পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি

পোশাকের ক্ষেত্রে ইসলামের মূলনীতি

ফাইল ছবি

মাহবুবুর রহমান নোমানি   

পোশাক মানবজীবনের অপরিহার্য অনুষঙ্গ। পানাহারের মতো অতি প্রয়োজনীয় বস্তু। জীবনের মৌলিক অধিকার ও মনুষ্যের প্রতীক। মানুষ এবং জন্তু জানোয়ারের মাঝে বিশেষ প্রার্থক্য হয় এই পোশাক দ্বারা। পোশাক যেমন মানবদেহের সৌন্দর্য, তেমনি মানবতার বৈশিষ্ট্য। আলাহ তায়ালা কেবল মানবজাতিকেই পোশাকের নেয়ামত দান করেছেন। এ মর্মে তিনি এরশাদ করেন, “হে আদম সন্তান! আমি তোমাদের জন্যে পোশাক অবতীর্ণ করেছি, যা তোমাদের লজ্জাস্থান আবৃত করবে। আর অবতীর্ণ করেছি সাজ-সজ্জার বস্ত্র ও তাকওয়ার পোশাক, এটি সর্বোত্তম। এতে রয়েছে আলাহর কুদরতের নিদর্শন, যাতে তারা চিন্তা-ভাবনা করে।’ (সূরা আরাফ:২৬) আয়াতে তাকওয়ার পোশাককে শ্রেষ্ঠ বলা হয়েছে। কিন্তু তাকওয়ার পোশাক কোনটি? এ ব্যাপারে ওলামায়ে কেরাম বলেন, যে পোশাকের মধ্যে তাকওয়া বা খোদাভীতি প্রকাশ পাওয়া উচিত। তা এভাবে যে, পোশাকে অহংকার বা গর্বের ভঙ্গি যেন প্রকাশ না পায়। বরং নম্রতার চিহ্ন পরিদৃষ্ট হয়। 

শয়তান মানুষের চির দুশমন। সে জান্নাতে সর্বপ্রথম আদম ও হাওয়া (আ.) এর পোশাকের ওপর আক্রমণ করেছিল। ফলে তাদের দেহ থেকে জান্নাতি পোশাক খসে পড়ে যায়। এ ঘটনা কোরআনে এভাবে বিবৃত হয়েছে, 'হে আদম সন্তান! শয়তান যেন তোমাদেরকে বিভ্রান্ত না করে, যেমন সে তোমাদের পিতামাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছে। সে তাদের পোশাক খুলে দিয়েছে, যাতে তাদেরকে লজ্জাস্থান দেখিয়ে দেয়। সে এবং তার দলবল তোমাদেরকে এমনভাবে দেখে, যেখান থেকে তোমরা তাদেরকে দেখতে পাওনা। আমি শয়তানদেরকে তাদের বন্ধু করে দিয়েছি, যারা ঈমান আনে না।' (সূরা আ’রাফ-২৬-২৭)।

জান্নাতের পরিবেশে উলঙ্গপনার স্থান নেই। তাই আদম ও হাওয়াকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। যাতে করে আদম সন্তানেরা দুনিয়াতে আত্মিক ও শারীরিক পবিত্রতা অর্জন করে এবং শালীন ও তাকওয়ার পোশাক পরে পূণরায় জান্নাতের প্রবেশ করতে পারে। আর এ ব্যাপারে পথপ্রদর্শনের জন্য আলাহ তায়ালা যুগে যুগে প্রেরণ করেছেন লক্ষাধিক নবী-রাসূল। তাদের সর্বশেষে আগমন করেছেন বিশ্বনবী মুহাম্মদ (সা.)। তাঁর আনীত ধর্ম ইসলামের প্রতিটি বিধান সর্বকালের সকল মানুষের জন্য কল্যাণকর ও সমভাবে প্রযোজ্য। কেয়ামত পর্যন্ত আগত বিশ্বমানবতার জন্য এ মহান ধর্মে রয়েছে চির সুন্দর ও কল্যাণজনক সংস্কৃতি। 

পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘তোমরা আলাহর রং গ্রহণ করো। আলাহর রঙের চেয়ে উত্তম রং আর কার হতে পারে? (সূরা বাকারা: ১৩৮) আলাহর রং কি? তা রাসূলুলাহ (সা.) চলনে-বলনে আমাদের বাতলে দিয়েছেন। তিনি ইসলামের রীতি-নীতি পরিহার করে অন্য ধর্মের সংস্কৃতির গ্রহণ করতে কঠোরভাবে বারণ করেছেন। এ মর্মে ঘোষণা করেন ‘যে ব্যক্তি বিজাতীদের রীতি-নীতি গ্রহণ করবে, সে তাদের মধ্যেই গণ্য হবে। (আবুদাউদ শরিফ) এই হাদিসটি পোশাক-পরিচ্ছদের অধ্যায়ে বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং পোশাকের ক্ষেত্রেই রাসূল (সা.) এই সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। সুতরাং পোশাকের ক্ষেত্রে বিজাতীর অনুকরণ নয়।

পোশাকের ক্ষেত্রে প্রত্যেকের ব্যক্তিগত রুচি বা পছন্দ রয়েছে। তাই পোশাকে রুচি-পছন্দের ব্যাপারে ইসলাম কোনোরুপ বাধ্যবাধকতা না করলেও কতিপয় মূলনীতি দিয়েছে। যা প্রত্যেক মুসলমানকে মেনে চলা আবশ্যক। তা হলো:

এক. পোশাকের মূল উদ্দেশ্য সতর আবৃতকরণ এবং সৌন্দর্য অবলম্বন। তাই এমন আঁটসাট ও পাতলা পোশাক পড়া যাবে না, যাতে শরীরের গোপন অঙ্গ ফুটে ওঠে। হাদিসে রাসূল (সা.) এ ব্যাপারে অত্যন্ত সতর্কবাণীউচ্চারণ করেছেন। তিনি বলেন, ‘দুই শ্রেণির মানুষ জাহান্নামে যাবে। একশ্রেণি হলো, যাদের হাতে গাভীর লেজের মতো বেত থাকবে। আর তারা মানুষকে অন্যায়ভাবে প্রহার করবে। আরেক শ্রেণি হলো, ওই সব নারী যারা পোশাক পড়েও উলঙ্গ। এরা জান্নাতে যাবে তো দূরের থাক, জান্নাতের ঘ্রাণও পাবে না। (মিশকাত শরিফ) অন্য হাদিসে এসেছে “দুনিয়াতে অনেক পোশাক পরিহিত আখেরাতে হবে উলঙ্গ।” (শুয়াবুল ঈমান: ৩০৮৫)

দুই. পুরুষের পোশাক টাকনুর নিচে পরিধান করা হারাম। রাসূলুলাহ (সা.) এরশাদ করেন, ‘যে ব্যক্তি টাকনুর নিচে লুঙ্গি বা পায়জাম পরিধান করবে, সে জাহান্নামে যাবে। (মুসনাদে আহমদ)

তিন. পুরুষের জন্যে নারীর এবং নারীর জন্যে পুরুষের পোশাক পরা হারাম। রাসূল (সা.) বলেন, ‘যেসব পুরুষ নারীর বেশ-ভূষা অবলম্বন করে, আলাহ তায়ালা তাদের প্রতি অভিসম্পাত করেছেন। তেমনিভাবে যেসব নারী বেশ-ভূষায় পুরুষের অনুকরণ করে তাদের প্রতিও আলাহ অভিসম্পাত করেছেন। (তিরমিজি)

চার. পুরুষের জন্যে রেশমের পোশাক পড়া জায়েজ নেই।

পাঁচ. পুরুষের জন্যে লাল রঙ্গিন পোশাক পড়ার অনুমতি নেই। তবে নারীদের জন্যে সব ধরণের রঙ্গিন পোশাক পরা বৈধ। পোশাকের ক্ষেত্রে মুসলমানদেরকে এই পাঁচটি বিষয় সর্বদা লক্ষ্য রাখতে হবে।

লেখক : মুহাদ্দিস, জামিয়া উসমানিয়া দারুল উলুম, সাতাইশ, টঙ্গী।