ক্রীড়াঙ্গনে আওয়ামী লীগের সাকিব ছাড়া সবাই আড়ালে

ক্রীড়াঙ্গনে আওয়ামী লীগের সাকিব ছাড়া সবাই আড়ালে

ছবি: সংগৃহীত

বিগত দেড় দশক ধরে আলোচনা-সমালোচনা আর নানাবিধ কর্মকাণ্ডে মুখরিত ছিল বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড। স্বাভাবিক কাজের বাইরেও দেশের রাজনীতির নামী অনেক মুখের আনাগোণা ছিল মিরপুরের শের-ই বাংলা স্টেডিয়ামের আশপাশে। কিশোরগঞ্জ-৬ আসনের সংসদ সদস্য নাজমুল হাসান পাপন বহুদিন ধরেই ছিলেন ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি। 

শুধু নাজমুল হাসানই না, ক্রিকেট বোর্ডের আশেপাশে ছিলেন রাজনীতির আরও অনেকেই। বিসিবির সাবেক সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল (কুমিল্লা-১০), বিসিবির সাবেক সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী (ঢাকা-৯), বিসিবির সাবেক পরিচালক গোলাম দস্তগীর গাজী (নারায়ণগঞ্জ-১) ছিলেন সংসদের সদস্য। পরিচালকদের মধ্যে আ জ ম নাসির উদ্দিন ছিলেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোশনের সাবেক মেয়র এবং চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা। 

এর বাইরে শফিউর রহমান নাদেল সিলেটে এবং নাইমুর রহমান দুর্জয় ছিলেন মানিকগঞ্জের সংসদ সদস্য। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের মধ্যে সাকিব আল হাসানও হয়েছিলেন সংসদ সদস্য। আরেক সাবেক ক্রিকেটার মাশরাফি বিন মর্তুজা নড়াইল-২ আসন থেকে টানা দুইবারের নির্বাচিত সংসদ সদস্য। 

ক্রিকেট দুনিয়ার এত সব নামের মাঝে একমাত্র সাকিব আল হাসানকেই এখন পর্যন্ত দেখা গিয়েছে ক্যামেরার পর্দায়। কানাডায় গ্লোবাল টি-টোয়েন্টি খেলেছেন। এরপর পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে দেখা যাবে তাকে। জাতীয় দলের ক্রিকেটার অবশ্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে শুরু করে প্রবাসী ভক্তদের মাঝেও নিন্দার শিকার হয়েছেন। 

ফুটবলে কাজী সালাউদ্দিন সরাসরি রাজনীতিতে যুক্ত না হলেও ছিলেন প্রভাবশালী। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বড় ছেলে শেখ কামালের বন্ধু ছিলেন। দেশের ফুটবল ইতিহাসেও সেরা ব্যক্তিত্ব ছিলেন নিঃসন্দেহে। তবে বাফুফে চেয়ারম্যানের পদে বসার পরে হয়েছেন নিন্দিত। মঙ্গলবার প্রথমবার কথা বলেছেন গণমাধ্যমের সামনে। বলেছেন, পদত্যাগের ইচ্ছে নেই তার। আরও একবার নির্বাচন করতে চান তিনি। 

আরেক সাবেক ফুটবলার আবদুস সালাম মুর্শেদী (খুলনা-৪) এবং বাফুফের সহ-সভাপতি কাজী নাবিল আহমেদও (যশোর-৩) নেই কোনো খবরে। সালাম মুর্শেদী অবশ্য নিজের পদত্যাগ করার খবর জানিয়েছেন। তারপরেই অবশ্য খোঁজ নেই তার। 

বাফুফের আরেক সহ-সভাপতি মহিউদ্দিন আহমেদ মহী ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী কর্মকর্তা। বাফুফে সদস্য সাইফুল, ওয়াদুদ পিন্টু, হারুনর রশীদ,সত্যজিৎ দাশ রুপু সহ অনেকে আওয়ামী লীগের নানা পর্যায়ের নানা পদে রয়েছেন। 

সাবেক রেফারি ও বাফুফের সাবেক সহ-সভাপতি বীর বাহাদুরও নির্বাচিত হয়েছেন। পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরেই পরিচিত বীর বাহাদুর। তাকেও দেখা যায়নি ৫ আগস্টের সরকার পতনের পর থেকে। ক্যারম ফেডারেশনের সভাপতি জুনাইদ আহমেদ পলক ছিলেন ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে। সরকার পতনের পর দেশত্যাগের চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছিলেন তিনি।  

স্কোয়াশ ফেডারেশনের সভাপতি ফারুক খান, রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সভাপতি আবুল কালাম আজাদকেও দেখা যায়নি সরকার পতনের পরদিন থেকে। ঢাকা-১ আসনে নির্বাচিত হয়েছেন সালমান এফ রহমান। ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি হিসেবে তার মূল পরিচিতি হলেও ঢাকা আবাহনীর চেয়ারম্যান ছিলেন দীর্ঘদিন থেকে। আবাহনী ক্লাবের অন্যতম পরিচালক নসরুল হামিদ বিপুও নেই কোনো খবরে। 

টেনিস ফেডারেশনের সভাপতি খালিদ মাহমুদ চৌধুরিও প্রতিমন্ত্রী হিসেবে মনোনীত হয়েছেন। মহিলা ক্রীড়া সংস্থার সদস্য রুমানা আলী প্রথমবার এমপি হয়েই প্রতিমন্ত্রী হয়েছেন।  হকি ফেডারেশনের সাবেক সহ-সভাপতি এবং আবাহনী ক্লাবের পরিচালক শাহরিয়ার আলম ছিলেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। নিখোঁজ আছেন তিনিও। 

ক্রীড়াঙ্গনে সাঁতার ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক এমবি সাইফ গোপালগঞ্জ যুব লীগের সাধারণ সম্পাদক। তার আগে ছিলেন রফিজ উদ্দিন তিনিও দলীয় ব্যবস্থায়। অ্যাথলেটিক্সে কৃতি অ্যাথলেট ও সংগঠকদের সরিয়ে দাপট দেখাচ্ছেন আব্দুর রকিব মন্টু। তিনিও আওয়ামী লীগের মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলেন।

এত এত নামের অনুপস্থিতিতে ক্রীড়াঙ্গনে স্বাভাবিকভাবেই দেখা দিয়েছে বড় রকমের শূন্যতা। অন্তর্বর্তী সরকারের যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাওয়া আসিফ মাহমুদ দেশের রাজনীতির নবীনতম এক মুখ। দায়িত্বের বড় পদে আসার পরেই তার সামনে আছে শূন্যতা পূরণের বড় চ্যালেঞ্জ। সেখান থেকে ক্রীড়াজগতের এই দুর্দশা ঠিক কীভাবে সামাল দেবেন এই ছাত্রনেতা, সেটার অপেক্ষায় দেশের ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ।