আসামিদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল
![আসামিদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই: অ্যাটর্নি জেনারেল](https://newszonebd.com/public/images/news/1-1719813248.jpg)
ছবি:সংগৃহীত
আট বছর আগে ২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০ জনকে হত্যা করেন নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। বহুল আলোচিত হলি আর্টিজান বেকারিতে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলা মামলায় সাত আসামির মৃত্যুদণ্ডের সাজা কমিয়ে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেন হাইকোর্ট। গত বছরের ৩০ অক্টোবর বিচারপতি সহিদুল করিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের হাইকোর্ট বেঞ্চ সাত আসামির আপিল খারিজ করে এ রায় ঘোষণা করেন। রায় ঘোষণার আট পার হলেও এখনও হাইকোর্টের পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ হয়নি।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেছেন, মৃত্যুদণ্ডের পরিবর্তে হাইকোর্ট আসামিদের আমৃত্যু কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাই তাদের মৃত্যু পর্যন্ত কারাগারেই থাকতে হবে। বের হওয়ার সুযোগ নেই। সুতরাং হাইকোর্টের রায়ের বিষয়ে আপিল বিভাগে বিবিধ আবেদন করার প্রয়োজন নেই।
অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, রায়ের অনুলিপি পেলে বুঝতে পারবো কী যুক্তিতে বা কোন কোন যুক্তিতে মৃত্যুদণ্ড থেকে আমৃত্যু কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। রায়টি পেলে পর্যালোচনার পর রাষ্ট্রের সংম্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে তাদের নির্দেশনা অনুসারে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। কিন্তু এখনও রায়টা আমরা পাইনি।
তিনি আরও বলেন, মৃত্যুদণ্ড বহাল রাখাটাই আমি মনে করি ওদের জন্য যথার্থ ছিল। কারণ ওদের প্রতি অনুকম্পা দেখানোর কোনো সুযোগ নেই। কারণ ওরা কতগুলো বিদেশি নিরীহ মানুষকে নৃসংশভাবে হত্যা করেছে, যারা আমাদের দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত ছিল। ধর্মের নামে, উগ্রবাদীতার নামে তাদের হত্যা করেছে। এই দণ্ডিতরাই পেছনে থেকে মদদ দিয়েছে, পরিকল্পনা করেছে। তাই আমি মনে করি ওদের প্রতি বিন্দুমাত্র অনুকম্পা দেখানোর সুযোগ নেই।
অপরদিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. আমিনুল এহসান জুবায়ের, হাই কোর্টের রায়ের অনুলিপি পাওয়ার অপেক্ষা করছি। অনুলিপি পেলে মোয়াক্কেলের সঙ্গে আলোচনা করে আপিলের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।
হলি আর্টিজান হামলায় দেশি-বিদেশি ২০জন নাগরিকসহ দুজন পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট। রায়ে আদালত বলেন, নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডটি জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে।
রায়ে আদালত বলেন, সন্ত্রাসবিরোধী আইন, ২০০৯ এর ধারা ৬ (১) (ক) (আ) ধারার অপরাধ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হওয়ায় আপিলকারী ১. মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, ২. মো. আসলাম হোসেন সরদার ওরফে মোহন, ৩. মো. আব্দুস সবুর খান (হাসান), ৪. রাকিবুল হাসান রিগেন ওরফে রাফিউল ইসলাম, ৫. মো. হাদিসুর রহমান, ৬. মো. শরিফুল ইসলাম খালেদ এবং ৭. মামুনুর রশিদ রিপনকে আইনের ৬ (২)(আ) ধারায় বর্ণিত সর্বোচ্চ শাস্তি যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো।
আলোচ্য মামলায় দেশি-বিদেশি ২০ জন নাগরিকসহ দুই জন পুলিশ কর্মকর্তাকে যে নিষ্ঠুর ও নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে, তাতে বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাছাড়া এই নিষ্ঠুরতম হত্যাকাণ্ডটি জনসাধারণের মনে চরম আতঙ্ক সৃষ্টিসহ জননিরাপত্তা মারাত্মকভাবে বিঘ্নিত করেছে।
এ অবস্থায় আপিল বিভাগের ‘আতাউর মৃধা ওরফে আতাউর বনাম রাষ্ট্র’ মামলার নজিরের ১৭৯ প্যারায় বর্ণিত পর্যবেক্ষণের মর্ম অনুসারে আপিলকারীদেরকে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলে ন্যায়বিচার নিশ্চিত হবে। সে অনুযায়ী প্রত্যেককে আমৃত্যু কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হলো। তাদের প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড অনাদায়ে ৫ বৎসরের কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়- বলে রায়ে উল্লেখ করেন হাইকোর্ট।
২০১৬ সালের ১ জুলাই রাতে গুলশানের হলি আর্টিজান রেস্টুরেন্টে হামলা চালিয়ে বিদেশি নাগরিকসহ ২০জনকে হত্যা করে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন নব্য জেএমবির (আত্মঘাতী) সদস্যরা। তাদের গুলিতে দুই পুলিশ কর্মকর্তা নিহত হন। পরে কমান্ডো অভিযানে নিহত হন পাঁচ জঙ্গি।
দেশের ইতিহাসে অন্যতম নৃশংস এ হামলায় ৯জন ইতালীয়, ৭জন জাপানি, একজন ভারতীয়, একজন বাংলাদেশি-আমেরিকান দ্বৈত নাগরিক ও দু’জন বাংলাদেশিসহ মোট ২০জনকে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় সন্ত্রাসীদের ছোড়া গ্রেনেডের আঘাতে প্রাণ হারান বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন আহমেদ ও সহকারী পুলিশ কমিশনার রবিউল ইসলাম।
হামলার পর জিম্মি অবস্থার অবসানে সেনাবাহিনীর কমান্ডো অভিযানে নিহত হয়েছিলেন পাঁচ জঙ্গি। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানের সময় নিহত হয়েছেন নব্য জেএমবির আরও ৮ সদস্য।
এ ঘটনায় সন্ত্রাসবিরোধী আইনে গুলশান থানায় একটি মামলা করেন ওই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রিপন কুমার দাস। পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম ইউনিটের পরিদর্শক হুমায়ুন কবির মামলাটি তদন্ত করে ২০১৮ সালের ১ জুলাই আদালতে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন। এ মামলায় ২০১৯ সালের ২৭ নভেম্বর ঢাকার সন্ত্রাসবিরোধী বিশেষ ট্রাইব্যুনালের বিচারক মো. মজিবুর রহমান একজনকে খালাস দিয়ে সাতজনের মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন।