদিস : ১৬)

সুপথপ্রাপ্তরাই সফল

আসমানি হিদায়াত বা সুপথ লাভ করাই মুমিনের জন্য চূড়ান্ত সাফল্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তারাই তাদের প্রতিপালক নির্দেশিত পথে আছে এবং তারাই সফলকাম।’ (সুরা : বাকারাহ, আয়াত : ৫) আল্লাহ সবাইকে সুপথের পথিক করুন। আমিন।