আরও পরিষেবার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল

আরও পরিষেবার সঙ্গে সংযুক্ত করা হবে ট্যাক্স রিটার্ন দাখিল

ছবি: সংগৃহীত

করজাল সম্প্রসারণের পাশাপাশি রাজস্ব আদায় বাড়াতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে পিএসআর দাখিল (আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণ) নিশ্চিতের ওপর অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)।

সম্প্রতি এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান এ বিষয়ে একটি সভা করেছেন। সেখানে তিনি কর্মকর্তাদের এ বিষয়ে আরও সক্রিয় হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।

এনবিআরের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন ও সরকারি কোষাগার সংগ্রহের জন্য ৪৩টি সেবার জন্য এখন আয়কর রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।

সভার তথ্য অনুযায়ী, এনবিআর চেয়ারম্যান মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সংশ্লিষ্ট সেবায় পিএসআর দাখিল নিশ্চিত করতে বলেন।

সম্প্রতি আব্দুর রহমান খান রিপোর্টারদের ব্রিফিংয়ের সময় বলেন, যদি মাঠ প্রশাসন এটিকে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারে, তবে তা রাজস্ব বোর্ডের জন্য ট্যাক্স নেট সম্প্রসারণ ও ট্যাক্স সংগ্রহ বাড়াতে কাজে লাগবে। রাজউক, সিডিএ, কেডিএ, আরডিএসহ অন্যদের অধীন যেকোনো ভবন নির্মাণের জন্য পিএসআর দাখিল বাধ্যতামূলক। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম ঠিকমতো মানছে কি না, তা দেখার জন্য আমরা সেখানে পরিদর্শক পাঠাতে পারি।

সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিয়ম না মানলে এনবিআর তাদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করবে উল্লেখ করে এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, এরপর আমরা তাদের বোঝানোর জন্য আমাদের দল সেখানে পাঠাব এবং শেষ পর্যন্ত আমরা সংশ্লিষ্ট আইনগুলো বাস্তবায়ন করব। এটি বাধ্যতামূলক করা হবে এবং তা মানলে আর্থিক জরিমানা হবে।

তালিকাভুক্ত প্রতিটি সেবায় পিএসআর দাখিল যথাযথভাবে অনুসরণ করা হলে, টিআইএনধারী ও আয়কর রিটার্ন দাখিলের সংখ্যা বাড়ানো সম্ভব হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে চেয়ারম্যান আরও বলেন, দেশের ট্যাক্স নেটের পরিসর খুবই ছোট হওয়ায় অল্প পরিমাণ কর আদায় হচ্ছে। আমরা যদি পিএসআর দাখিল নিশ্চিত করতে পারি, তবে এটি নিয়মিত করদাতাদের উপরও চাপ সৃষ্টি করতে সহায়তা করবে।

এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, ট্যাক্স নেট সম্প্রসারণের মাধ্যমে নিয়মিত করদাতাদের সুবিধা দেওয়া তার প্রতিষ্ঠানটির জন্য সহজ হবে। বর্তমানে দেশে কর-জিডিপি অনুপাত মাত্র ৭.৩ শতাংশ, যেখানে ভারতে এটি ১২ শতাংশ, নেপালে ১৭.৫ শতাংশ, ভুটানে ১২.৩ শতাংশ এবং পাকিস্তানে ৭.৫ শতাংশ। দেশে করদাতা হিসেবে নথিভুক্ত হয়েছে মাত্র ৫.২ শতাংশ মানুষ, যেখানে ভারতে এই হার ২৩ দশমিক ০৮ শতাংশ।

বর্তমানে ই-টিআইএন নিবন্ধিত করদাতার সংখ্যা ১ কোটি ছাড়িয়েছে। গত অর্থবছরের এপ্রিল পর্যন্ত  ৪১ লাখ কর রিটার্ন পেয়েছে এনবিআর। এর মধ্যে  ব্যক্তিগত করদাতার সংখ্যাই বেশি। এটি ২০২৩-২৪ অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় ২৭ শতাংশ বেশি।

বর্তমানে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের আদায় করা মোট রাজস্বের প্রায় ৩৩ শতাংশ আসে আয়করের মাধ্যমে। আয়কর আদায়ে গড় প্রবৃদ্ধি ১৬ শতাংশের বেশি।

পিএসআর প্রয়োজন এমন পরিষেবাগুলো হলো:

১. ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ২০ লাখ টাকার বেশি ঋণের জন্য আবেদন করা।

২. কোনো কোম্পানির পরিচালক বা স্পন্সর শেয়ারহোল্ডার হওয়া।

৩. আমদানি নিবন্ধন সনদ বা রপ্তানি নিবন্ধন সনদ প্রাপ্তি বা অব্যাহত রাখা।

৪. সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার এলাকায় ট্রেড লাইসেন্স প্রাপ্তি বা নবায়নের ক্ষেত্রে।

৫. যেকোনো সমবায় সমিতির নিবন্ধন প্রাপ্তির ক্ষেত্রে।

৬. সাধারণ বিমার সার্ভেয়ার হিসেবে লাইসেন্স বা তালিকাভুক্তি প্রাপ্তি বা নবায়নের ক্ষেত্রে।

৭. কোনো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা বা জেলা সদর বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডের পৌরসভার অভ্যন্তরে অবস্থিত জমি, ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট, যেখানে দলিল মূল্য ১০ লাখ টাকার বেশি হয়, সেক্ষেত্রে বাসিন্দা কর্তৃক হস্তান্তর, বায়নানামা বা পাওয়ার অব অ্যাটর্নি অথবা জমি, ভবন বা অ্যাপার্টমেন্ট বিক্রির রেজিস্ট্রি গ্রহণণের ক্ষেত্রে।

8. একটি ক্রেডিট কার্ড প্রাপ্ত বা রক্ষণাবেক্ষণের জন্য।

৯. চিকিৎসক, দন্ত্য চিকিৎসক, আইনজীবী, চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্ট, কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্ট, প্রকৌশলী, স্থপতি বা সার্ভেয়ার বা অনুরূপ অন্য কোনো পেশায় পেশাগত সংস্থার সদস্যপদ অর্জন বা অব্যাহত রাখা।

১০. মুসলিম বিবাহ ও তালাক (রেজিস্ট্রেশন) আইন ১৯৭৪ (১৯৭৪ সনের এলআইআই) এর অধীনে নিকাহ রেজিস্ট্রার হিসেবে লাইসেন্স প্রাপ্তি ও বহাল রাখা।

১১. কোনো বাণিজ্য বা পেশাজীবী সংস্থার সদস্যপদ লাভ বা অব্যাহত রাখা৷

১২. ড্রাগ লাইসেন্স, ফায়ার লাইসেন্স, পরিবেশ ছাড়পত্র সনদ, বিএসটিআই লাইসেন্স ও ছাড়পত্র প্রাপ্তি বা নবায়ন।

১৩. কোনো এলাকায় গ্যাসের বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগ গ্রহণ বা অব্যাহত রাখা এবং সিটি করপোরেশন এলাকায় গ্যাসের আবাসিক সংযোগ গ্রহণ বা অব্যাহত রাখা৷

১৪. লঞ্চ, স্টিমার, ফিশিং ট্রলার, কার্গো, কোস্টার, ডাম্ব বার্জ ইত্যাদিসহ যেকোনো নৌযানের জরিপ সনদ সংগ্রহ বা অব্যাহত রাখা, ভাড়ার জন্য চলাচল

১৫. পরিস্থিতি অনুযায়ী, জেলা প্রশাসকের কার্যালয় জেলা বা পরিবেশ অধিদপ্তর কর্তৃক ইট উৎপাদনের অনুমতি বা অনুমতির নবায়ন

১৬. যেকোনো সিটি করপোরেশন, জেলা সদর বা পৌরসভায় অবস্থিত, আন্তর্জাতিক পাঠ্যক্রম বা জাতীয় পাঠ্যক্রমের ইংরেজি ভার্সন অনুযায়ী শিক্ষা প্রদানকারী ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে শিশুর বা নির্ভরশীল ব্যক্তির ভর্তি অনুমতি অর্জন

১৭. সিটি করপোরেশন বা ক্যান্টনমেন্ট বোর্ডে বিদ্যুৎ সংযোগ গ্রহণ বা অব্যাহত রাখা

১৮. কোম্পানির এজেন্সি বা ডিস্ট্রিবিউটরশিপ প্রাপ্তি বা চালু রাখা৷

১৯. অস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তি বা অব্যাহত রাখা৷

২০. আমদানির উদ্দেশ্যে ঋণপত্র (এলসি) প্রণয়ন৷

২১. ৫ লাখ টাকার বেশি পোস্টাল সেভিংস অ্যাকাউন্ট খোলা।

২২. ১০ লাখ টাকার বেশি ক্রেডিট ব্যালেন্সসহ যেকোনো প্রকার ব্যাংক হিসাব খোলা ও চালু রাখা।

২৩. ৫ লাখ টাকার অধিক সঞ্চয়পত্র (সঞ্চয়পত্র) ক্রয়।

২৪. উপজেলা, পৌরসভা, জেলা পরিষদ, সিটি করপোরেশন বা জাতীয় সংসদের যেকোনো নির্বাচনে অংশগ্রহণ

২৫. যেকোনো যৌথ অর্থনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নিতে মোটরযান, স্থান, আবাসন, বা অন্যান্য কোনো সম্পদ প্রদান।

২৬. ব্যবস্থাপনা বা প্রশাসনিক কার্যক্রমে অথবা উৎপাদন কার্যক্রমে কোনো তত্ত্বাবধায়ক অবস্থানে নিযুক্ত কোনো ব্যক্তির মাধ্যমে ‘বেতন’ হিসেবে যেকোনো পরিশোধিত আয়ের গ্রহণ।

২৭. সরকারি কর্মচারীদের বেতন-ভাতা প্রাপ্তি

২৮. মোবাইল ব্যাংকিং বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক মাধ্যমে অর্থ স্থানান্তর বা মোবাইল ফোন অ্যাকাউন্ট রিচার্জের সঙ্গে সম্পর্কিত যেকোনো কমিশন, ফি বা অন্য কোনো চার্জ গ্রহণ।

২৯. কোনো কোম্পানির কাছ থেকে কোনো পরামর্শ বা পরামর্শ সেবা, ক্যাটারিং সার্ভিস, ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট সার্ভিস, জনবল সরবরাহ বা নিরাপত্তা সেবা প্রদান বাবদ কোনো প্রকার অর্থ গ্রহণ করা।

৩০. মাসিক ১৬,০০০ টাকার অধিক পরিশোধের অর্থ এমপিওভুক্ত সরকারের কাছ থেকে গ্রহণ করতে হবে এমন বিষয়।

৩১. বিমা কোম্পানির এজেন্সি সার্টিফিকেট নিবন্ধন বা নবায়ন।

৩২. দুই ও তিন চাকার যানবাহন ব্যতীত যেকোনো প্রকার মোটরযানের নিবন্ধন, মালিকানা পরিবর্তন বা ফিটনেস নবায়ন৷

৩৩. এনজিও বিষয়ক ব্যুরো বা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির লাইসেন্সধারী ক্ষুদ্রঋণ সংস্থাকে বৈদেশিক অনুদান প্রদান।

৩৪. যেকোনো ডিজিটাল প্লাটফর্ম কর্তৃক বাংলাদেশের ভোক্তাদের কাছে যেকোনো পণ্য বা সেবা বিক্রয়।

৩৫. কোম্পানি আইন ১৯৯৪ এবং সোসাইটি রেজিস্ট্রেশন অ্যাক্ট, ১৮৬০ এর অধীন নিবন্ধিত ক্লাবের সদস্যপদের জন্য আবেদন করা।

৩৬. পণ্য সরবরাহ, চুক্তি সম্পাদন বা সেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে কোনো বাসিন্দা কর্তৃক দরপত্র দলিল দাখিল।

৩৭. কোনো কোম্পানি বা ফার্ম হতে যেকোনো ধরনের পণ্য বা সেবা গ্রহণ।

৩৮. বাংলাদেশে আমদানি বা রপ্তানির জন্য বিল অব এন্ট্রি দাখিল।

৩৯. কোনো সিটি করপোরেশন বা পৌরসভায় রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ), খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) এবং রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) বা সংশ্লিষ্ট কোনো কর্তৃপক্ষের অনুমোদন লাভের উদ্দেশ্যে ইমারত নির্মাণের পরিকল্পনা দাখিল।

৪০. দলিল লেখক, ডাকটিকিট ও কোর্ট ফি বিক্রেতাদের নিবন্ধন।

৪১. সমবায়, ট্রাস্ট, এনজিও ইত্যাদির ব্যাংক হিসাব খোলা।

৪২. সিটি করপোরেশন এলাকায় বাসা ভাড়া ও ইজারা প্রদান।

৪৩. নির্দিষ্ট সংস্থাগুলোর জন্য পণ্য সরবরাহ ও সেবা প্রদান। সূত্র: ইউএনবি