কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড

কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ ৪১.৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড

প্রতিকী ছবি

কুষ্টিয়ায় সর্বোচ্চ ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এর আগের রেকর্ডটি ছিল ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি। সময়ের হিসাবেও তীব্র তাপপ্রবাহের রেকর্ড হয়েছে, চলছে টানা ১০ দিন ধরে। অতি তাপমাত্রায় চরম বেকায়দায় পড়েছেন সব শ্রেণির মানুষ, বিশেষ করে জমিতে সেচ দিতে গিয়ে অসুবিধায় পড়ছেন কৃষকরা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালী কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মামুন আর রশিদ জানান, ২৬ এপ্রিল বেলা ৩টায় ৪১ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে। এটি কুষ্টিয়ার এ যাবৎকালের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা।

কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার স্থাপিত হয় ২০১৪ সালে। এর আগে এই জেলার তাপমাত্রার রেকর্ড সংরক্ষণ করা নাই। ২০২৩ সালের ১৭ এপ্রিল এখানে ৪১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছিল। এটিই ছিল কুষ্টিয়া জেলার সর্বোচ্চ তাপমাত্রার রেকর্ড। এছাড়াও ২০২৪ সালের ২০ এপ্রিল ও ২৫ এপ্রিল ওই একই তাপমাত্রা ৪১.২ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করে এই আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগার। আর ২৬ এপ্রিল সে রেকর্ড ভেঙে রেকর্ড হলো ৪১.৮ ডিগ্রি।

আবহাওয়াবিদ মামুন আর রশিদ বলেন, এপ্রিলের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে টানা তাপপ্রবাহ চলছে সময়ের বিবেচনায় এত দীর্ঘ তাপ প্রবাহও তিনি দেখেননি। গত বছরেও দেখা গেছে ৩ থেকে ৪ দিন তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে থেকে আবার নিচে নেমে আসে। তবে এবার গত ১০ দিন ধরে টানা চলছে তীব্র তাপপ্রবাহ (৪০ ডিগ্রির ওপরে)। আগামী কয়েকদিনেও তাপমাত্রা ৪০ ডিগ্রির ওপরে থাকবে বলে পূর্বাভাস জানিয়েছেন তিনি। তিনি বলেছেন, নিকট ভবিষ্যতে নেই বৃষ্টির সম্ভাবনা।

বাংলাদেশের আবহাওয়া অফিসের হিসাব মতে, ৩৬ ডিগ্রি তাপমাত্রায় মৃদু তাপ প্রবাহ, ৩৮ ডিগ্রিতে মাঝারি, ৪০ ডিগ্রিতে তীব্র তাপ প্রবাহ আর ৪২ ডিগ্রিতে উঠলে বলা হয় অতি তীব্র তাপ প্রবাহ।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমের এই অঞ্চল কর্কটক্রান্তি রেখা বরাবর। এ কারণে প্রতিবছর গরমের সময় তাপমাত্রা অনেক বেড়ে যায়। মামুন আর রশিদ বলেন, আগেই আশঙ্কা করা হয়েছিল ২০২৪ সালে উষ্ণতা বাড়বে। বিজ্ঞানীরা বলেছিলেন বঙ্গোপসাগরে উষ্ণ সামুদ্রিক পানির স্রোতের কারণে বাংলাদেশের ওপর দিয়ে এবার গরম হাওয়া বয়ে যাবে।

তীব্র এ গরমে অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে জনজীবন। বিশেষ করে নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। রিকশা চালকদের অল্প সময় কাজ করেই গাছের ছায়ায় বিশ্রাম করতে হচ্ছে। তাছাড়া ফুটপাতের খোলা দোকানিদেরও দোকান রেখে দূরে ছায়ায় দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যাচ্ছে। হাসপাতালে কয়েকগুণ বেড়েছে গরমজনিত রোগীর সংখ্যা। কৃষিতে পড়েছে মারাত্মক প্রভাব। মাঠে এখন বোরো ধানে শীষ আসার সময়। কিন্তু ভূগর্ভ থেকে পানি তুলে সেচ দিয়েও জমিতে পানি রাখতে পারছেন না কৃষকরা। কিছুক্ষণ পরই শুকিয়ে যাচ্ছে। তাছাড়াও এ অঞ্চলে অবস্থিত বাংলাদেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প গঙ্গা-কপোতাক্ষ সেচ প্রকল্প এবার বন্ধ রয়েছে। এতে ভূগর্ভের পানির স্তর নিচে নেমে যাচ্ছে। এবার ফলন বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন কুষ্টিয়ার কৃষকরা।