ইতিকাফ আনুগত্যের অপূর্ব নিদর্শন

ইতিকাফ আনুগত্যের অপূর্ব নিদর্শন

প্রতিকী ছবি

ইতিকাফ অর্থ অবস্থান করা, আবদ্ধ রাখা। শরিয়তের পরিভাষায় ইবাদতের উদ্দেশ্যে ইতিকাফের নিয়তে দুনিয়াবি কাজকর্ম, ব্যবসা-বাণিজ্য ও পরিবার-পরিজন থেকে পৃথক হয়ে মসজিদে বা ঘরের নির্দিষ্ট স্থানে অবস্থান করাকে ইতিকাফ বলা হয়। পবিত্র মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করা সুন্নতে মুয়াক্কাদায়ে কিফায়া। আর রমজানের শেষ দশক ছাড়া অন্য যে কোনো সময় ইতিকাফ করা মুস্তাহাব। কোনো জুমার মসজিদের আওতাধীন মহল্লার মধ্যে একজন ব্যক্তিও যদি রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করে তাহলে সবার পক্ষ থেকে সুন্নতে কিফায়া আদায় হয়ে যাবে। আর যদি ওই মহল্লার কেউ পালন না করে তাহলে সবাই গুনাহগার হবে। তবে যে ব্যক্তি ইতিকাফ পালন করবেন শুধু তিনিই ইতিকাফের বরকত ও সওয়াবের অধিকারী হবেন। 

ইতিকাফ সম্পর্কে মহান আল্লাহতায়ালা পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘আর আমি ইবরাহিম ও ইসমাইলকে আদেশ করলাম, তোমরা আমার গৃহকে তাওয়াফকারী, ইতিকাফকারী ও রুকু-সিজদাকারীদের জন্য পবিত্র রাখ’ (সুরা বাকারা-১২৫)। পবিত্র কোরআনের অন্যত্র ইরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা মসজিদে ইতিকাফরত অবস্থায় স্ত্রীদের সঙ্গে মেলামেশা করো না’ (সুরা বাকারা-১৮৭)। 

ইতিকাফের গুরুত্ব সম্পর্কে রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করবে, মহান আল্লাহতায়ালা তাকে দুটি হজ ও দুটি ওমরার সমপরিমাণ সওয়াব দান করবেন’ (বায়হাকি)। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) হতে বর্ণিত, রসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘ইতিকাফকারী সব গুনাহ থেকে মুক্ত থাকে এবং তার জন্য অবিরত নেকি লেখা হতে থাকে; যেন তিনি সব নেকি অর্জনকারী’ (ইবনে মাজাহ)। প্রিয় পাঠক! ইতিকাফ হলো বান্দা কর্তৃক মহান স্রষ্টার আনুগত্য প্রদর্শনের এক অপূর্ব নিদর্শন। ইতিকাফের মাধ্যমে বান্দা দুনিয়াবি সবকিছু থেকে নিজেকে পৃথক করে মহান আল্লাহতায়ালার অতি নিকটবর্তী হয়ে যায় এবং সর্বদা তাঁর দয়া ও অনুগ্রহ কামনা করে। বিশেষ করে যে ব্যক্তি মাহে রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফফে রত থাকে, তাঁর জন্য হাজার মাসের চেয়েও শ্রেষ্ঠ রজনী ‘লাইলাতুল কদরের’ ফজিলত ও বরকত লাভ করা সহজ হয়। 

প্রিয়নবী (সা.) প্রতি বছর রমজান মাসের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ পালন করতেন এবং সাহাবায়ে কেরামও তাঁর সঙ্গে এ মহৎ আমলে শরিক থাকতেন। উম্মুল মুমিনিন হজরত আয়েশা (রা.) বলেন, রসুলুল্লাহ (সা.) প্রতি রমজানের শেষ ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। ইন্তেকাল পর্যন্ত তিনি এই আমল করেছেন। অতঃপর তাঁর সহধর্মিণীরাও (রমজানের শেষ দশকে) ইতিকাফ করতেন (বুখারি, মুসলিম)। হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করিম (সা.) প্রতি রমজানে ১০ দিন ইতিকাফ করতেন। তবে যে বছর তিনি ইন্তেকাল করেন, সে বছর ২০ দিন ইতিকাফ করেছিলেন’ (বুখারি)।

লেখক : মুফাসসিরে কোরআন ও ইসলামী গবেষক