গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্ধত্বের পথে ক্রিকেটার সাকিব

গুলিবিদ্ধ হয়ে অন্ধত্বের পথে ক্রিকেটার সাকিব

ছবি: সংগৃহীত

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছোড়া গুলিতে বাম চোখ হারানোর আশঙ্কায় বাড়িতে শুয়ে ছটফট করছেন নীলফামারীর সৈয়দপুরের ক্রিকেটার সাকিব (২০)। চোখের রেটিনা ফেটে যাওয়ায় উন্নত চিকিৎসা জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজনে দুশ্চিন্তায় পড়েছে পরিবারটি।

সাকিব রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষার্থী। তার বাড়ি সৈয়দপুর পৌর শহরের ১০ নম্বর ওয়ার্ডের কাজিপাড়া এলাকায়। তার বাবা বেঁচে নেই।

বৃহস্পতিবার দুপুরে তার বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, বিছানায় শুয়ে আছেন ক্রিকেটার সাকিব। তার বাম চোখ ব্যান্ডেজে মোড়ানো। চোখে সানগ্লাস।

জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এরই ধারাবাহিকতায় সৈয়দপুরের শিক্ষার্থীরা গত ১৮ জুলাই দুপুরে শহরব্যাপী মিছিল ও পাঁচমাথা মোড় পুলিশ বক্সের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন। সমাবেশে সমন্বয়করা বক্তব্য দেওয়ার সময় পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি ছুঁড়ে। এতে মারাত্মকভাবে আহত হন সাকিব।

তার মাথায় ৮টি, বাম চোখে ১টি ও নাকে একটি ছড়রা গুলি বিদ্ধ হয়। ওই মুহূর্তে তাকে নেয়া হয় সৈয়দপুর ১০০ শয্যা হাসপাতালে। সেখান থেকে নেয়া হয় রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। সেখানে দুইদিন চিকিৎসার পর উন্নত চিকিৎসার জন্য আবারো বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়। সেখানে চক্ষু বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার দাস অপারেশনে চোখের গুলি বের করতে সমর্থ হলেও চোখের রেটিনা ফেটে যাওয়ায় ভারতের চেন্নাইয়ে রেফার্ড করেন। তবে অর্থের অভাবে ভারতে যাওয়া হয়নি সাকিবের। বর্তমানে চিকিৎসা ছাড়াই বাড়িতে চোখের যন্ত্রণায় ছটফট করছেন বাবা হারা এই শিক্ষার্থী।

সাকিব বলেন, ওই দিন পুলিশের ছোড়া প্রথম গুলির শিকার আমি। এরপর অন্যান্যরা। তিনি আরো বলেন, দেশের চিকিৎসা শেষ। মা ও ভাই ঋণ করে দেড় লাখ টাকার যোগান দিয়ে ঢাকায় চিকিৎসা করেছেন। এখনতো সব শেষ। চোখটিও ভালো হলো না। কিছুই দেখতে পারি না। আর হয়তো ক্রিকেট মাঠে বল হাতে ফিরতে পারবো না। এমন কথায় বলতেই কেঁদে ফেলেন তিনি।

মা আছিয়া খাতুন বলেন, সে সবাইকে ফাঁকি দিয়ে আন্দোলনে গেছে। পরে জানতে পারি তার বাঁ চোখে গুলি লেগেছে। এখন অনেক ঋণ করে চিকিৎসা করলাম। তাও সুস্থ হলো না। এখন কী করব? বলে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

সাকিবকে সুস্থ করার জন্য দেশের ক্রীড়া বোর্ডসহ সবার কাছে আর্থিক সহায়তা কামনা করেন মা আছিয়া খাতুন।