আদ্-দ্বীন: ছিন্নমূলদের আশ্রায়ন কর্মসূচি
আদ্-দ্বীন থেকে প্রাপ্তআশ্রায়ন সহায়তা
মো. ইকবাল হোসেন : শিক্ষার বাতিঘর আদ্-দ্বীন সমাজের পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও জীবন জীবিকার মানের উন্নতিকল্পে ১৯৮০ সাল হতে কাজ করে আসছে। শুরুটা হয়েছিল যশোরে একটি এতিমখানা দিয়ে। নাম ছিল আদ্-দ্বীন শিশু কিশোর নিকেতন। শুরু করেছিলেন বিশিষ্ট শিল্পপতি সেখ আকিজ উদ্দীন (১৯২৯ ইং - ২০০৪ইং) ও জাতীয়পদকপ্রাপ্ত অধ্যাপক শরিফ হোসেন (১৯৩৪ ইং--২০০৭ইং)। পরে প্রতিষ্ঠানটির হাল ধরেন সেখ আকিজ উদ্দীনের বড় ছেলে ও অধ্যাপক শরীফ হোসেনের বড় জামাতা ডা. শেখ মহিউদ্দীন।এতিম খানার আঁতুড়ঘর পেরিয়ে সুদীর্ঘ ক্লান্তিহীন পথচলায় আদ্- দ্বীন হাসপাতাল এখন সিঙ্গাপুর টু নয়াদিল্লীর মধ্যে সবথেকে বড় হাসপাতাল যা গরিবের হাসপাতাল নামে সারাদেশে পরিচিত ও সমাদৃত।
সুদীর্ঘ পথপরিক্রমায় বিশ্বায়ন উন্নতির পাশাপাশি দেশের ও উন্নতি হয়েছে প্রায় সকল সেক্টরে।গ্রাম গঞ্জে সারিসারি মাটিরঘর,সন্ধ্যা নামলেই ঘুটঘুটে অন্ধকার, ঘরে ঘরে হারিকেনের/কূপের আলো এখন প্রায় অনেকটা রুপকথার মত।
কিন্তু, তারপরও, প্রবাদ বাক্যের মত "কুপের নিচেই অন্ধকার থাকে" বলে কিছু কথা থেকে যায়। খুব কম হলেও সমাজে এমন কিছু মানুষ এখনও আছে যারা বিশেষ কোন কারনে হয়তো অনেক পিছিয়ে পড়েছেন। হয়েছেন একেবারেই নিঃস্ব,সহায় সম্বলহীন,ছিন্নমূল। জীবন সাহাহ্নে এসে একটু রাতে ঘুমানোর মত পরিবেশও নেই। থাকেন বাঁশের কুঞ্চির বেড়া, পলিথিন দিয়ে ছাওয়া ঝুঁপড়ি ঘরের ভিতর। একটু বর্ষা হলেই যা ভিজে স্যাৎসিতে হয়ে যায়।
এমন পরিবার নিয়ে সরকারও প্রতিবছর ব্যাপক আশ্রায়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছেন।
কিন্তু, আদ্-দ্বীনের দৃষ্টিটা অন্য জায়গায়।যার হয়তো একটু ঘর তোলার মত জায়গা আছে কিংবা কেউ হয়তো জায়গা দিবে এমন ছিন্নমূল দের সহায়তা দেয়া যাতে সে আজন্ম বেড়ে ওঠা পরিবেশেই জীবনের বাকী দিন গুলো কাটিয়ে দিতে পারে। কেবল থাকার জন্য তাকে নতুন কোন পরিবেশে নতুনভাবে খাপ খাওয়ানো না লাগে। আর সরকার তাদের আশ্রায়ন সুবিধা দিলেও তারা যেতে পারবেনা। কারন, তাদের বাসস্থান সমস্যার পাশাপাশি খাবারের সংকট,রোগে শোকে চিকিৎসার সংকট, বার্ধ্যে চলাফেরার সংকটসহ নানাবিধ সংকট বিদ্যমান।
বিষয়টি, আদ্-দ্বীনের নির্বাহী পরিচালক আজন্ম সমাজ কর্মী ডা. শেখ মহিউদ্দীনকে ব্যথিত করে। তিনি উদৌগ নেন আদ্-দ্বীনের কর্মএলাকার মধ্যে এধরনের কোন মানুষ থাকবেনা যাদের মানবমর্যাদার ন্যুনতম কোন বাসস্থান থাকবেনা। শুরু করেন ২০০৫ইং হতে ব্যক্তিগত উদৌগে ছিন্নমূল আশ্রায়ন প্রকল্প। প্রতিবছর ৫০ টির অধিক ঘর করে দিতেন। ২০১৬ ইং সাল হতে এটি বৃহত কর্মসূচি হিসাবে আদ্-দ্বীন ওয়েল ফেয়ার সেন্টারের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এখন প্রতিবছর শত শত পরিবারকে আশ্রায়ন সুবিধা দেয়া হয়।
স্বরেজমিনে কুষ্টিয়া জেলার সদর উপজেলার ঝাউদিয়া ইউনিয়নের আস্তানগর গ্রামের আশ্রায়ন সহায়তা প্রাপ্ত নাকেলা খাতুনেরে সাথে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। তিনি এক আবেকতাড়িত হয়ে কান্নাজড়িত কণ্ঠে এক অভুতপূর্ব অনুভুতি ব্যক্ত করতে যেয়ে শুধু এতটুকুই বলতে পারেন" আল্লাহ আদ্-দ্বীনের মত প্রতিষ্ঠানের বরকত বাড়িয়ে দিন।আমার আগে থাকতে খুব কষ্ট হতো। একটু পানি হলেই কাঁথা- বালিশ ভিজে যেত। খুব কষ্টে রাত পার করতাম। আদ্-দ্বীন আমার ঘর করে দিয়েছে, পায়খানা করে দিয়েছে। এখন আমার আর কোন কষ্ট হয়না।
এ বিষয়ে আদ্-দ্বীন ওয়েলফেয়ার সেন্টার এর পরিচালক জনাব মো. ফজলুল হক এর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, "আদ্-দ্বীনের আজিবন খাদ্য সহায়তা কর্মসূচি, মেধাবীদের বৃত্তি প্রদান কর্মসূচি, সদস্য পরিবারের স্বাস্থ্য সহায়তা কর্মসূচির মত অসংখ্য মানবিক কর্মসূচির মধ্যে ছিন্নমূল আশ্রায়ন কর্মসূচি একটি। এ কর্মসূচির বিশেষত্ব হলো এটা আদ্-দ্বীনের কোন সদস্য পরিবার হতে পারবেনা। সংশ্লিষ্ট কর্মএলাকার কর্মিবাহিনী দিয়ে এমন সুক্ষভাবে যাচাই বাছাই করা হয় যাতে এবিষয়ে কেউ অভিযোগ তুলতে না পারে। ২০১৬ ইং সাল হতে এপর্যন্ত প্রতিটা ঘরের পেছনে প্রায় ৫৫-৬০ হাজার টাকা হিসাবে খরচ করা হয়েছে। জিনিসপত্রের দাম বিবেচনা করে ঐ একই রকমের ঘরের বাজেট এবছর ধরা হয়েছে ৬০০০০/।
তিনি আরো জানান, চলতি মাসেই আমরা কাজ শুরু করবো ইন শা আল্লাহ। প্রতি বছরের ন্যায় এবছর ও ঘর করা হবে ১৯০ থেকে ২০০ টির মত। মোট প্রাক্কলিত বাজেট ১ কোটি বিশ লক্ষ টাকার মত/।
প্রতিবেদকের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি মতামত দেন,"অন্যান্য সংস্থা এমনকি বিশেষ ব্যক্তিবর্গ এধরনের কাজে উদ্বুদ্ধ হয়ে এগিয়ে আসলে দেশের ছিন্নমূল দের আবাসনের দুর্দশা আরো দ্রুত লাঘব হতো"