তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই, ৩ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

তিস্তার পানি বিপদসীমা ছুঁইছুঁই, ৩ উপজেলার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত

ফাইল ছবি

ভারতের উত্তর সিকিমে ভারী বর্ষণে উজান থেকে নেমে আসা তিস্তার কাউনিয়া পয়েন্টে পানি বিপদসীমা ছুঁই ছুঁই করছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জেলার কাউনিয়া, পীরগাছা ও গঙ্গাচড়া উপজেলার তিস্তা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এদিকে, তিস্তা নদীতে পানি বাড়া-কমায় ভাঙনের মুখে পড়েছে বিভিন্ন এলাকা। বেশ কিছু চরাঞ্চলের বাড়ি-ঘরের চারপাশে পানি প্রবেশ করার খবর পাওয়া গেছে। তলিয়ে গেছে গ্রামীণ সড়ক, রবিশস্যসহ সবজিক্ষেত।

রোববার (৩০ জুন) সন্ধ্যায় তিস্তা নদীর ডালিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার ও কাউনিয়া পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি বেড়ে নদ-নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে। এছাড়া দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার নদীসমূহের পানি সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র।

তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হক্কানি বলেন, অসময়ের বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য তিস্তা খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। স্থায়ী সমাধানের জন্য সরকারসহ সবার প্রচেষ্টা দরকার।

পাউবো কোনো প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় ভাঙনকবলিত পরিবারগুলোর অনেকে নিরুপায় হয়ে বসতি সরিয়ে নিচ্ছে। জরুরি ভিত্তিতে ভাঙন প্রতিরোধের ব্যবস্থা নেওয়া না হলে তারা সর্বস্বান্ত হয়ে পড়বে বলে জানিয়েছে ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।

কোলকোন্দ ইউনিয়নের জুয়েল হক বলেন, দুই সপ্তাহ ধরি তিস্তা নদীর পানি কম বেশি হচ্ছে। নদী পানি বেড়ে এদিকে ভাঙন দেখা দিছে, বিপদে আছি। ঘরবাড়ি নিয়ে কি হবে আল্লাহপাক জানে। তিস্তা নদীতে বাঁধ দিলে আমাদের এমন অবস্থা হতো না।

গঙ্গাচড়া উপজেলার কোলকোন্দ ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চলে তলিয়ে গেছে রাস্তাঘাট। এতে করে চিলাখাল সূর্যমূখী ক্বারী মাদ্রাসা, চিলাখাল মধ্যপাড়া জামে মসজিদ, উত্তর চিলাখাল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভাঙনের হুমকিতে রয়েছে। এছাড়া কয়েকটি গ্রামের পাঁচ শতাধিক ঘর-বাড়িতে পানি ঢুকে পড়েছে।

গঙ্গাচড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নাহিদ তামান্না জানান, তিস্তা নদী এলাকায় বন্যায় ও ভাঙনের বিষয়ে আমরা সার্বক্ষনিক খোঁজ খবর রাখছি। তবে রাতে পানি বাড়তে পাড়ে বলে ধারণা করছি। কোথাও কোন সমস্যা হলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এদিকে পাউবোর নিয়ন্ত্রণকক্ষ জানায়, রংপুর জেলার সব নদ-নদীর পানি বাড়ছে। শনিবাবার রাত থেকে রোববার সকাল পর্যন্ত গত ২৪ ঘণ্টায় রংপুর অঞ্চলে ৩৬৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চগড়ে ১৯০ মিলিমিটার, ঠাকুরগাঁওয়ে ১৩০ মিলিমিটার এবং নীলফামারীতে ৪৯ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।

রোববার সন্ধ্যা ৬টায় তিস্তা নদীর কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমার ৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে বিকেল তিনটায় ওই পয়েন্টে পানি প্রবাহ বিপদসীমার ৩ সেন্টিমিটার, বেলা ১২টায় ১ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ২ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় ৪ সেন্টিমিটার নিচে ছিল।  কাউনিয়া পয়েন্টে বিপদসীমা ২৮ দশমিক ৭৫ সেন্টিমিটার ধরা হয়ে থাকে।

অপরদিকে দেশের বৃহত্তম সেচ প্রকল্প তিস্তা ব্যারেজের ডালিয়া পয়েন্টে রোববার সন্ধ্যা ৬টায় পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয় ৫২ দশমিক শূন্য সেন্টিমিটার, যা বিপদসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। এর আগে বিকেল ৩টায় ৫১ দশমিক ৯৪ সেন্টিমিটার, বেলা ১২টায় বিপদসীমার ৫১ দশমিক ৯০ সেন্টিমিটার, সকাল ৯টায় ৫১ দশমিক ৮৬ সেন্টিমিটার এবং সকাল ৬টায় ৫১ দশমিক ৮৪ সেন্টিমিটার পানি প্রবাহ রেকর্ড করা হয়। এ পয়েন্টে ৫২ দশমিক ১৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বিপদসীমা অতিক্রম করে।

সূত্র বলছে, গত ২৪ ঘণ্টায় ভারতের উজানে উল্লেখযোগ্য বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে পশ্চিমবঙ্গের জলপাইগুড়িতে ১৩৬ মিলিমিটার. শিলিগুড়িতে ১১৫ মিলিমিটার এবং আসামের দিব্রগড়ে ৬১ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এ কারণে তিস্তার ভাটির দিকে পানি বেড়ে ক্রমশ বিপদসীমা ছুঁইছুঁই অবস্থায় রয়েছে।

এদিকে, তিস্তা নদী তীরবর্তী কাউনিয়া উপজেলার বালাপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আনছার আলী বলেন, তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় নদী তীরবর্তী ও চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে দুর্ভোগ সৃষ্টি হয়েছে। কদিনের ভোগান্তি কাটতে না কাটতেই আবারও নদীর তীরবর্তী আবাদি জমিগুলো তলিয়ে গিয়ে রবিশস্য বাদাম ও শাক-সবজিসহ উঠতি বিভিন্ন ফসল নিয়ে  মানুষ বিপাকে রয়েছি।

রংপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী রবিউল ইসলাম বলেন, গত কয়েকদিনের তুলনায় রোববার ডালিয়া ও কাউনিয়া পয়েন্টে তিস্তায় পানি বাড়তে শুরু করেছে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে ডালিয়া ব্যারেজের সবকটি গেই খুলে রাখা হয়েছে। কাউনিয়া পয়েন্টে পানি প্রবাহ কিছুটা বাড়ছে। এছাড়া ভাটির অঞ্চলে সার্বক্ষণিক নদীপাড়ের পরিস্থিতির খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।