ক্ষমা ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য

ক্ষমা ইসলামের অনুপম সৌন্দর্য

ছবি: সংগৃহীত

ক্ষমা একটি উঁচু মানের মানবীয় গুণ। এই গুণে গুণান্বিতদের আল্লাহ তাআলা ভালোবাসেন। এটি মূলত আল্লাহ তাআলারই মহান একটি গুণ। তাঁর একটি নাম আল গাফুর বা পরম ক্ষমাশীল। পবিত্র কোরআনের বর্ণনায় ‘নিশ্চয় তিনি আল্লাহ, ক্ষমাশীল, পরম ক্ষমাপরায়ণ।’ (সুরা হজ: ৬০)

আল্লাহ তাআলা তাঁর প্রিয়নবীকে এই গুণে গুণান্বিত হওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেন, ‘(হে নবী!) আপনি ক্ষমাশীলতার নীতি অবলম্বন করুন। সৎ কাজের আদেশ দিন এবং মূর্খদের এড়িয়ে চলুন।’ (সুরা আরাফ: ১১৯)

এই গুণটি মহান আল্লাহ বান্দাদের সবাইকে অর্জনের জন্য অনুপ্রাণিত করেছেন এভাবে—‘যদি তোমরা সৎকাজ প্রকাশ্যে করো অথবা গোপনে করো অথবা যদি তোমরা অপরাধ ক্ষমা করে দাও, তাহলে জেনে রাখো যে, আল্লাহ নিজেও ক্ষমাকারী, সর্বশক্তিমান।’ (সুরা নিসা: ১৪৯)

আল্লাহ তাআলা ক্ষমাকারীকে পুরস্কৃত করার ওয়াদা করেছেন। এ প্রসঙ্গে পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন—‘আর মন্দের প্রতিফল মন্দ। এরপর যে ক্ষমা করে দেয় এবং আপস নিষ্পত্তি করে, তার পুরস্কার আল্লাহর কাছে রয়েছে। নিশ্চয়ই আল্লাহ জালিমদের পছন্দ করেন না।’ (সুরা শুরা: ৪০)

তাকওয়ার মতো অনন্য গুণ অর্জন করতে হলে ক্ষমার শিক্ষা গ্রহণ করা উচিত। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আর ক্ষমা করে দেওয়াই তাকওয়ার নিকটতম।’ (সুরা বাকারা: ২৩৭)

প্রিয়নবী (স.) ব্যক্তিগত ব্যাপারে কখনো প্রতিশোধ গ্রহণ করতেন না। অবশ্য কেউ আল্লাহর নিষেধাজ্ঞা লঙ্ঘন করলে তিনি আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য তার প্রতিশোধ নিতেন। (সহিহ বুখারি: ৬১২৬)

মক্কা বিজয়ের পর রাসুলুল্লাহ (স.) অপরাধীদের যেভাবে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন তা প্রবাদপ্রতীম দৃষ্টান্ত। সেদিন তিনি বলেছিলেন, ‘আজ তোমাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ নেই।’ 

সাহাবায়ে কেরামরাও এই মহান গুণে গুণান্বিত ছিলেন। তাঁরা প্রতিশোধ নিতেন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য, অন্যথায় ক্ষমা করে দিতেন। হজরত আলী (রা.)-এর ঘটনা আমরা সবাই জানি। শত্রু ভূপাতিত অবস্থায় আলী (রা.)-কে থুতু মারলে তাঁর রাগ বেড়ে যায়। কিন্তু তিনি ব্যক্তিগত রাগে শত্রুকে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও হত্যা করেননি বরং তরবারি কোষবদ্ধ করে ফেলেছিলেন।

ক্ষমাকারীর মর্যাদা দুনিয়াতেই বাড়িয়ে দেওয়া হয়। আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবীজি (স.) বলেন, ‘সদকা করলে সম্পদের ঘাটতি হয় না। যে ব্যক্তি ক্ষমা করে আল্লাহ তার মর্যাদা বাড়িয়ে দেন। আর যে কেউ আল্লাহর সন্তুষ্টি লাভে বিনীত হলে তিনি তার সম্মান প্রতিষ্ঠিত করে দেন।’ (সহিহ মুসলিম: ২৫৮৮)

কেউ মন্দ আচরণ করলে তার সঙ্গে অনুরূপ মন্দ আচরণ করা জায়েজ, কিন্তু তা  উত্তম নয়। উৎকৃষ্ট পন্থা হলো মন্দ আচরণের বিপরীতে ভালো ব্যবহার করা। এরূপ করলে ঘোর শত্রুও একদিন পরম বন্ধু হয়ে যাবে। আর তার মন্দ আচরণে যে ধৈর্য ধারণ করবে, তার সওয়াব তো রয়েছেই। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘ভালো ও মন্দ সমান হয় না। তুমি মন্দকে প্রতিহত করো এমন পন্থায়, যা হবে উৎকৃষ্ট। ফলে যার ও তোমার মধ্যে শত্রুতা ছিল, সে সহসাই হয়ে যাবে তোমার অন্তরঙ্গ বন্ধু।’ (সুরা ফুচ্ছিলাত: ৩৪)

আর আল্লাহ তাআলা ক্ষমাকারীদের অনেক পছন্দ করেন। ক্ষমাশীলতাকে পরকালীন সমৃদ্ধির উপকরণ বলে ঘোষণা করে বলেন, ‘তোমরা তোমাদের রবের ক্ষমা ও সেই জান্নাতের দিকে ধাবিত হও যার প্রশস্ততা আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর ন্যায়। যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে মুত্তাকীদের জন্য। যারা সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় ব্যয় করে এবং যারা ক্রোধ সম্বরণকারী আর মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল। আল্লাহ নেককার লোকদের ভালোবাসেন।’ (সুরা আলে ইমরান: ১৩৩-১৩৪)