ইসলামী ব্যাংকের এস আলমের শেয়ার সরকারের জিম্মায় থাকবে: গভর্নর

ইসলামী ব্যাংকের এস আলমের শেয়ার সরকারের জিম্মায় থাকবে: গভর্নর

ফাইল ছবি

নামে-বেনামে নেওয়া ঋণের টাকা পরিশোধ না করা পর্যন্ত ইসলামী ব্যাংকের এস আলমের শেয়ার সরকারের জিম্মায় থাকবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর।

বুধবার (২১ আগস্ট) বাংলাদেশ ব্যাংকের বোর্ড রু‌মে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন তিনি। 

ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ইসলামী ব্যাংকের পর্ষদ ভেঙে দি‌য়ে সরকারের সহ‌যোগিতায় ছোট আকা‌রে বোর্ড গঠন করা হবে। পাশাপাশি দুই এক‌দি‌নের মধ্যেই স্বতন্ত্র পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হবে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বলেন, এখন ইসলামী ব্যাংকে এস আল‌ম গ্রুপ বা তার স্বার্থ সং‌শ্লিষ্ট ব্যক্তি প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য কা‌রো না‌মে এককভা‌বে দুই শতাংশের বেশি শেয়ারধারী নেই। তাই পরবর্তী‌তে যখন কো‌নো শেয়ার‌হোল্ডার দুই শতাংশ শেয়ারের মা‌লিক হ‌বেন তখন তা‌দের ম‌ধ্য থে‌কে প‌রিচালক নি‌য়োগ দেওয়া হ‌বে।

২০১৭ সালে ইসলামী ব্যাংক দখলে নেয় এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির মালিকানা নেওয়ার পর থেকে নামে-বেনামে ৭৫ হাজার কোটি টাকা বের করে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। ব্যাংকটির শেয়ারের ৮২ শতাংশের মালিকানা রয়েছে এস আলমের হাতে। এরই মধ্যে এস আলমের শেয়ার হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে বিএসইসি।

ছাত্র-জনতা গণঅভ্যুত্থ্যানের মুখে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে ব্যাংক খাতে পালাবদলের মধ্যে সবার আগে ইসলামী ব্যাংককে এস আলমের ‘দখলমুক্ত’ করতে আন্দোলন শুরু হয়। সরকার পতনের পরপরই ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিক্ষোভের মধ্যে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে গত ১১ আগস্ট একপক্ষ গুলি ছুড়লে ছয়জন আহত হয়।

গত রোববার ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির বর্তমান বোর্ড অব ডিরেক্টরস ভেঙে নতুন বোর্ড গঠনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর দুটি লিখিত আবেদন করা হয়েছিল।

লিখিত আবেদনে বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি, আপনি ইতোমধ্যে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে দেশের সর্ববৃহৎ ব্যাংক ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ পিএলসির বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে অবগত হয়েছেন। ব্যাংকটির বোর্ড অব ডিরেক্টরস ও কতিপয় অসৎ কর্মকর্তার সহায়তায় ব্যাংকের বিপুল অর্থ পাচার ও লোপাটের ভয়ংকর চিত্র বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত হয়েছে। আমরা মনে করি, বাস্তব অবস্থা এর চেয়েও জঘন্য। দীর্ঘদিন এই অনিয়ম ও লুটপাটের ধারা অব্যাহত থাকায় ব্যাংকটির প্রতি আমানতকারীদের/গণমানুষের এবং শেয়ার হোল্ডাদেরও আস্থায় ফাটল ধরেছে।

আবেদনে আরও বলা হয়, ইতোপূর্বে এ ব্যাংক বিশ্বের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কর্তৃক The Strongest Bank in Bangladesh হিসেবে স্বীকৃত ছিল। প্রতি বছর প্রায় ডজন খানেক আন্তর্জাতিক পুরস্কারে ভূষিত হতো এ ব্যাংক। তাছাড়া বাংলাদেশের এক মাত্র ব্যাংক, যা একাধারে বিগত ১২ বছর ধরে যুক্তরাজ্যভিত্তিক বিশ্ববিখ্যাত ম্যাগাজিন ‘দি ব্যাংকার’ কর্তৃক বিশ্বসেরা ১০০০ ব্যাংকের তালিকায় স্থান লাভ করে আসছিল।

এর আগে গতকাল সোমবার (১৯ আগস্ট) এস আলম গ্রুপের নিয়ন্ত্রণাধীন ছয় ব্যাংকের ঋণ বিতরণ ও এল‌সি খোলা স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। বেনামি ঋণ ও অর্থপাচার ঠেকাতে এমন উদ্যোগ নেওয়া হয়।

ব্যাংক ছয়টি হলো- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক, ইউনিয়ন ব্যাংক ও বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক।