বাড়ন্ত মেয়েদের অনিয়মিত পিরিয়ড ও যত সমস্যা

বাড়ন্ত মেয়েদের অনিয়মিত পিরিয়ড ও যত সমস্যা

ফাইল ছবি

অধ্যাপক ডা. শামছুন নাহার

আদ্-দ্বীন উইমেন্স মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা

বাড়ন্ত মেয়ে বলতে যাদের বয়স ১৩ থেকে ১৮ বছরের  মধ্যে থাকে। যাদের কিছু শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন দেখা দেয়। সেই পরিবর্তনকে সেকেন্ডারী সেক্স ক্যারেকটার বলা হয়ে থাকে। যেমন ব্রেষ্ট  ডেভেলপমেন্ট, পিউবিক ও এক্মিলারি চুল গজানো, মাসিক হওয়া, শারীরিক ও মানসিক বাড়ন্ত। এইসব মেয়েরা খুব বেশি আবেগ প্রবণ হয়। তারা বাবা মায়ের চেয়ে বন্ধুদের বেশি বিশ্বাস ও ভরসা করে থাকে। তারা সামান্য কথায় আত্মহত্যার মত কাজ করতে দ্বিধা করে না। তাদের সাথে সাবধানে কথাবার্তা ও আচার-আচরণ করতে হয়।

অনেক সময় অভিভাবকরা এসব মেয়েদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে আসে। তারা ভীষণ উদ্বিগ্নের মধ্যে থাকে। কয়েক  দিন আগে আমার এক ছাত্রী তার খালা ও খালাতো বোনকে নিয়ে নিয়ে এসেছে আদ্ব-দীন মেডিকেলে আমার রুমে। মেয়েটার একটানা একমাস এলোমেলো পিরিয়ড হচ্ছে। ফলে রক্ত শুন্যতা দেখা দিয়েছে। কাজে অমনোযোগিতা, লেথারজি, বুক ধড়ফড়, খাওয়ার অরুচিসহ নানা সমস্যা নিয়ে এসেছে। প্রথমে শুনেই বুঝতে বাকি রইল না এটা পিউবার্টাল মেনোরেজিয়া। মানে পিউবার্টির বা বাড়ন্ত সময় মাসিকের অনিয়ম হওয়া। এমন সমস্যা ৬০% বাচ্চাদের হয়। আমি এ ধরনের প্রচুর রোগী পেয়ে থাকি ও তাদের  চিকিৎসা  দিয়ে থাকি। এইসব বাচ্চাদের জলন্ত সমস্যা এটা। এ সমস্যা আগেও ছিল কিন্তু এত চিকিৎসা নিতে আসতো না। এখন মানুষ সচেতন তাই আমাদের কাছে নিয়ে আসে। আমি প্রথমে অভিভাবকদের আশ্বস্ত  করি যে, ২/৩  বছর পর ঠিক হয়ে যাবে। এটা একটা ফিজিওলজিক্যাল ব্যাপার । আপনার মেয়ে যেমন অপরিপক্ক তার হাইপোথ্যালামসও তেমনি অপরিপক্ক।  

এলোমেলো পিরিয়ড কি ?

স্বাভাবিক  যে সাইকেল ২৮ দিন পর পর মাসিক শুরু হয় ৪/৫ দিন থাকে এটাই স্বাভাবিক পিরিয়ড। যখন এর ব্যতিক্রম হয় যেমন একটানা হেভি ব্লিডিং অথবা থেমে থেমে অল্প অল্প অনেকদিন, অথবা কারো  পিরিয়ড  বন্ধ হয়ে আছে আর মাসিক হচ্ছে না অথবা একমাসে দুই/তিন বার  পিরিয়ড হচ্ছে।

এলোমেলো পিরিয়ড কেন হয় ?

পিরিয়ড  স্বাভাবিকভাবে মেইনটেইন  হয় হাইপোথ্যালামাস, পিটুইটারি,  ওভারিয়ান ট্রাকের মাধ্যমে। এটা শরীরের ফিজিওলোজিক্যাল ব্যাপার। ছোট বাচ্চাদের এই ট্রাক ইমমেচিউর থাকে। মানে তারমধ্যে  যথেষ্ট অপক্বতা বিরাজ করে। সময়ের সাথে সাথে এটা ঠিক হয়ে যায়। এজন্য এসব  মেয়েদের এলোমেলো মাসিক হয়। দুই/তিন বছর পর ঠিক হয়ে যায়। তখন মেচিউরিটি আসে। ততক্ষণে  কিছু কিছু চিকিৎসা  দিয়ে থাকি আমরা।

কি কি পরীক্ষা করা দরকার ?

রক্তে হিমোগ্লোবিন, ব্লাড গ্রুপ, আরএইস ফেকটর, আলট্রাসোনো, থাইরোড হরমোন টেস্টসহ কিছু কোয়াগুলেশন ফেকটর।

রক্ত শুন্যতা থাকলে কারেকশন করতে হবে। দরকার হলে ব্লাড দিতে হবে। মাঝারি রক্ত শুন্যতা হলে মুখে আয়রন ট্যাবলেট দিতে হবে।

একটা হরমোন প্রজেসটারোন সাইক্লিক্যাল তিন মাস আপাতত দেয়া যায়। ততক্ষণে অনেক সময়  ঠিক হয়ে যায়। এসময় মা-বাবাদের উচিত মেয়ের কাউন্সিলিং করা। পিরিয়ড  এর সময় মেফিনেমিক জাতীয়  ওষুধ  দিলে কিছুটা  কমবে।  তাছাড়া বিশ্রাম নিলে পিরিয়ডএর রক্ত কম বের হয়।

বাড়ন্ত  মেয়েদের  আরেকটি সমস্যা পিরিয়ড একেবারেই না হওয়া। তাদের বলা হয় প্রাথমিক এমোনেরিয়া বা কখনোই মাসিক হয় না। সেগুলো আরো জটিল সমস্যা হয় যাদের  জন্মগত ডেভেলপমেনটাল ক্রটি আছে। এমনও হয় বাচ্চাদনি যোনিপথ  তৈরি  হয়নি। অথবা ওভারি বা ডিম্বাশয়  হয়নি। এইসব সমস্যা বেশ জটিল যা পুরোপুরি  ঠিক হয়  না। অথবা ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিক অবস্থানের জন্য যেমন টার্নার সিনড্রোম। 

কোন কোন মেয়ের মাসে মাসে মাসিক হয় কিন্তু বাইরে আসতে পারে না। তাদের হাইমেন ইনট্যাক্ট কোন ছিদ্র  নেই। তাই রক্ত ভেতরে  জমা হতে থাকে । সে প্রতি মাসে তলপেটে  ব্যাথা অনুভব করে। মানে মাসিক হয় কিন্তু বাহির হতে পারে না। এক পর্যায়ে  তার প্রস্রাব বন্ধ  হয়ে যায়। তখন ডাক্তারের কাছ আসে । এইসব রোগীদের ভর্তি করে ওটিতে নিয়ে হাইমেন এর উপর ক্রসিয়াল ইনসিশন দিতে হবে যাতে সমস্ত ভেতরের  জমানো রক্ত ধীরে ধীরে বাহির হয়।