শেখ হাসিনাকে সাবেক অতিরিক্ত সচিবের খোলা চিঠি

শেখ হাসিনাকে সাবেক অতিরিক্ত সচিবের খোলা চিঠি

ফাইল ছবি

টানা চার মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় এলেও দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের পর ক্ষমতায় আসার পর বছরও পার করতে পারলেন না শেখ হাসিনা। ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানের মুখে প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছাড়তে হয়েছে তাকে। ক্ষমতায় থাকার সময় দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন করলেও সরকারের মন্ত্রী-এমপি ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বিরুদ্ধে একের পর এক দুর্নীতি, অর্থপাচারের অভিযোগ সামনে আসছে। 

সরকারের রোষানলে পড়ার ভয়ে অনেকে এতদিন মুখ না খুললেও এখন অনেকেই নানা অনিয়মের কথা তুলে ধরছেন। জড়িতদের শাস্তিও দাবি করছেন।

দুর্নীতি অনিয়ম বন্ধ করতে নিজের ভাবনা তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ চেয়েছিলেন সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব কবির মিলন। একপর্যায়ে সরকারি কর্মকর্তাদের রোষানলে পড়তে হয় তাকে। প্রথমে ওএসডি, পড়ে তাকে বিভাগীয় মামলায় শাস্তিও দেওয়া হয়। পরবর্তীতে অবসরে যান তিনি।

দেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর আলোচিত এই আমলা প্রধানমন্ত্রীকে মা সম্মোধন করে খোলা চিঠি লিখেছেন। মঙ্গলবার (৬ আগস্ট) রাতে তার লেখা খোলা চিঠিটি ঢাকা মেইলের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো—

প্রিয় আম্মা,
আজও দেখলাম আপনার বাসা (গণভবন), যেটাতে আপনি ২০৫০ সাল পর্যন্ত থাকতে চেয়েছিলেন, হাজার হাজার উৎসুক জনতা ঘিরে রেখেছে। আপনার সেই ভবনের দেয়াল পর্যন্ত হাওয়া হয়ে গেছে। আপনার পাহারায় চারিদিকে ঘিরে আকাশ থেকে নেমে আসা অবিনাশী যে বাহিনী পাহারায় থাকত, তারা আজ কেউ নেই। তারাও জনতার ভয়ে পালিয়ে গেছে।

পরিকল্পনা কমিশনের দেয়াল ভরা আপনার ছবি দিয়ে যে উন্নয়নের ফিরিস্তিসমূহ বড় বড় প্ল্যাকার্ডে শোভা পেত, জনগণ তা দুমড়ে-মুচড়ে ফেলে দিয়েছে। আপনার ১৬ বছরের উন্নয়নকে মানুষের অন্তরে ঢোকাতে পারেননি, যা শো করেছেন জোর করে বাহ্যিকভাবে।

চেতনা মানুষের অন্তরে প্রবেশ করাতে পারেননি, যা ঠাঁই পেয়েছে মোড়ে মোড়ে, রাস্তায় রাস্তায়। ফলে এসব আজ ভূলণ্ঠিত। চেতনা ব্যবসার এক করুণ পরিণতি। এটাই প্রকৃতির প্রতিশোধ। 

আপনি বুঝতে পারেননি, আপনার চারপাশে যারা সমানে স্তুতি আর তৈল মর্দন করে মুখে ফেনা তুলে ফেলত, তারা সবাই ছিল পদ পদোন্নতি, দুর্নীতি আর লুটপাটের জন্য। 

৪০০ কোটি টাকা কামানো পিয়নের দায়ভার যেমন আপনার, ১১ লাখ কোটি টাকা পাচারের দায়ভারও আপনার আম্মা। এটাই অফিশিয়াল সিস্টেম।

ইতোমধ্যে এক সার্ভিস এসোসিয়েনকে দেখলাম স্বৈরাচারমুক্ত স্বাধীন দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে। এই সার্ভিসের ঊর্ধ্বতন প্রায় সবাই আপনার দলীয় কর্মী হিসেবে পরিচিত। আপনি দেখতে থাকুন আপনার সৃষ্ট সুবিধাবাদী সব দানবেরা স্বৈরাচার মুক্তির আনন্দ শুরু করে দিয়েছে আর কয়েক দিনের মধ্যেই। 

দম্ভ, অহংকার আর নিজেকে অবিনাশী হিসেবে ভাবার জন্য প্রকৃতির প্রতিশোধ আজ ১৭ কোটি মানুষ দেখছে নিজ চোখে।

আপনি পালাবেন না, কিন্তু পালিয়েছেন। হাজার হাজার নেতাকর্মীকে আজ মৃত্যুর মুখে ঠেলে দিয়ে গেছেন। ১৬ বছরের অন্যায় অবিচার আর নির্যাতনের প্রতিশোধ নিচ্ছে জনগণ। এটা থামানো খুব কঠিন। 

এবার বিডিআর মিউটিনির আমাদের ৫৭ জন বীর সেনা কর্মকর্তা হত্যার বিচার হবে। বিচার হবে তনু হত্যাকাণ্ডের। বিচার হবে সাগর রুনি হত্যাকাণ্ডের ইনশাআল্লাহ। শুধু সময়ের অপেক্ষা। সকল অবিচারের বিচার হবে ইনশাআল্লাহ।