নাভালনিকে হত্যায় পুতিনের সংশ্লিষ্টতা পায়নি যুক্তরাষ্ট্র

নাভালনিকে হত্যায় পুতিনের সংশ্লিষ্টতা পায়নি যুক্তরাষ্ট্র

ছবি: সংগৃহীত

চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি রাশিয়ার একটি কারাগারে বন্দি অবস্থায় রহস্যজনকভাবে মৃত্যুবরণ করেন প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের বিরোধী রাজনীতিবিদ আলেক্সি নাভালনি। এরপরই ৪৭ বছর বয়সী এই নেতার মৃত্যুর জন্য এককভাবে পুতিনকে দায়ী করে আসছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনসহ পশ্চিমা নেতারা। তবে সম্প্রতি রুশ এ নেতার মৃত্যু নিয়ে ‍উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য।

মার্কিন গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, নাভলনিকে হত্যার জন্য পুতিন কোনো নির্দেশ দেননি। সম্প্রতি মার্কিন সংবাদমাধ্যম দ্য ওয়ালি স্ট্রিট জার্নালের এক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে এমন তথ্য।

সংশ্লিষ্ট সূত্রের বরাতে প্রতিবেদনে বলা হয়, নাভালনির মৃত্যুর ঘটনায় পুতিনের যে দায় আছে, সে ব্যাপারে মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তাদের কোনো সন্দেহ নেই। তবে তারা মনে করেন, রুশ প্রেসিডেন্ট সম্ভবত নাভালনিকে হত্যার নির্দেশ দেননি।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, অনুসন্ধানে পাওয়া তথ্যগুলো গোয়েন্দা কর্মকর্তারা ব্যাপকভাবে গ্রহণ করেছেন। বেশ কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে তথ্যগুলো আদান-প্রদান হয়েছে। এসব গোয়েন্দা সংস্থার মধ্যে আছে—যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা (সিআইএ), ডিরেক্টর অব ন্যাশনাল ইনটেলিজেন্সের কার্যালয়, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা।

যেসব সূত্রের বরাতে ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়েছে, তারা নাভালনি কীভাবে মারা গেছেন, তা নিয়ে বিস্তারিত বলেননি। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলো নাভালনির মৃত্যুর ঘটনায় ভিন্ন কোনো ব্যাখ্যা দিয়েছে কি না, তা-ও উল্লেখ করেননি তারা।

এক মার্কিন কর্মকর্তার বরাতে যুক্তরাষ্ট্রের বার্তা সংস্থা এপির প্রতিবেদনে বলা হয়, পুতিন সরাসরি নাভালনিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন বলে কোনো প্রমাণ গোয়েন্দারা পাননি।

ওই প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, নাভালনির মৃত্যুর জন্য চূড়ান্ত অর্থে পুতিনকে দায়ী মনে করে যুক্তরাষ্ট্র। কারাগারে তাকে নির্মম পরিস্থিতিতে রাখা হয়েছিল। কারাবন্দী হওয়ার আগে ২০২০ সালে তাকে স্নায়ু বিকল করার বিষাক্ত এক রাসায়নিক প্রয়োগ করা হয়েছিল।

নাভালনির বিরুদ্ধে বেশ কিছু মামলা হয়েছিল। সর্বশেষ গত আগস্টে উগ্রপন্থার অভিযোগে তার ১৯ বছরের কারাদণ্ড হয়। জার্মানি থেকে রাশিয়ায় ফেরার পর ২০২১ সালের জানুয়ারি থেকে কারাগারে ছিলেন নাভালনি। যদিও এ নেতা দাবি করেছিলেন, এসব অভিযোগ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।

তবে নাভালনির মৃত্যুর ঘটনায় পুতিন সরাসরি জড়িত নন বলে মার্কিন কর্মকর্তারা যে ধারণা করছেন, তা মানতে রাজি নয় কিছু ইউরোপীয় দেশ। কয়েকটি দেশের কর্মকর্তারা ওয়াল স্ট্রিট জার্নালকে বলেছেন, রাশিয়ার মতো কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত একটি দেশে প্রেসিডেন্টের অজান্তে নাভালনির কোনো ক্ষতি হতে পারে, এমনটা তারা কোনোভাবেই মনে করেন না।

নাভালনির জ্যেষ্ঠ সহযোগী লিওনিড ভলকভও এ ধরনের তথ্য নাকচ করে দিয়েছেন।

তার মতে, নাভালনির মৃত্যুতে পুতিন জড়িত নন বলে যারা মনে করছেন, তারা আসলে আধুনিক যুগে রাশিয়া কীভাবে পরিচালিত হচ্ছে, তা জানেন না।

তিনি বলেন, ‘পুতিন জানতেন না এবং নাভালনিকে হত্যার অনুমতি দেননি—এমন ধারণাটি হাস্যকর।’

এদিকে নাভালনির মৃত্যুর পর এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছিলো রুশ প্রেসিডেন্টের দফতর ক্রেমলিন। এমনকি তার মৃত্যুকে দুঃখজনক বলেও মন্তব্য করেন পুতিন। তিনি জানান, বন্দিবিনিময় চুক্তির আওতায় নাভালনিকে পশ্চিমা দেশের হাতে তুলে দিতে প্রস্তুত ছিলেন তিনি। তবে এ ক্ষেত্রে শর্ত ছিল নাভালনি আর কখনো রাশিয়ায় ফেরত আসবেন না।