কোন মসজিদে নামাজ পড়লে কত সওয়াব
ছবি: সংগৃহীত
জামাতে নামাজ পড়ার অনেক ফজিলত রয়েছে। তবে সব মসজিদে নামাজের সওয়াব একরকম নয়। একেক মসজিদে নামাজের সওয়াব একেক রকম। মসজিদে হারাম, মসজিদে নববি ও মসজিদে আকসায় নামাজের আলাদা ফজিলত বর্ণিত হয়েছে হাদিসে। নিচে বিভিন্ন মসজিদে নামাজের আলাদা ফজিলত তুলে ধরা হলো।
১. মসজিদে হারামে নামাজ পড়ার ফজিলত
জাবির (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মাসজিদুল হারাম ছাড়া অপরাপর মসজিদের নামাজ অপেক্ষা আমার মসজিদের নামাজ হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ (ফজিলতপূর্ণ)। আর অন্যান্য মসজিদের নামাজের তুলনায় মাসজিদুল হারামের নামাজ এক লাখ গুণ উত্তম। (মুসনাদে আহমদ: ১৪২৮৪, ১৪৮৪৭; ইবনে মাজাহ ১৪০৬)
২. মসজিদে নববিতে নামাজ পড়ার ফজিলত
আবু হুরায়রা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, মাসজিদুল হারাম ছাড়া অন্যান্য মসজিদে পড়া নামাজের তুলনায় আমার এ মসজিদে পড়া নামাজ হাজার গুণ শ্রেষ্ঠ।’ (বুখারি: ১১৯০, মুসলিম: ১৩৯১-৪, তিরমিজি: ৩২৫, নাসায়ি: ৬৯৪, ২৮৯৯; মুসনাদে আহমদ: ৭২১২, ৭৩৬৭, ৭৪৩২, ৭৬৭৬, ৭৬৮১, ৭৮৮৫, ৯৬৮০, ৯৭০১, ৯৭৬২, ৯৯০৫, ৯৯২৬, ১০০৯৭; মুয়াত্তা মালিক: ৪৬১, দারেমি: ১৪১৮)
৩. মসজিদে আকসায় নামাজ পড়ার ফজিলত
আবু দারদা (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘মসজিদুল হারামে একটি নামাজ একলাখ নামাজের সমতুল্য এবং আমার মসজিদে একটি নামাজ এক হাজার নামাজের সমতুল্য এবং মসজিদুল আকসায় একটি নামাজ পাঁচশত নামাজের সমতুল্য। (ইবনে খুজাইমা: ২৬৮) হাদিসের অপর এক বর্ণনায় এসেছে, ‘মসজিদুল আকসায় নামাজ আদায় জীবনের সব গুনাহ মাফের মাধ্যম।’ (ইবনু মাজাহ: ১৪০৮, আত-তারগিব: ১৭৭৮)
৪. মসজিদে কুবায় নামাজ পড়ার ফজিলত
সাহল ইবনু হুনাইফ (রা.) বর্ণনা করেছেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেন, যে ব্যক্তি নিজের বাড়িতে পবিত্রতা অর্জন করলো অর্থাৎ অজু করলো, এরপর মসজিদে কোবায় এসে নামাজ আদায় করলো, তার জন্য একটি ওমরার সমান সওয়াব রয়েছে।’ (ইবনু মাজাহ: ১৪১২; নাসায়ি: ৬৯৯, আত-তারগিব: ১১৮১) অপর এক বর্ণনায় ইবনে ওমর (রা.) বর্ণনা করেছেন, নবীজি (স.) প্রতি শনিবার মসজিদে কুবায় আসতেন। কখনও পায়ে হেঁটে, কখনও সাওয়ারিতে চড়ে। হজরত আব্দুল্লাহ ইবনু ওমর (রা.)-ও ওইরূপ করতেন। (বুখারি: ১১৯৩) অন্য এক বর্ণনায় এসেছে, রাসুলুল্লাহ (স.) (মসজিদে কোবায়) এসে দু’রাকাত নামাজ আদায় করতেন। (বুখারি: ১১৯৪)
৫. মসজিদ নামাজ পড়ার ফজিলত
একাকী নামাজ পড়ার চেয়ে মসজিদে জামাতে সালাত আদায় করা বেশি ফজিলতপূর্ণ। ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, জামাতে সালাত আদায়ের ফজিলত একাকী সালাত আদায় অপেক্ষা ২৫ গুণ বেশি। যদি লোকসংখ্যা বেশি হয়, তাহলে মসজিদে যে পরিমাণ লোক থাকবে ততগুণ বেশি সওয়াব পাবে। একজন লোক জিজ্ঞেস করল, যদি লোকসংখ্যা ১০ হাজার হয়? তিনি বলেন, হ্যাঁ, ৪০ হাজার হলেও। (ইবনু আবি শায়বা: ৮৪৮৫) অন্য হাদিসে এসেছে, আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘জামাতে সালাতের ফজিলত একাকী আদায়কৃত সালাতের চেয়ে ২৭ গুণ বেশি।’ (বুখারি: ৬৪৫)
শুধু তা-ই নয়, যারা হেঁটে মসজিদে গমন করে, মহান আল্লাহ প্রতি কদমের বিনিময়ে তাদের জন্য সওয়াব লিপিবদ্ধ করেন। প্রতি কদমে কদমে তাদের পাপ ঝরে যায়। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, যে ব্যক্তি বাড়ি থেকে পাক-পবিত্র হয়ে (অজু করে) তারপর কোনো ফরজ নামাজ আদায় করার জন্য হেঁটে আল্লাহর কোনো ঘরে (মসজিদে) যায় তার প্রতিটি পদক্ষেপের একটি পাপ ঝরে পড়ে এবং অপরটিতে মর্যাদা বৃদ্ধিপ্রাপ্ত হয়।’ (মুসলিম: ১৪০৭)
একজন মুসলমানের ওপর পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়া ফরজ। পাশাপাশি আল্লাহ তাআলা আমাদের আদেশ করেছেন জামাতের সঙ্গে নামাজ আদায়ের জন্য। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা: ৪৩) তাই মুমিন মুসলমানের উচিত- মসজিদে গিয়ে জামাতে নামাজ পড়া। আল্লাহ তাআলা আমাদের সবাইকে সেই তাওফিক দান করুন। আমিন।