ভারতীয় জাতিসত্বা, বাবরি থেকে রাম!

ভারতীয় জাতিসত্বা, বাবরি থেকে রাম!

ছবিঃ আবু জাফর

সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ভারতে হিন্দু, মুসলিম, বৌদ্ধ, শিখ সহ নানা জাত নানা ধর্মের মানুষকে বসবাস! এই ভারতবর্ষ স্বাধীনে সবারই রয়েছে কম-বেশি অবদান। অনেক হাঁড়ি-পাতিল এক সাথে যেমন টুকটাক আওয়াজ হওয়াটা দোষের নয়, ঠিক তেমনি দোষ হল অতি টুকটাকে পাতিল ভেঙে যাওয়া! আজকের ভারতে আমরা সে ভেঙে যাওয়ার শব্দ ই শুনছি। প্রায় ৩৩ বছর আগে গুড়িয়ে দেয়া এক ধর্মীয় স্থানেই গোরপত্তন হচ্ছে আরেক ধর্মীয় স্থানের! সবকিছু ঠিক থাকলে ভারতের অযোধ্যায় বহুল আলোচিত বাবরি মসজিদের জায়গায় রাম মন্দির নির্মাণ শুরু হচ্ছে আজ। দ্য হিন্দুর খবরে বলা হয়েছে, মন্দির নির্মাণে নরেন্দ্র মোদি ঘোষিত ট্রাস্টের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রথমে শিবের আরাধনা হবে। তারপর শুরু হবে মন্দির নির্মাণের কাজ।২০১৯ সালের নভেম্বর মাসে এ বিতর্কিত জায়গায় রাম মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দেয় ভারতের সুপ্রিমকোর্ট। তবে তার বদলে মুসলিম পক্ষকে মসজিদ তৈরির জন্য ৫ একর জমি দেয়ার নিছক সান্ত্বনা দেয় সুপ্রিমকোর্ট! চলুন একটু পিছনে ফিরি, সময়টা ১৫২৮ সাল, কিছু হিন্দুদের মতে, হিন্দুধর্মের অন্যতম আরাধ্য দেবতা রাম যেখানে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন সেখানে একটি মসজিদ তৈরি করা হয়। এর ২১ বছর পর ১৯৪৯ সালে বাবরি মসজিদের ভেতরই প্রথম ইশ্বর রামের মূর্তি দেখা যায়। মুসলিমরা প্রতিবাদে ফুঁসে উঠে ও সরকার ঐ চত্বরকে বিতর্কিত জায়গা বলে ঘোষণা দেয় এবং দরজা বন্ধ করে দেয়। এর ৩৫ বছর পর ১৯৮৪ সালে (ভিএইচপি) নেতৃত্বে ইশ্বর রামের জন্মস্থান উদ্ধার এবং তার সম্মানের একটি মন্দির প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে হিন্দুরা। এর দুই বছর পর জেলার বিচারক আদেশ দেন যেন বিতর্কিত মসজিদের দরজা উন্মুক্ত করে দিয়ে হিন্দুদের সেখানে উপাসনার সুযোগ দেয়া হয়। মুসলিমরা এর প্রতিবাদে বাবরি মসজিদ অ্যাকশন কমিটি গঠন করে। ১৯৮৯ সালে বিতর্কিত মসজিদ সংলগ্ন জায়গায় রাম মন্দিরের ভিত্তি স্থাপান করে নতুন প্রচারণা শুরু করে ভিএইচপি। ১৯৯২ সালে ক্ষমতাসীন বিজেপির সাথে মিলে গুড়িয়ে দেয়া হয় মুসলিমদের শত বছরের ঐতিহাসিক মসজিদকে। আর তাতে সারা ভারতে হিন্দু -মুসলিম দাঙ্গায় মারা যায় প্রায় ২০০০ ভারতীয়! ২০০১ সালে আবারও ঐ স্থানে মন্দির তৈরির দাবি তোলে ভিএইচপি। পরের বছরই শত শত স্বেচ্ছাসেবক বিতর্কিত স্থানে জড়ো হয় ও সেখান থেকে ফিরতে থাকা হিন্দু অ্যাক্টিভিস্টদের বহনকারী একটি ট্রেনে হামলার ঘটনায় অন্তত ৫৮ জন মারা যায়। এর জের ধরে গুজরাটে হওয়া দাঙ্গায় আবারও প্রায় ২ হাজার মানুষ মারা যায়। ২০০৩ সালে ঐ স্থানে ইশ্বর রামের মন্দিরের নিদর্শন আছে কিনা, তা যাচাই করতে আদালতের নির্দেশে নৃতত্ববিদরা জরিপ শুরু করেন। নভেম্বর ২০১৯ জায়গাটি মন্দির তৈরির পক্ষেই চূড়ান্ত রায় দিয়েছে ভারতের সুপ্রিম কোর্ট! অযোধ্যা জেলা সদর দফতর থেকে ১৮ কিলোমিটার দূরে ধন্নিপুর গ্রামে মসজিদের জন্য পাচ একর যায়গা দিতে বললে বিভিন্ন মুসলিম সংগঠন এর প্রতিবাদ করে। ভারতে মুসলিমদের সবচেয়ে প্রভাবশালী সংগঠন অল ইন্ডিয়া মুসলিম পার্সোনাল ল বোর্ডের সিনিয়র সদস্য কামাল ফারুকিও বলেছেন, "এমন কী তাজমহল চত্বরের ভেতরে জমি দিলেও তা নেওয়া ঠিক হবে না। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির এমন অবনতি হলে খুব দ্রুতই সারা পৃথিবীতে ভারতের সুনাম ক্ষুন্ন হবে। ইতিমধ্যেই কানাডা, মধ্যে প্রাচ্যের বহুদেশ উগ্র হিন্দুদের ভারতে পাঠিয়ে দেয়ার খবর এসেছে!

আবু জাফর

বাংলা বিভাগ, কুবি।