পরশুরামে ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি

পরশুরামে ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি

সংগৃহীত

ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলের পানি ফেনীর ফুলগাজী ও পরশুরাম উপজেলার লোকালয়ে প্রবেশ করে বন্যার সৃষ্টি করেছে। পানির চাপে মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদী রক্ষা বাঁধের অন্তত ৭টি স্থান ভেঙ্গে অন্তত ৩২টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৪ হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। পরশুরাম পৌর এলাকা থেকে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা ১০টি পরিবারকে উদ্ধার করে নিরাপদ আশ্রয়ে পৌঁছে দিয়েছেন।

শুক্রবার (২ আগস্ট) রাত ৯টায় এ প্রতিবেদন প্রস্তুতের সময় পরশুরামে মুহুরী নদীর পানি বিপদসিমার ২৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। রাতের মধ্যেই আরও নতুন নতুন স্থানে ভাঙ্গনের সৃষ্টি হয়ে বিভিন্ন এলাকা প্লাবিত হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

পরশুরাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আফরোজা হাবিব শাপলা বলেন, বৃহস্পতিবার থেকে ভারতীয় উজান থেকে নেমে আসা পানির চাপে মুহুরী, সিলোনীয়া ও কহুয়া নদীর পানি বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে থাকে। পানির চাপে পরশুরাম উপজেলায় নদী রক্ষা বাঁধের ৭টি স্থানে ভাঙ্গন দিয়ে পানি প্রবেশ করে ২২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এতে করে অন্তত ২ হাজার ৮শ পরিবার পানিবন্দি অবস্থায় রয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে শুকনা খাবার বিতরণ কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

তিনি জানান, পরশুরাম উপজেলা শহরের  কাউতলী রাস্তার ২টি স্থানে এবং পরশুরাম থানা সংলগ্ন স্থানে ভেঙ্গে বাউরপাথর,  বাউরখুমা,  দুবলাচাদ, কোলাপাড়া, অনন্তপুর, উত্তর গুথুমা, বেড়াবারিয়া এলাকা প্লাবিত হয়েছে। এতে করে ৭টি গ্রামের অন্তত ১ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে গেছে। সিলোনীয়া নদীর বাঁধ ভেঙ্গে পশ্চিম মির্জানগরের উত্তর মনিপুর, দক্ষিণ মণিপুর, কালী কৃষ্ণনগর, গদানগর, কাউতলী ও দাসপাড়া প্লাবিত হয়েছে। এতে ৬টি গ্রামের ৩শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চিথলিয়া ইউনিয়নের শালধর গ্রামে মুহুরী নদী রক্ষা বাঁধ ভেঙ্গে ৩ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। দক্ষিণ শালধর, মালীপাথর ও পাগলীরগুল গ্রামের প্রায় ৭শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে রয়েছে। দক্ষিণ টেটেশ্বর গ্রামে কহুয়া নদী রক্ষা বাধে ভাঙ্গনে ৬টি গ্রাম প্লাবিত হয়ে ৮শ পরিবার পানিবন্দি হয়ে পড়ে।

এদিকে ফুলগাজী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তানিয়া ইসলাম ভ’ঞা বলেন, মুহুরী, কহুয়া ও সিলোনীয়া নদীর পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হয়ে লোকালয়ে প্লাবন সৃষ্টি হয়েছে। ইতোমধ্যে উপজেলার ফুলগাজী সদর ইউনিয়নের ৩ গ্রাম, আমজাদহাট ইউনিয়নের ৫ গ্রাম এবং মুন্সিরহাট ইউনিয়নের ২টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। এসব এলাকার ফসলী জমি, পুকুরের মাছ, বাড়িঘর তলিয়ে গেছে। রাস্তাঘাট বন্ধ হয়ে গেছে। জনসাধারণ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। রাত ৯টা পর্যন্ত ফুলগাজী উপজেলা বাজারটি অন্তত ৩ থেকে ৫ ফুট পানির নিচে তলিয়ে গেছে।  এতে করে ব্যবসায়ীরা ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

জেলা প্রশাসক মুছাম্মৎ শাহীনা আক্তার বলেন, কিছুদিন আগে ফুলগাজী ও পরশুরামে নদী রক্ষাবাঁধ ভেঙ্গে যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে তা রিকভারী হওয়ার আগেই আবার বন্যা শুরু হয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে চাহিদা মোতাবেক শুকনা খাবার ও নগদ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। রাতের মধ্যে আরও নতুন নতুন স্থানে বেড়িবাঁধে ভাঙ্গন দেখা দিয়ে মানবিক বিপর্যয় সৃষ্টি হতে পারে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ শাহরিয়ার হাসান বলেন, রাত ৯টা পর্যন্ত ফুলগাজী ও পরশুরামে নদীর পানি বিপদসীমার ২৫৫ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। বৃষ্টি না কমলে পানির চাপ কমবেনা। এতে করে আরো বড় আকারের ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা সৃষ্টি হবে।