পাবনা মানসিক হাসপাতালটি বিশ্বমানের উন্নতিকরণে বাধা শুধু বেদখল হওয়া ১০০ বিঘা জমি

পাবনা মানসিক হাসপাতালটি বিশ্বমানের উন্নতিকরণে বাধা শুধু বেদখল হওয়া ১০০ বিঘা জমি

পাবনা মানসিক হাসপাতালটি বিশ্বমানের উন্নতিকরণে বাধা শুধু বেদখল হওয়া ১০০ বিঘা জমি -

পাবনা মানসিক হাসপাতালের বেদখল হওয়া ২৯.২৫ একর (১০০ বিঘা) জমি উদ্ধারে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বাধা কোথায়? এ প্রশ্ন সব মহলের। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বশীলদের চরম অবহেলার কারণে জমি উদ্ধারে কোন রকম এতদিন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি বলে অভিযোগ। যে কারণে বিশেষায়িত হাসপাতালটি বিশ্বমানের মানসিক হাসপাতাল হিসেবে উন্নিতকরণ প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রতিবন্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নে দ্রুত জমি উদ্ধারের দাবি আজ সর্ব মহলের। তবে উদ্ধারের কাজ দ্রুতগতিতে এগোচ্ছে বলে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।

পাবনা মানসিক হাসপাতাল স্থাপনের রেকর্ড থেকে জানা যায়, মানসিক রোগীদের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতকরণের লক্ষে ৬২ বছর আগে ১৯৫৭ সালে পাবনা জেলা শহর থেকে পশ্চিম দিকে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দূরে হেমায়েতপুরে ১৩৩.২৫ একর জমির উপর প্রতিষ্ঠিত করা হয় ৫০০ শয্যাবিশিষ্ট পাবনার মানসিক হাসপাতাল। পাবনা মানসিক হাসপাতালকে বিশ্বমানের হাসপাতাল করার পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার। প্রয়োজন পরিমাণ জায়গা থাকায় পাবনা মানসিক হাসপাতালকে বিশ্বমানের হাসপাতাল করতে কোন সমস্যা নেই। নতুন করে সরকারকে জমি অধিগ্রহণের কোনো ঝামেলাও নেই। শুধু দরকার বেহাত হওয়া ১০০ বিঘা জমি উদ্ধার। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম গত বছর (২০২০ সালের) অক্টোবরে পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন কওে বেশকিছু দিকনির্দেশনা দিয়ে যায়। নির্দেশনার মধ্যে অন্যতম হলো পাবনা মানসিক হাসপাতালের বেদখল হওয়া ১০০ বিঘা জমি উদ্ধার করা। কিন্তু অর্ধ বছরেও জমি উদ্ধারের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কিছুই অগ্রগতি হয়নি। উদ্ধার কাজের কেন অগ্রগতি হয়নি? এ প্রশ্ন আজ সকলের। তাই দায়িত্বশীলদের উদাসিনতার কারণে প্রকল্পটির বাস্তবায়ন নিয়ে শংকা দেখা দিয়েছে।

হাসপাতালের রেকর্ড অনুযায়ী, পাবনা মানসিক হাসপাতালের মোট জমির পরিমান ১৩৩. ২৫ একর। আগে এই জমির খাজনা দেয়া হত। এর মধ্যে পাবনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে দেয়া হয়েছে ৩০ একর। বর্তমানে পাবনা মানসিক হাসপাতাল খাজনা দিচ্ছে ৭৪ একর জমির।

রহস্যজনকভাবে অবশিষ্ট ২৯.২৫ একর জমি বেহাত হয়ে গেছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি টিম পাবনা মানসিক হাসপাতাল পরিদর্শন করে এ তথ্য জানতে পারে। বেহাত বা বেদখল হওয়া ২৯.২৫ একর (১০০ বিঘা) জমি দ্রুত উদ্ধার করার জন্য স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নির্দেশ দেন। সূত্র মতে, ওই বেহাত হওয়া জমি বিভিন্ন লোকের নামে রেকর্ড করা হয়েছে। যাদের নামে  রেকর্ড এবং এই কাজের সাথে যারা জড়িত তাদেরকে খুঁজে বের করে তাদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা গ্রহণ করতে সব মহল থেকে দাবী ওঠেছে।

পাবনা মানসিক হাসপাতালের সাইক্রিয়াট্রিক মোঃ মকবুল হোসেন (পাশা) জেলা উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির মাসিক সভায় মানসিক হাসপাতালের ২৯ একর জমি উদ্ধারসহ অন্যান্য সমস্যা দ্রুত সমাধান করার জন্য জেলা প্রশাসনের সহযোগিতা চাইলে বিষয়টি জানাজানি হয়। তিনি প্রকল্পের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে আধুনিকমানের হাসপাতালটিতে মানসিক রোগী এবং মানসিক স্বাস্থ্যসেবা সংশি¬ষ্ট সব ধরণের সুযোগ-সুবিধা থাকবে। এখানে আধুনিক মানের ওয়ার্ড, রোগী পুনর্বাসন সেন্টার, আধুনিক প্রশাসনিক ভবন, বহির্বিভাগ, যানবাহন সুযোগ-সুবিধা, আধুনিক ডরমিটরি, চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের আবাসন সেন্টার, সাইকিয়াট্রি বিশেষজ্ঞ সৃষ্টির জন্য এমফিল, বৃত্তিমূলক সেন্টার, মিউজিক্যাল থেরাপি, চিত্রাঙ্কন সেন্টার, হাফওয়ে হাউজ, চাইল্ড সাইকিয়াট্রি, অটিজম সেন্টার, সার্বক্ষণিক জরুরি বিভাগ, অ্যামুজমেন্ট সেন্টার, গার্ডেনিং, সুইমিং, ক্যাটল ফার্মি, সাইকিয়াট্রিক ট্রেনিং সেন্টার, আধুনিক প্যাথলজি বিভাগ, অর্গানোগ্রাম, লন্ড্রি প্লান্ট, আধুনিক স্টোর ভবন, এসসিপিএস, এমডি ইত্যাদি কোর্স চালু, প্লে গ্রাউন্ড, ওয়াকওয়েসহ বিভিন্ন সুবিধা থাকবে।

মানসিক হাসপাতালের সুপার ডা. রতন কুমার রায় বলেন,‘জমি উদ্ধারের ব্যাপারে সর্বাত্বক প্রচেষ্টা করা হচ্ছে। সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমন্বয়ে আরও কয়েকজন একত্রে আমরা কাজ করছি। ১৯৮২ সালে রেকর্ডের সময় এ জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। হাসপাতালের বাউন্ডারি দেয়ার সময় গণপূর্ত বিভাগের মাফযোগ করে বাউন্ডারি  দেয়া উচিৎ ছিল। মন্ত্রণালয়ের নিদেশানুযায়ী বেহাত জমি উদ্ধারের ব্যাপারে ম্যাপ ধরে কাজ করা হচ্ছে।’ 
এ ব্যাপারে পাবনা মানসিক হাসপাতারের পরিচালক ডা. আবুল বাশার মোঃ আসাদুজ্জামান বলেন, জমির বিষয়টি নিয়ে জেলা প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা হয়েছে এবং সমন্বিত প্রচেষ্ঠায় জমি উদ্ধারসহ নানাবিধ সমস্যা দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

পাবনা গণপূর্ত বিভাগের একজন প্রকৌশলী জানান, গণপূর্ত বিভাগ যা ইচ্ছা তাই করতে পারে না। যে কোন বিভাগের কোন কাজ করার জন্য সেই বিভাগ নির্দিষ্ট করে না দেয়া পর্যন্ত গণপূর্ত কাজ করতে পারে না। তেমনি মানসিক হাসপাতালের বাউন্ডারি করার বিষয়টিও এর ব্যতিক্রম নয়। 
মানসিক হাসপাতালের জমি বিভিন্ন নামে রের্কড রয়েছে। জমি উদ্ধারের ব্যাপারে আমরা সমন্বিতভাবে কাজ করছি বলে জানালেন পাবনা সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) রোকসানা মিতা।

পাবনা জেলা প্রশাসক কবীর মাহমুদ বলেন, পাবনা মানসিক হাসপাতালে ২৯.২৫ একর জমি উদ্ধারের জন্য সদর উপজেলার সহকারী কমিশনার (ভূমি) সমন্বয়য়ে কমিটি করা হয়েছে। জমি অন্যান্য মানুষের নামে রেকর্ড হয়ে আছে সেটা আমরা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। জমি উদ্ধারে কাজ হচ্ছে বলে তিনি জানান।

এব্যাপারে পাবনা সদর আসনের সংসদ সদস্য জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম ফারুক প্রিন্স বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পাবনা মানসিক হাসপাতালটি বিশ্বমানের করার জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন। সাথে সাথে বিশ্বমানের করার জন্য প্রক্রিয়াও শুরু হয়েছে। এ ব্যাপারে কারো গাফিতলি থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল পাবনাবাসীর জন্য অহংকার। এ হাসপাতাল শুধু পাবনা বা বাংলাদেশের মানুষই নয়; সারা বিশ্বের মানুষের কল্যাণে আসবে। সারা বিশ্বে পাবনা পরিচিতি পাবে। পাবনা মানসিক হাসপাতাল বিশ্বমানের করতে যতপ্রকার সহযোগিতা প্রয়োজন আমি সব করতে সর্বাগ্রে আগ্রহী।

উল্লেখ্য, ইতোমধ্যে যাবতীয় দিকনির্দেশনা দ্রুত প্রেরণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দেয়া হয়েছে।