তিনদিন ধরে অপহৃত দুই ব্যক্তিকে ঢাবির হল থেকে উদ্ধার

তিনদিন ধরে অপহৃত দুই ব্যক্তিকে ঢাবির হল থেকে উদ্ধার

সংগৃহীত

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজী মুহম্মদ মুহসীন হলে তিনদিন ধরে দুইজন ব্যক্তিকে অপহরণ করে রাখার পর শনিবার রাত ৮টা ৪০ মিনিটে শাহবাগ থানা পুলিশ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিম হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষ থেকে তাদের উদ্ধার করে। ভুক্তভোগীরা হলেন মো. আব্দুল জলিল এবং হেফাজ উদ্দীন। তারা দু’জন বন্ধু। 

এ ঘটনায় জড়িত অপহরণের মূল হোতা শাহাবুদ্দিনসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তিন শিক্ষার্থীকে শনাক্ত করেছে পুলিশ। তারা হলেন ফিন্যান্স বিভাগের এবং ঢাবি ছাত্রলীগের সাবেক উপ-দপ্তর সম্পাদক মোহাম্মদ আবুল হাসান সাঈদি, ছাত্রলীগের মুহসীন হল শাখার প্রচার উপ-সম্পাদক ও ইসলামিক স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মোনতাছির হোসাইন এবং মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষার্থী ও মুহসীন হল ছাত্রলীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপসম্পাদক আল শাহরিয়ার মাহমুদ তানসেন।

এ ঘটনায় অভিযুক্ত মোনতাছির শাহাবুদ্দিনকে তার আত্মীয় বলে দাবি করেছেন।

জানা যায়, ভুক্তভোগী জলিলের কাছে ৩৫ লাখ টাকা পান শাহাবুদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। জলিল ব্যবসায় করার উদ্দেশ্যে তার থেকে টাকা নেন এবং ফেরত চাইলে দেন না বা দিতে পারেন না। টাকা ফেরত দিতে দেরি করায় শাহাবুদ্দিন তিন-চারজন ঢাবি শিক্ষার্থীসহ ১০ থেকে ১২ জনকে নিয়ে  জলিল ও হেফাজকে হাতিরঝিলের হাজীপাড়া নামক এলাকায় তাদের নিজ বাসা থেকে গত ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টার দিকে অপহরণ করেন। অপহৃত জলিল ও হেফাজকে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজয় একাত্তর হলের একটি রুমে আটকে রেখে রাতভর নির্যাতন করা হয়। পরবর্তী সময়ে তাকে হাজী মুহাম্মদ মুহসীন হলের ৫৪৪ নম্বর কক্ষে নিয়ে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয়।

নির্যাতনের বিষয়টি নিশ্চিত করে শাহবাগ থানার এসআই আলামিন বলেন, নির্যাতনের আলামত হিসেবে পুলিশ ওই কক্ষ থেকে একটি লোহার রড উদ্ধার করেছে এবং ভুক্তভোগীদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে নির্যাতনের চিহ্ন দেখা গেছে। 

ভুক্তভোগী আব্দুল জলিল বলেন, শাহাবুদ্দিন আমার কাছে ৩৫ লাখ টাকা পান। কিন্তু মাঝখানে উনার সাথে আমার যোগাযোগ হয় না। এতে করে ভুল বোঝাবুঝির একপর্যায়ে আমাকে ২১ ফেব্রুয়ারি রাত ২টায় বাসা থেকে তারা  ১০-১২ জন মিলে  তুলে আনেন এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এনে হলে আটকে রাখেন। প্রথমে বিজয় একাত্তর হলে এবং পরে মুহসীন হলে আটকে রাখেন। আমাকে বিভিন্ন স্থানে মারধর করা হয়। গত তিনদিন ধরে আমাকে আটক করে রাখা হয়েছে। 

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক মাকসুদুর রহমান বলেন, আমরা প্রথমে পুলিশের কাছ থেকে জানতে পারলাম, মুহসীন হলে চার বা পাঁচ তলায় আমাদের কয়েকজন ছাত্রের সহযোগিতায় একজনকে তুলে আনা হয়েছে। টাকা আদায়ের উদ্দেশ্যে তাকে মারধরও করা হয়েছে। পরে শাহবাগ থানা ও হল প্রশাসনের সহযোগিতায় আমরা ওই দুজনকে উদ্ধার করি। তাদেরকে একত্রিত করে আমরা জিজ্ঞাসাবাদ করি। এতে সকল ঘটনা বেরিয়ে আসে। আমরা তাদেরকে পুলিশে হস্তান্তর করেছি। ভুক্তভোগীসহ অভিযুক্তদের থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। ভুক্তভোগীর পরিবার আগেই একটি জিডি করেছে। তার ভিত্তিতে এখন তা মামলায় যাবে।

তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের আইন এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের বিধি অনুযায়ী অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিচার হবে। তাদের বিরুদ্ধে থানায়ও অভিযোগ পাঠানো হয়েছে।