রংপুরে কোরবানির হাটে হাসিলের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, জরিমানা

রংপুরে কোরবানির হাটে হাসিলের নামে অতিরিক্ত অর্থ আদায়, জরিমানা

ফাইল ছবি

রংপুর বিভাগের শতাধিক কোরবানির হাটে হাসিলের নামে অতিরিক্ত ৫৬ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করার অভিযোগ উঠেছে। প্রতিটি গরুর হাটের সরকারের নির্ধারিত হাসিলের চেয়ে দ্বিগুণ টাকা আদায় করা হচ্ছে। বিক্রেতার কাছ থেকে কোনো টাকা নেওয়ার নির্দেশনা নেই। তারপরেও ক্রেতাদের পাশাপাশি বিক্রেতাদের কাছ থেকেও জোরপূর্বক হাসিলের নামে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযান চালিয়েও অতিরিক্ত এই অর্থ আদায় বন্ধ করা যাচ্ছে না। 

জানা গেছে, রংপুর বিভাগের ৮ জেলায় কোরবানির ঈদে কোরবানির জন্য রয়েছে ২১ লাখ ৫২ হাজার ৩১৯টি পশু। রংপুর বিভাগে পশুর চাহিদা রয়েছে ১৩ লাখ ১৮ হাজার ১১৭টি। চাহিদার এই গরুর চার ভাগের একভাগ খামারে অথবা গৃহস্থ  পর্যায়ে বিক্রি হয়েছে। বাকি ৮ লাখের বেশি পশু বিভিন্ন হাটে বিক্রি হচ্ছে। এর মধ্যে খাসি বিক্রির হবে দেড় থেকে দুই লাখ। সরকারি হিসেবে একটি খাসির হাসিল ২০০ টাকা, গরুর ৬০০ টাকা। অথচ ইজারাদার একটি খাসির হাসিল আদায় করেছে ৭০০ টাকা। এর মধ্যে ক্রেতা দিচ্ছে ৫০০ টাকা এবং বিক্রেতা দিচ্ছে ২০০ টাকা। গরুর হাসিল নির্ধারণ করা হয়েছে ৬০০ টাকা। সেখানে নেয়া হচ্ছে দেড় হাজার টাকা। এরমধ্যে ক্রেতাকে দিতে হচ্ছে এক হাজার টাকা এবং বিক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ৫০০ টাকা। গড়ে প্রতিটি পশুর থেকে ৭ থেকে ৮০০শ’ টাকা বেশি হাসিল আদায় করা হচ্ছে। সেই হিসেবে ৮ লাখ পশুর হাসিল বাবদ অতিরিক্ত ৫৬ কোটি টাকা চাঁদা আদায় করা হচ্ছে। 

বিভিন্ন হাটে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইজারাদাদের সাথে আঁতাত করে একটি সিন্ডিকেট গড়ে উঠেছে প্রতিটি হাটে। ওই সিন্ডিকেট ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ের কাছ থেকে হাসিলের নামে চাঁদা আদায় করছে। অভিযোগ রয়েছে কেউ প্রতিবাদ করলে তাকে লাঞ্ছনার শিকার হতে হচ্ছে। হাসিলের নামে অতিরিক্ত চাঁদা আদায়ের বিষয়টি রংপুর জেলা প্রশাসনের দৃষ্টিগোচরে আনা হলে গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর বুড়িরহাটে অভিযান চালানো হয়। অতিরিক্ত হাসিল আদায় করায় হাট ইজারাদার শরিফুল ইসলামকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করেন ভ্রাম্যমাণ আদালতের বিচারক জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদ হাসান মৃধা।

এসময় তিনি বলেন, বুড়িরহাটে অভিযান চালিয়ে হাতেনাতে ধরে ফেলি ইজারাদারের লোকজন নির্ধারিত ফি ৪০০ টাকার বদলে টাকা ৭০০ টাকা করে আদায় করছেন। পাশাপাশি নিয়ম না থাকলেও বিক্রেতাদের কাছ থেকে জোরপূর্বক ২০০ থেকে ৩০০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন,  প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা রয়েছে গরুর হাটে বিক্রেতাদের কাছ থেকে কোনো হাসিল আদায় করা যাবে না এবং ক্রেতাদের কাছ থেকে নির্ধারিত হারে হাসিল আদায় করতে হবে।

কিন্তু প্রাণিসম্পদ বিভাগের এই নির্দেশনা মানছে না কেউ। রংপুরের লালবাগ, বুড়িরহাট, মিঠাপুকুরের জায়গীরহা, শঠিবাড়ি, কাউনিয়ার খানসামাসহ রংপুর বিভাগের শতাধিক হাটে হাসিলের নামে এভাবে টাকা আদায় করা হচ্ছে। 

এদিকে প্রাণিসম্পদ বিভাগ সূত্র মতে রংপুর বিভাগে ১৩ লাখ পশুর  চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত্ত থাকবে আরও আট লাখের বেশি পশু।