দ্বিনি কাজে বেশি সাফল্য আসে যেভাবে

দ্বিনি কাজে বেশি সাফল্য আসে যেভাবে

ছবিঃ ইন্টারনেট থেকে সংগৃহীত।

আমাদের পূর্বসূরি বুজুর্গদের দ্বিনি কাজের পদ্ধতি ছিল অত্যন্ত কার্যকর ও ফলপ্রসূ, বিশেষত মানুষের আত্মিক পরিশুদ্ধি ও সংশোধনে তাঁরা সব সময় বাস্তবসম্মত পদ্ধতি অনুসরণ করতেন। তাঁদের নিয়ম ছিল সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ও সবল মুরিদদের পূর্ণমাত্রায় আল্লাহর জিকিরের তালিম দিতেন। দুর্বল বা কর্মব্যস্ত হলে শক্তি ও অবসর অনুযায়ী তালিম দিতেন। কাউকে ১০ হাজার বার, কাউকে পাঁচ হাজার বার আবার কাউকে পাঁচ শ বার।

শক্তি, সামর্থ্য ও অবসর অনুসারে তাঁরা মুরিদদের থেকে কাজ আদায় করতেন। তাঁরা কঠোরতা পছন্দ করতেন না।

আমার শায়খ ও মুরশিদ (রহ.) বলতেন, বর্তমান তোমরা যে দেখছ মসজিদে প্রত্যেক নামাজের পর মুসল্লিরা সালাম ফিরিয়ে তিনবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ জিকির করে তার তাৎপর্য হলো, হয়তো কোনো একজন শায়খ তাঁর কোনো একজন দুর্বল মুরিদকে বলেছিলেন, তুমি আর কি আমল করতে পারবে? প্রত্যেক নামাজের পর তিনবার ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু’ পাঠ করবে। পৃথিবীর নিয়ম হলো মানুষ অন্যের দেখাদেখি আমল করে।

সেই দুর্বল মুরিদকে দেখে অন্য লোকেরাও অনুরূপ আমল করতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে তা নামাজি ও মুসল্লিদের সাধারণ রীতিতে পরিণত হয়েছে। সবাই তা পালন করছে। কোনো একজন কবি বলেন, ‘আল্লাহ তাআলার নৈকট্য লাভের জন্য একবার আল্লাহ বলাই যথেষ্ট।

অধিক পরিমাণে জিকির করার ওপর তা নির্ভর করে না, বরং তোমার সাহস ও শক্তি পরিমাণ উপায় ও অবলম্বন করা আবশ্যক। শক্তির বাইরে কিছু করতে যেয়ো না।’

মোটকথা আমাদের বুজুর্গদের আধ্যাত্মিক শিক্ষা ও অনুশীলন অত্যন্ত সহজ ছিল, মুরিদের তাতে কোনো প্রকার কষ্ট হতো না। মুরিদরা খুব আনন্দের সঙ্গে ওজিফা আদায় করতে পারত এবং সব কাজ সম্পন্ন করতে পারত। তাঁদের কর্মপদ্ধতি দেখে আমি (এই পঙক্তি) বলি, ‘কাউকে হালকা-পাতলা রাখতেন, সে হাসতে হাসতে খুশির সঙ্গে গন্তব্যে পৌঁছে যেত।

কাউকে অতিরিক্ত কাজের চাপে জড়াতেন, সে হাল ও অপরূপ অবস্থার মধ্যে ডুবে যেত। ফুল হাসছে, বুলবুল কাঁদছে; জানি না, তুমি তাদের কানে কানে কী বলে দিয়েছ।’

তাঁদের দরবারে এমন কোনো অবধারিত নিয়ম ছিল না, যা মেনে চলা সবার জন্য অপরিহার্য হতো এবং যার প্রতি গুরুত্ব প্রদান করা সবার জন্য আবশ্যক হতো, বরং তাঁরা যার জন্য যেটা উপযোগী ভাবতেন সেটা শিক্ষা দিতেন। তবে তাঁদের প্রজ্ঞার পরিচয় পাওয়া যেত মুরিদদের অবস্থা বিশ্লেষণ করলে। দেখা যেত যাকে সামান্য কাজ তালিম দিতেন, সেই সামান্যই তার জন্য এতটা উপকারী হতো যে তার সব দোষত্রুটি সংশোধন হয়ে যেত। বাড়তি কোনো আমল-ওজিফার প্রয়োজন হতো না। বস্তুত সবাইকে একই লাঠি দিয়ে তাড়া করা অনভিজ্ঞতার প্রমাণ।

কোনো কোনো ডাক্তার সব ধরনের জ্বরের জন্যই কুইনাইন প্রয়োগ করেন। তাঁরা ভেবে দেখেন না—কোন প্রকারের জ্বর, মৌসুমি জ্বর না আবহাওয়া পরিবর্তনের জ্বর, রোগীর প্রকৃতি গরম না স্বাভাবিক, দুর্বলতা কি পরিমাণ ইত্যাদি। পক্ষান্তরে একজন অভিজ্ঞ চিকিৎসক সব কিছু বিবেচনায় রেখে ওষুধ নির্বাচন করেন। আমাদের পূর্বসূরি পীর-মাশায়েখরা মুরিদের সার্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই সে অনুযায়ী ওজিফা দিতেন। কোনো পীরকে দেখা যায়, তাঁরা কঠোরতা পছন্দ করেন। তাঁরা মনে করেন, মুরিদের অবস্থা বিবেচনা করা তার জন্য ক্ষতিকর। তাঁরা বলতে চান, সুস্থ হোক বা অসুস্থ কেউ যব খাওয়া ছাড়তে পারবে না। প্রাণ গেলেও নবীজি (সা.)-এর সুন্নত ত্যাগ করা যাবে না। প্রয়োজন হলে মরব, মরলে শহীদ হব। সুতরাং যব খেতেই হবে, উহ শব্দ পর্যন্ত করা যাবে না। অথচ তাঁদের এই মনোভাবই সুন্নাহ ও নবীজি (সা.)-এর কর্মপন্থার পরিপন্থী।

মাওয়ায়েজে আশরাফিয়া থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর