মুমিনের কথাবার্তা যেমন হবে

মুমিনের কথাবার্তা যেমন হবে

ছবি: সংগৃহীত

কথা বলার শক্তি আল্লাহর দেওয়া বড় নেয়ামত। এই নেয়ামতের কদর করতে হবে। কথা বলতে হবে জেনে-বুঝে ও হিসেব করে। কারণ, মানুষের প্রতিটি কাজ-কর্ম ও কথা লিপিবদ্ধ করা হয়, তাতে কোনো গুনাহ থাকুক বা না থাকুক। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘মানুষ যে কথাই উচ্চারণ করে তা লিপিবদ্ধ করার জন্য তৎপর প্রহরী তার সঙ্গেই রয়েছে।’ (সুরা কাফ: ১৮)

অর্থহীন কথা মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘মুমিনরা সফলকাম হয়েছে, যারা তাদের নামাজে বিনয়ী, যারা অর্থহীন কথা-কাজ থেকে বিরত থাকে।’ (সুরা মুমিনুন: ১-৩) রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহ ও পরকালে বিশ্বাস করে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে।’ (সহিহ মুসলিম: ৪৭) হাদিসে আরও ইরশাদ হয়েছে, ‘প্রকৃত মুসলিম সে, যার জিহ্বা ও হাত থেকে অন্য মুসলিম নিরাপদ থাকে।’ (সহিহ বুখারি: ৬৪৮৪)

তবে, কল্যাণকর কথা বলতে মানা নেই, বরং উত্তম কথার পুরস্কার অনেক বড়। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তাদের বেশিরভাগ গোপন পরামর্শে কোনো কল্যাণ নেই। তবে কল্যাণ আছে যে নির্দেশ দেয় দান-খয়রাত, সৎকাজ ও মানুষের মধ্যে শান্তি স্থাপনের; আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভের আকাঙ্ক্ষায় কেউ তা করলে আল্লাহ তাকে অবশ্যই মহাপুরস্কার দেবেন।’(সুরা নিসা: ১১৪)

উত্তম কথাকে সদকার সমতুল্য বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (র.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেন, ‘সূর্য উদিত হওয়া প্রতিটি দিনেই মানুষের প্রতিটি অঙ্গপ্রত্যঙ্গের ওপর সদকা দেওয়া আবশ্যক। কাউকে বাহনে উঠতে কিংবা কোনো সামগ্রী বাহনে তুলে দিতে সাহায্য করা সদকাস্বরূপ। সুন্দর কথা বলা সদকাস্বরূপ। নামাজে যাওয়ার প্রতিটি পদক্ষেপ সদকাস্বরূপ। পথ থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সরিয়ে ফেলা সদকাস্বরূপ।’ (সহিহ মুসলিম: ১০০৯)

এমনকি সুন্দর কথা ও উত্তম ব্যবহার মানুষকে জাহান্নাম থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। আদি ইবনে হাতিম (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে রাসুল (স.) বলেন, জাহান্নামের আগুন থেকে আত্মরক্ষা করো, যদিও তা খণ্ডিত খেজুরের বিনিময়েও হয়। কেউ যদি তা করতেও সক্ষম না হয়, সে যেন অন্তত ভালো ও সুন্দর ব্যবহার দিয়ে হলেও নিজেকে জাহান্নাম থেকে বাঁচায়। (সহিহ বুখারি: ৬৫৪০)

তাই কথা বললে কল্যাণকর কথা বলার চেষ্টা করতে হবে, নতুবা চুপ থাকতে হবে। শায়খ বকর ইবনে আবদুল্লাহ আল-মুজানি (রহ.)-কে চুপ থাকা নিয়ে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল— আপনি এত দীর্ঘ সময় চুপ থাকেন কেন? তিনি জবাব দেন, আমার জিহ্বা হিংস্র একটা জীবের মতো, যদি আমি ছেড়ে দিই, এটি আমাকে খেয়ে ফেলবে। (বাহজাতুল মাজালিস: ০১/১১)

সামান্য একটু কষ্টদায়ক ও উত্তম কথার বিনিময় কী হতে পারে, তা নিচের হাদিস থেকেই বুঝা যায়। আবু আবদুর রহমান বিলাল ইবনে হারেস মুজানি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘মানুষ আল্লাহ তাআলার সন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য সন্তুষ্টি লিখে দেন। পক্ষান্তরে মানুষ আল্লাহ তাআলার অসন্তোষমূলক এমন কথা বলে, আর সে কল্পনাও করে না যে, তা কোথায় গিয়ে পৌঁছবে, আল্লাহ তার দরুন তার সাক্ষাতের দিন পর্যন্ত তার জন্য অসন্তুষ্টি লিখে দেন। (মালিক: ২৬৫; আহমদ: ১৫৮৫২; তিরমিজি: ২৩১৯; ইবনে মাজাহ: ৩৯৬৯; ইবনে হিব্বান: ২৮০; সিলসিলাতুস সহিহাহ: ৮৮৮)

মূলত, বিতর্ক ও বিবাদ মানুষকে সত্য ও সুপথ থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। নবীজি (স.) বলেন, ‘কোনো সম্প্রদায় সুপথ পাওয়ার পর আবার পথভোলা হয়ে থাকলে তা শুধু তাদের বিবাদ ও বাকবিতণ্ডায় জড়িত হওয়ার কারণেই হয়েছে। তারপর তিনি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন- ‘এরা শুধু বাকবিতণ্ডার উদ্দেশ্যেই আপনাকে এ কথা বলে। বস্তুত এরা এক ঝগড়াটে সম্প্রদায়।’ (সুরা জুখরুফ: ৫৮; সুনানে তিরমিজি: ৩২৫৩)

সংযত আচরণ মূলত জান্নাতি মানুষের বৈশিষ্ট্য। বিশ্বনবী (স.)-এর ঘোষণা- ‘যে ব্যক্তি ন্যায়সঙ্গত হওয়া সত্ত্বেও ঝগড়া পরিহার করবে আমি তার জন্য জান্নাতের বেষ্টনীর মধ্যে একটি ঘরের জিম্মাদার, আর যে ব্যক্তি তামাশার ছলেও মিথ্যা বলে না আমি তার জন্য জান্নাতের মধ্যখানে একটি ঘরের জিম্মাদার, আর যে ব্যক্তি তার চরিত্রকে সৌন্দর্যমণ্ডিত করেছে আমি তার জন্য জান্নাতের সর্বোচ্চ স্থানে অবস্থিত একটি ঘরের জিম্মাদার।’ (সুনানে আবু দাউদ: ৪৮০০)

আলোচ্য হাদিসে রাসুল (স.) মুমিনদের বাক-সংযমে উদ্বুদ্ধ করেছেন। বিশেষত তিনি ঝগড়া পরিহার ও হাসির ছলে মিথ্যা বলা থেকে বিরত থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। মুমিন ভালো কথা ও জিকিরের মাধ্যমে তার জিহ্বাকে সজীব রাখবে। এ প্রসঙ্গে হাদিসে নবী কারিম (স.) বলেন, ‘আল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে তোমার জিহ্বাকে সজীব রাখো।’ (সুনানে তিরমিজি: ৩৩৭৫)

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কথাবার্তায় সংযত হওয়ার তাওফিক দান করুন। কথার মাধ্যমে কাউকে কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার তাওফিক দান করুন। সবসময় সুন্দর ও উত্তম কথা বলার তাওফিক দান করুন। আমিন।