যেভাবে ব্যয় হয় পাগলা মসজিদের দানের টাকা

যেভাবে ব্যয় হয় পাগলা মসজিদের দানের টাকা

ছবি:সংগৃহীত

দেশের সর্বোচ্চ আইকরী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে ইতোমধ্যেই স্বীকৃতি পেয়েছে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক পাগলা মসজিদ। জেলা শহরের নরসুন্দা নদীর কূল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে মসজিদটি। শুধু বাংলাদেশ নয় এই মসজিদের খ্যাতি বিশ্বজুড়ে। সাধারণত মসজিদ মুসলিমদের প্রধান ধর্মীয় উপসনালয় হলেও পাগলা মসজিদ অন্যান্য ধর্মের মানুষের কাছেও আবেগ ও বিশ্বাসের নাম। মানুষের বিশ্বাস এই মসজিদটির অলৌকিক কোনো বিশেষত্ব রয়েছে। ফলে এখানে দান করলে মনের আশা-আকাঙ্ক্ষা পূরণ হয়। এই বিশ্বাস থেকেই প্রতিদিন দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে ছুটে আসেন মানুষজন। মনের ইচ্ছা ব্যক্ত করে নিজেদের সামর্থ্যের সবটা দিয়ে দান করেন এখানে। আর এই দানের অর্থে তৈরি হয় টাকার পাহাড়। তবে সারাদেশের মানুষের একটি কৌতূহল থেকেই যায়! 

যেভাবে খরচ হয় পাগলা মসজিদের টাকা
পদাধিকার বলে কিশোরগঞ্জ জেলা প্রশাসককে সভাপতি করে মসজিদের বিপুল পরিমাণ অর্থ সংরক্ষণ করার জন্য ২৯ সদস্য বিশিষ্ট একটি কমিটি রয়েছে। উক্ত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ব্যয় করা হয় মসজিদের দানের টাকা। তবে বর্তমানে কত টাকা অ্যাকাউন্টে আছে- এ ব্যাপারে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি। মসজিদ কমিটির দাবি, স্বচ্ছতার সঙ্গে হিসাব রাখা হলেও কৌশলগত কারণে টাকার পরিমাণটি গোপন রাখা হয়। তবে ধারণা করা হচ্ছে, বর্তমানে শতকোটি টাকার ওপরে জমা রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাষ্ট্রায়ত্ত রূপালী ব্যাংকের কিশোরগঞ্জ শাখায় পাগলা মসজিদের নামে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা রয়েছে। প্রতিবার দানের প্রাপ্ত টাকা সেই অ্যাকাউন্টে জমা রাখা হয়। সেই টাকার লভ্যাংশ থেকে পাগলা মসজিদে কর্মরত কর্মচারীদের বেতন দেওয়া হয়। এছাড়াও জেলার বিভিন্ন মাদ্রাসা, এতিমখানা ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে সহায়তা করা হয়। 

পাগলা মসজিদ পরিচালনা কমিটির সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বিগত সময়ে জেলা শহরের শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একটি পিসিআর ল্যাব স্থাপন করে দেওয়া হয়েছিলো। 

মসজিদ কমপ্লেক্সের প্রশাসনিক কর্মকর্তা এসএম শওকত আলম জানান, আয়ের মূল টাকা ব্যাংক হিসাবে জমা রাখা হয়। 

মসজিদ পরিচালনা কমিটির সাধারণ সম্পাদক ও কিশোরগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মাহমুদ পারভেজ জানান, ‘স্বচ্ছতার সঙ্গে মসজিদের আয়ের টাকার হিসাব রাখা হয়। প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শহরের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে পরিচালনা কমিটি রয়েছে। বর্তমানে ব্যাংকে মোটা অঙ্কের টাকা জমা হয়েছে। তবে কৌশলগত কারণে কমিটির সিদ্ধান্তে টাকার পরিমাণটি গোপন রাখা হয়।’

অত্যাধুনিক ইসলামিক কমপ্লেক্স নির্মাণের উদ্যোগ 
পাগলা মসজিদের দীর্ঘ সময়ের জমানো দানের টাকা থেকে এবার একটি দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স করার প্রকল্প হাতে নিয়েছে কর্তৃপক্ষ। এই প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে মসজিদের ভেতর এবং বাইরে একসঙ্গে ৬০ হাজারেরও বেশি মুসল্লী নামাজ আদায় করতে পারবেন। এছাড়াও মহিলাদের নামাজ পড়ার জন্য আলাদা স্থানের ব্যবস্থা করা হবে। ছেলে এবং মেয়েদের পৃথক শিক্ষাদানের জন্য করা হবে দুটি মাদ্রাসা ও এতিমখানা। সেই সাথে আধুনিক মানের একটি গেস্ট হাউজ নির্মাণ করা হবে বলেও জানা গেছে। 

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক জানান, মসজিদের নকশার জন্য টেন্ডার আহ্বান করার পর ১২টি পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নকশা জমা দিয়েছে। শিগগিরই নকশা চূড়ান্ত করে কাজ শুরুর প্রক্রিয়া হাতে নেওয়া হবে। 

জেলা প্রশাসক বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে কমপ্লেক্স নির্মাণে ১১৫ কোটি টাকা খরচ হবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। আশা করছি, ব্যাংকে যে পরিমাণ টাকা জমা আছে তা দিয়ে মূল মসজিদের নির্মাণকাজ শেষ হয়ে যাবে।’

মসজিদের ইতিহাস 
কিশোরগঞ্জ শহরের হারুয়া এলাকায় নরসুন্দা নদীর তীরে দৃষ্টিনন্দন পাগলা মসজিদের অবস্থান। পাগলা মসজিদ প্রতিষ্ঠার সঠিক ইতিহাস জানা যায়নি। জনশ্রুতি আছে, প্রায় ১৫০ বছর আগে কিশোরগঞ্জের ঐতিহাসিক হয়বতনগর জমিদার বাড়ির ঈসা খাঁর বংশধর দেওয়ান জিলকদর খাঁ ওরফে জিল কদর পাগলা নামক একজন আধ্যাত্মিক ব্যক্তি নরসুন্দা নদীর তীরে বসে নামাজ পড়তেন। পরে এখানে একটি মসজিদ নির্মাণ করা হয়। অন্য জনশ্রুতি মতে, কোনো একসময় পাগলবেশী এক আধ্যাত্মিক সাধু নরসুন্দা নদীর মাঝখানে চরে আশ্রয় নেন। তার মৃত্যুর পর সমাধির পাশে এই মসজিদটি গড়ে ওঠে। পরে পাগলা মসজিদ নামে পরিচিতি পায় মসজিদটি।