আরব বিদ্বেষী ইসরাইলি ফুটবল ক্লাবে টাকা ঢাললেন আমিরাতি শেখ

সংযুক্ত আরব আমিরাতের এক শেখ এমন এক ইসরাইলি ফুটবল ক্লাবের অর্ধেকটা মালিকানা কিনে নিয়েছেন, যে ক্লাবটির দীর্ঘ আরব-বিদ্বেষের ইতিহাস রয়েছে।বেইতার জেরুসালেম নামের এই ক্লাবটিতে আগামী ১০ বছরে ৯২ মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবেন শেখ হামাদ বিন খলিফা আল নাহিয়ান।তিনি বলেন, 'গৌরবময় এই ক্লাবটির অংশীদার হতে পেরে তিনি রোমাঞ্চিত।'

ঠিক তিন মাস আগে আরব আমিরাত প্রথম উপসাগরীয় আরব দেশ হিসেবে ইসরাইলের সম্পর্ক স্বাভাবিক অবস্থায় আনতে পদক্ষেপ নেয়।ইসরাইল, আরব আমিরাত এবং বাহরাইন যুক্তরাষ্ট্রের ট্রাম্প প্রশাসনের তত্ত্বাবধায়নে একটি কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপন করার লক্ষ্যে চুক্তি সই করেন।ইসরাইলের শীর্ষস্থানীয় ফুটবল ক্লাব বেইতার জেরুসালেম। যারা ছয়বার ইসরাইলের প্রিমিয়ার লিগে জয় পেয়েছে।

ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামেন নেতানিয়াহু এই ক্লাবটির সমর্থক।এই ক্লাবটি পরিচিত 'উগ্র' সমর্থকগোষ্ঠীর জন্য, যারা 'লা ফ্যামিলিয়া' নামে পরিচিত। যারা আরবদের প্রতি সরাসরি বর্ণবাদী।

যদিও ইসরাইলের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ আরব।ক্লাবটির স্টেডিয়ামে 'আরবদের মৃত্যু' এমন শ্লোগান শোনা যেত নিয়মিত। ক্লাবটির মালিকরা কখনোই আরব বা মুসলিম ফুটবলার কিনতেন না।

২০১৩ সালে দুজন চেচেন মুসলিম ফুটবলার কেনার পর, এই ক্লাবটির অফিস জ্বালিয়ে দেয়া হয়।লা ফ্যামিলিয়ার দুজন সদস্যকে আগুন জ্বালানোর জন্য গ্রেফতার করা হয়।তবে ২০১৮ সালে ক্লাবটির বর্তমান মালিক ইসরাইলের প্রযুক্তি উদ্যোক্তা মোশে হোগেগ, বর্ণবাদ বিরোধী একটি প্রচারণা চালু করেন।

২০১৯ সালের ডিসেম্বরে তিনি বলেন, ভক্তদের তিনি সতর্ক করেছেন, 'একটি বর্ণবাদী মন্তব্য করলে আমি তোমাদের নামে মিলিয়ন ডলারের মামলা করবো।'শেখ হামাদের সাথে তার এই নতুন চুক্তির পর কিছু সমর্থক বিরোধিতা করেছে। এখন আবুধাবির রাজকীয় এই পরিবার ক্লাবটির ৫০ শতাংশের মালিক।

হোগেগ বলেন, এই চুক্তি হয়েছে ইহুদিদের হানুকা উৎসবের পরদিন। হানুকা হলো ইহুদিদের আলোর উৎসব এবং হোগেগ তাদের ক্লাবে এই আরব শেখের বিনিয়োগকে বর্ণনা করছেন 'উত্তেজনাকর নতুন আলো' বলে।"নতুন দিনে ক্লাবের স্বার্থে, জাতির স্বার্থে, ইসরাইলি স্পোর্টসের স্বার্থে সহাবস্থান, অর্জন, ভাতৃত্ববোধের দিকে আগাচ্ছি।"

শেখ হামাদ বলেন, আমি রোমাঞ্চিত এই গৌরবময় ক্লাবের অংশীদার হতে পেরে। আমি এই শহর সম্পর্কে অনেক শুনেছি, বিশ্বের অন্যতম পবিত্র শহর।তিনি আরো বলেন, এই ক্লাবে যেসব পরিবর্তন আসছে তা আমার জানা আছে। যেভাবে সব চলছে আমি এর ভাগীদার হতে পেরে খুশি।

শেখ হামাদ জেরুসালেম নিয়ে যা বলেছেন তা বিতর্কসাপেক্ষ, এই শহরটি ফিলিস্তিনের সাথে ইসরাইলের দ্বন্দ্বের কেন্দ্রস্থল।১৯৬৭ সালে মধ্যপ্রাচ্য যুদ্ধে ইসরাইল পূর্ব জেরুসালেম দখল করে নেয়। পুরো শহরটিকে ইসরাইলের রাজধানী ঘোষণা করে।এটি সমর্থন করেছে কেবলমাত্র- ট্রাম্প প্রশাসন, গুয়াতেমালা এবং হন্ডুরাস।ফিলিস্তিন পূর্ব জেরুাসালেমকে তাদের ভবিষ্যৎ সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে দাবি করে আসছে।

ইসরাইলের সাথে কূটনৈতিক চুক্তির পরে আরব আমিরাত কর্তৃপক্ষ বলেছে, ফিলিস্তিনের প্রতিষ্ঠা এবং পূর্ব জেরুসালেমকে এর রাজধানী হিসেবে স্বীকৃতি দেয়ার যে অঙ্গিকার তার প্রতি আরব আমিরাত অটল থাকবে।

সূত্র : বিবিসি