পশ্চিমবঙ্গ : পরীক্ষা না নিয়ে ফেল করানোয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পশ্চিমবঙ্গ : পরীক্ষা না নিয়ে ফেল করানোয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

পশ্চিমবঙ্গ : পরীক্ষা না নিয়ে ফেল করানোয় শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ

কোভিড পরিস্থিতির জন্য এবার পশ্চিমবংঙ্গের বোর্ডের  পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হয়নি৷ ৪০:৬0 গাণিতিক ফর্মুলায় হিসেব কষে নম্বর দেওয়া হয়েছে পরীক্ষার্থীদের৷ হিসেবটা ঠিক কী? ২০১৯ সালে মাধ্যমিকে পাওয়া চারটি বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ৪০ শতাংশ নম্বর দেওয়া হয়েছে৷ ৬০ শতাংশ নম্বর দেওয়া হয়েছে ২০২০ সালের একাদশ শ্রেণির বার্ষিক পরীক্ষা ও দ্বাদশ শ্রেণির প্র্যাকটিক্যাল ও প্রজেক্টের উপর৷

কিন্তু এই ফর্মুলায় হিসেব করে অঙ্ক মেলেনি বলে দাবি পড়ুয়াদের৷ অকৃতকার্যের হার ২.৩১ শতাংশ৷ ফল প্রকাশের পর ছাত্ররা বিভিন্ন জায়গায় অবরোধ ও ভাঙচুর করে৷ তাদের প্রশ্ন, কোন অঙ্কে ফেল করিয়ে দেওয়া হলো? পরীক্ষা না দিয়ে যারা পাশ করলো, তাদের মূল্যায়নের ভিত্তিই বা কী?

দায় কার?

শিক্ষকদের একাংশের মতে, উচ্চ মাধ্যমিকে২.৩১ শতাংশ পড়ুয়ার অকৃতকার্য হওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়৷ ঢাকুরিয়ার বিনোদিনী গার্লস হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষিকা দীপান্বিতা রায়চৌধুরী বলেন, ‘‘যারা ফেল করেছে, তারা ফেল করার মতোই৷ নানা অনুদান ও প্রকল্পের অর্থ পাওয়া সত্ত্বেও ছেলেমেয়েদের একাংশ পড়াশুনো করে না৷ পাস-ফেল প্রথা না থাকায় পড়াশুনোর অভ্যেসটাও হারিয়ে যায়৷ মাধ্যমিকের ১০০ শতাংশ পাশ দেখে এই ছাত্র-ছাত্রীদের মনেও আশা জেগেছিল৷’’

পশ্চিম মেদিনীপুরের ঘাটাল বিদ্যাসাগর উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্র আকাশ হড় তার আশানুরূপ ফল পায়নি৷ যদিও মাধ্যমিক ও একাদশে তার ফল যথেষ্ট ভালো ছিল৷ এমনই ছবি বিভিন্ন স্কুলে৷ 'ও' এবং 'এ প্লাস' গ্রেডের পড়ুয়াদের সংখ্যা গত বছরের তুলনায় অনেকটাই কমে গিয়েছে৷ পাশের হার বাড়লেও গুণগত মান কমেছে৷ 

এর দায় উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের উপর চাপালেন কাকদ্বীপের শিবকালীনগর ঈশান মেমোরিয়াল হাইস্কুলের শিক্ষক গৌতম মণ্ডল৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাদের রাজ্যে দীর্ঘদিন পাস-ফেল ফিরিয়ে আনার আন্দোলন চলছিল৷ এবার পরীক্ষাটাই উঠে গেল৷ অথচ ফেল করানো হলো৷ একাদশে কেউ ফেল করলে সে দ্বাদশে উঠতে পারে না৷ আর প্র্যাকটিক্যাল বা প্রজেক্টে ১০০ শতাংশ নম্বর দেওয়া হয়েছে৷ তা হলে কোন হিসেবে ফেল করবে? এটা হিসেবের ভুল৷ স্কুল বা ছাত্রের দায় নেই৷ পুরো দায় সংসদের৷’’

স্কুলের   ভূমিকা 

উচ্চ মাধ্যমিকের মূল্যায়ন ফর্মুলা প্রকাশিত হয় ১৮ জুন৷ ২৩ জুনের মধ্যে সব স্কুলকে একাদশের ফল জমা দিতে বলা হয়৷ চার-পাঁচদিনে তাড়াহুড়ো করে নম্বর জমা দিতে গিয়ে কি গন্ডগোল? শিক্ষা সংসদের সভাপতি মহুয়া দাস নিজেই বলেছেন, সব স্কুল ঠিকঠাক নম্বর পাঠায়নি৷ এমন স্কুলের সংখ্যা ৫০০-১০০০৷ তাদের সতর্ক করা হয়েছে৷ প্রশ্ন উঠছে, এই স্কুলগুলির পাঠানো অসঙ্গতিপূর্ণ নম্বর নিয়েই কি মূল্যায়ন হলো?

এ ছাড়া দেখা গিয়েছে, একাদশের পরীক্ষাকে অধিকাংশ পড়ুয়া বেশি গুরুত্ব দেয় না৷ তাই সেই পরীক্ষার নম্বর যোগ করায় অনেকের নম্বর কমে গিয়েছে৷ দীপান্বিতা বলেন, ‘‘মাধ্যমিকের পর একাদশে গড়পরতা ছেলেমেয়েরা পড়াশুনোয় শৈথিল্য দেখায়৷ সেই রেজাল্ট সংসদের নির্দেশে স্কুল কর্তৃপক্ষ পাঠিয়েছেন৷ এখন পড়ুয়াদের বিক্ষোভে সংসদ যদি সবাইকে পাস করিয়ে দেয়, তাহলে স্কুল-কলেজগুলি রাখারই প্রয়োজনীয়তা নেই৷’’

একাদশে অধিকাংশ ছাত্রছাত্রী ফেল করে৷ তাদের নম্বর বাড়িয়ে দ্বাদশে উত্তীর্ণ করে দেওয়াটাই রীতি৷ তার উপর কোভিডের জেরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘ দিন বন্ধ৷ রাজ্য সরকারের সিদ্ধান্তে একাদশ শ্রেণিতে সকলকে প্রোমোশন দেওয়া হয়৷ এর ফলে নম্বর গ্রেস দেওয়া হয়নি, তাই মূল্যায়নে বিভ্রাট বলে মনে করেন কলকাতার বাগবাজার হরনাথ হাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক কাজি মাসুম আখতার৷ শুধু কি পাস-ফেল? মেধাবী পড়ুয়ারাও গাণিতিক ফর্মুলার শিকার৷

পদ্মশ্রী ও শিক্ষারত্ন পুরস্কারপ্রাপ্ত এই প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা ভালো ছেলেরা আরো ভালো রেজাল্ট করতে পারতো, তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হলো৷ তেমনি অকৃতকার্যদের যে বক্তব্য, তাদের যদি ফেল করাবে, তাহলে একাদশ থেকে দ্বাদশে তুলে দেওয়া হলো কেন? এতেও যুক্তি আছে৷ এই ছাত্রদের নম্বর যদি কিছুটা গ্রেস দিয়ে পাঠানো হতো, তাহলে এই দুর্দশা হতো না৷’’

সূত্র : ডয়চে ভেলে