নবীজী (সা:)-এর প্রতি ভালোবাসা প্রসঙ্গে
ছবিঃ সংগৃহিত।
নবীজীর (সা.) ভালবাসার প্রসঙ্গে হাদিসে একটি চমৎকার ঘটনা বর্ণিত হয়েছে। এক সাহাবী রাসূল (সা.) কে জিজ্ঞাসা করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.) কিয়ামত কবে হবে? নবীজী (সা.) পাল্টা প্রশ্ন করলেন, কিয়ামতের জন্য কী প্রস্তুতি নিয়েছ? সাহাবী জবাব দিলেন আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) ভালবাসা। তখন নবীজী (সা.) বললেন, “নিশ্চয় যাকে তুমি ভালবাস কিয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবে”। আনাস (রা.) বলেন, “ইসলাম গ্রহণের পর আমাদের কাছে সবচেয়ে খুশির বিষয় ছিল নবীজীর (সা.) এই কথা; “নিশ্চয় তুমি যাকে ভালবাস কিয়ামতের দিন তার সাথেই থাকবে”। আর আমি আল্লাহ ও তার রাসূল (সা.) কে ভালবাসি সাথে আবু বকর ও ওমর (রা.) কেও। তাই আশা রাখি আখিরাতে আমি তাদের সাথেই থাকব। যদিও তাদেরমত আমল আমি করতে পারিনি”-সহিহ মুসলিম; ২৬৩৯।
হুব্বে রাসূল (সা.) ঈমানের রূহ। মু’মিনের জীবনের অন্যতম লক্ষ্য। নবীজীর (সা.) ইশক ও মহব্বত ছাড়া ঈমানের পূর্ণতা আসে না। নিছক ভালবাসাই যথেষ্ট নয় বরং পার্থিব সমস্ত কিছুর ওপর এই ভালবাসাকে প্রাধান্য দিতে হবে। আব্দুল্লাহ ইবনে হিশাম থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, “ একদিন আমরা নবীজীর (সা.) সাথে ছিলাম। নবীজী (সা.) ওমরের (রা.) হাত ধরা ছিলেন। ওমর (রা.) বলে উঠলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (সা.)! আপনি আমার কাছে সব থেকে প্রিয় তবে আমার প্রাণ ব্যতিত। তখন নবীজী (সা.) বললেন, না ওমর হল না। যে সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার কসম! ততক্ষণ পর্যন্ত তুমি পূর্ণাঙ্গ মু’মিন হতে পারবে না যতক্ষণ না আমি তোমার কাছে তোমার প্রাণের চেয়েও প্রিয় না হই। পরক্ষণেই ওমর (রা.) বললেন, আল্লাহর কসম নবীজী (সা.) এখন থেকে আপনি আমার কাছে আমার প্রাণের চেয়েও প্রিয়। তখন নবীজী (সা.) বলেন, হ্যাঁ ওমর এখন হয়েছে”-সহিহ বুখারী; ৬৬৩২। আল্লাহ ও রাসূলের ভালবাসা যদি সবকিছুর উপরে না হয় তাহলে মু’মিন পথ চলবে কীভাবে? আজ বাধাঁ হবে সন্তান। কাল স্ত্রী। পরশু পিতা-মাতা। কখনো রাজনৈতিক দল। কখনো নেতা-কর্মী। কখনো বাধাঁ হবে ক্ষমতা। কখনো সম্পদের মায়া। কখনো জীবনের মায়া। আর মু’মিনতো হল সেই; যে আল্লাহ ও তার রাসূলের (সা.) মহব্বতে সবকিছু বির্সজন দিতে প্রস্তুত। উহুদ যুদ্ধের ঘটনা রাসূল (সা.) এক নারীর পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন যার স্বামী ও ভাই উহুদ যুদ্ধে শহীদ হয়েছেন। লোকেরা যখন তাকে সমবেদনা জানাতে গেল তখন তিনি জানতে চাইলেন নবীজী (সা.) কেমন আছেন? তারা বলল, নবীজী (সা.) ভালো আছেন, আলহামদুলিল্লাহ। তাতেও তার মন শান্ত হল না। বললেন তবুও আমি নিজে দেখতে চাই। অতপর যখন নবীজী (সা.) কে দেখানো হল তখন তিনি শান্ত হলেন এবং বললেন, আল্লাহর রাসূল (সা.) আপনি নিরাপদে আছেন। আপনার নিরাপত্তার পরে সমস্ত বিপদ তুচ্ছ। (সীরাতে ইবনে হিশাম)।