আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য, ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাছাড়া ইবির ২ শিক্ষার্থী

আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য, ধাওয়া খেয়ে ক্যাম্পাছাড়া ইবির ২ শিক্ষার্থী

ছবি: প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন নিয়ে নেতিবাচক মন্তব্য করায় দুই শিক্ষার্থীকে মারধর করে ক্যাম্পাসছাড়া করেছে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। রোববার রাত সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের লালন শাহ হল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। ক্যাম্পাসছাড়া শিক্ষার্থীরা লোক প্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আহসানুল্লাহ অলি এবং ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের নাফিজ ইকবাল।

জানা গেছে, রোববার সকালে লালন শাহ হলের গণরুম সম্পূর্ণভাবে বাতিল ঘোষণা করে জরুরী নোটিশ দেয় হল প্রশাসন। নোটিশ অনুযায়ী হলে অনাবাসিক শিক্ষার্থী এবং প্রত্যেক রুমে সিট সংখ্যার অতিরিক্ত ছাত্র না রাখার বিষয়েও হল প্রশাসনের সিদ্ধান্ত জানানো হয়। এমতবস্থায় আগে থেকে গণরুমে অবস্থান করা শিক্ষার্থীদের আবাসনের বিষয়ে করণীয় নির্ধারণে শিক্ষার্থীদের নিয়ে হলের টিভি রুমে মিটিং ডাকা হয়। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, মিটিংয়ে অলি আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে। এছাড়া তিনি তার বক্তব্যে আন্দোলনের সহ-সমন্বয়ক হাসানুল বান্না সহ অন্যান্য সম্বয়কদের নিয়েও ব্যক্তিগত আক্রমণ করেন। মন্তব্যের ফলে তাৎক্ষণিক শিক্ষার্থীরা ক্ষুব্ধ হয় ও তাকে মারধর করতে শুরু করে। এতে সে দৌড়ে পালিয়ে যায়। এর কিছুক্ষণ পর টিভি রুমে তার পক্ষ নেওয়ার কারণে নাফিজকেও ধাওয়া দিয়ে ক্যাম্পাস ছাড়া করে শিক্ষার্থীরা।

শিক্ষার্থীদের দাবি, তারা হলে একটা গ্রুপকে আন্দোলকারীদের বিরুদ্ধে সংগঠিত করার চেষ্টা করছিল। সর্বশেষ মিটিংয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে তারা। তারা পূর্বে ছাত্রলীগ এবং মাদকের সাথে জড়িত ছিল। 

শিক্ষার্থীরা বলেন, জুলাই ও আগস্টের পুরো সময় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করেছে। কিন্তু অলি তার বক্তব্যে দাবি করে ১৭ জুলাই হল বন্ধের পর ক্যাম্পাসে তেমন কোন আন্দোলনই হয়নি। এছাড়া আন্দোলনকারী ও সমন্বয়কদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর নানা মন্তব্য করে। আন্দোলন নিয়ে যে মন্তব্য করা হয়েছে এটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারীদের আঘাত করেছে। সে আন্দোলনকে ছোট ও বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছে। যা কোনভাবেই মানা যায় না। ইবি ক্যাম্পাসে কোনো মাদকাসক্ত এবং ছাত্রলীগের জায়গা হবে না।

এদিকে ঘটনার বিষয়ে আহসানুল্লাহ অলি বলেন, মিটিংয়ে আমি বলেছিলাম আন্দোলনকারীরা ছাত্রদের ফেইসবুক পোস্টের উপর ভিত্তি করে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে হল থেকে নামিয়ে দিচ্ছে। অথচ হাসানুল বান্না নামের একজন আন্দোলনকারীও বিভিন্ন সময় ফেইসবুকে শেখ হাসিনা, বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামী সরকারের উন্নয়ন নিয়ে পোস্ট করেছেন। সেজন্য কি আমরা তাকেও ছাত্রলীগ বলবো নাকি। আর আন্দোলনের বিষয়ে বলেছি, হল বন্ধ হওয়ার পর থেকে ইবিতে আন্দোলনের গতি কমে যায়। পরে শেষে ২ তারিখে আমাদের মতিন স্যার যখন যোগ দেয় তখন আবার আন্দোলনটা বেগবান হয়। আমি তাদেরকে যেটা বুঝাতে চেয়েছি তারা তার উল্টোটা বুঝে ছাত্রলীগ ট্যাগ দিয়ে আমাকে মারধর করে বের করে দেয়।

এ বিষয়ে নাফিজ বলেন, আমি সেখানে দুইপক্ষকেই শান্ত করার চেষ্টা করেছি। ওখানে যে পরিস্থিতি হয়েছিলো আমাদের দুজনকে মেরেই ফেলতো। জান নিয়ে বের হইছি। আমি মীমাংসা করতে গেছিলাম। কিন্তু তারা ছাত্রলীগ ট্যাগ নিয়ে আমাকে বের করে দেয়। আমি জীবনে ছাত্রলীগ করেছি কেউ সেটা প্রমাণ করতে পারবে না। আন্দোলনে থেকে টিয়ারসেলের গুলি খেয়ে দেশ স্বাধীন তো আমরাও করেছি। কিন্তু তুচ্ছ বিষয়ে এভাবে ছাত্রলীগ বলে মিথ্যা অপবাদ দিলে আমরা কোথায় যাবো।

এদিকে আহসানুল্লাহ অলির করা অভিযোগ নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী হাসানুল বান্না বলেন, ‘জানা-অজানা তথ্য’ নামের আমাদের একটি ফেসবুক গ্রুপ আছে। যেখানে চাকরির প্রস্তুতির লক্ষ্যে সরকারের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও প্রকল্পের তথ্য শেয়ার করা হতো। এটিকে সে স্বৈরাচার শেখ হাসিনা সরকারের ইতিবাচক প্রচার বলে দাবি করে, যা একদমই হাস্যকর। আমি আন্দোলনের শেষ পর্যন্ত সক্রিয়ভাবে সামনের সারিতে ছিলাম। যা সবাই দেখেছে। সেখানে সে পড়াশুনার ওই বিষয় নিয়ে সবার কাছে আন্দোলনকারী হিসেবে আমাকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করে। একইসঙ্গে সে সমন্বয়ক ও ছাত্র আন্দোলন নিয়েও বিতর্কিত মন্তব্য করে। আন্দোলনকে নিয়ে তার বিতর্কিত বক্তব্য আমাদের প্রচণ্ড আঘাত করেছে। হলের শিক্ষার্থীরাও এটি মেনে নিতে পারে নাই। কারণ, যারা পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবির সামনে জীবন বাজি রেখে আন্দোলন চলমান রেখেছিল। তাদেরকে সে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ফলে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা তার ওপর চড়াও হয়।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন ইবির  সহ-সমন্বয়ক নাহিদ হাসান বলেন, অলি নামের একজন যে আগে ছাত্রলীগকর্মী ছিল, সে শিক্ষার্থীদের সামনে আন্দোলন নিয়ে বিতর্কিত মন্তব্য করে। ছাত্র আন্দোলনের বিপক্ষে মন্তব্যের প্রেক্ষিতে হলের শিক্ষার্থীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। পরে বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীদের তোপের মুখে সে হল ছেড়ে পালিয়ে যায়।

তিনি আরও বলেন, আন্দোলন পরবর্তী প্রশাসন শূন্য ক্যাম্পাসকে আমরা শান্তিপূর্ণ রাখতে চেষ্টা করছি। কিন্তু একটি গ্রুপ ছাত্রলীগের বি টিম হয়ে প্রতিনিয়ত বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির চেষ্টা করে যাচ্ছে। আমরা এগুলোকে কোনভাবেই বরদাস্ত করব না। বিশেষ করে আন্দোলন ও আন্দোলনের ফলকে কেউ বিতর্কিত করার চেষ্টা করলে এটি কোনভাবেই মেনে নেওয়া হবে না।

লালন শাহ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. আকতার হোসেন বলেন, গণরুমে র‌্যাগিংসহ বিভিন্ন ধরণের ঘটনার কারণে আমাদের আগে থেকেই গণরুম বাতিলের চিন্তা ছিল। আমরা নোটিশ দিয়ে গণরুম বাতিল করেছি। এ নিয়ে আমার কাছে কেউ কোন কথা বলেনি। এছাড়া রাতে ছাত্রদের মধ্যে যে  ঘটনা ঘটেছে তা নিয়েও কেউ অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে আমরা বিষয়টি খতিয়ে দেখব।