তুরষ্কে দাবানলের ষষ্ঠ দিন, সরিয়ে নেয়া হয়েছে ১০ হাজার মানুষকে

তুরষ্কে দাবানলের ষষ্ঠ দিন, সরিয়ে নেয়া হয়েছে ১০ হাজার মানুষকে

তুরষ্কে দাবানলের ষষ্ঠ দিন, সরিয়ে নেয়া হয়েছে ১০ হাজার মানুষকে-

তুরস্কের বোড্রাম সমুদ্র সৈকত রিসোর্টের কাছে দাবানল ছড়িয়ে পড়ার ফলে স্থানীয় বাসিন্দা সেলকুক সানলি তার দুটি গরুকে ছেড়ে দেন। তারপর পরিবারের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিসপত্র একটি গাড়িতে রেখে বাধ্য হয়ে বাড়ি ছেড়ে অন্যত্র চলে যেতে হয়। সানলি হলেন দাবানল থেকে পালানো হাজার হাজার মানুষের একজন। এই দাবানলের ফলে ঘন হলুদ আভায় ঢেকে যায় সেখানকার আকাশ।

সোমবার টানা ষষ্ঠ দিনের জন্য দমকলকর্মীরা তুরস্কের সমুদ্র সৈকতের কাছে দাবানল নিয়ন্ত্রণে আনতে লড়াই করছে। প্রবল বাতাস এবং উচ্চ তাপমাত্রার কারণে বুধবার থেকে শুরু হওয়া এই দাবানলে অন্তত আটজন লোক মারা গেছেন।

স্থানীয় বাসিন্দা এবং পর্যটকরা ছোট ছোট নৌকা, গাড়ি এবং ট্রাকের বহর যোগে রিসোর্ট ছেড়ে পালিয়ে যায়। অনেক গ্রামবাসী তাদের বাড়িঘর এবং গবাদি পশু হারিয়েছে, প্রচণ্ড ধোঁয়ার মধ্যে তাদের শ্বাস নিতে কষ্ট হয়েছে।

সামগ্রিকভাবে, কেবল মুগলা প্রদেশেই প্রায় ১০ হাজার মানুষকে সরিয়ে নেয়া হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুলেমান সোয়েলু জানিয়েছেন।

সানলী সোমবার বোজালানে তার বাড়িতে ঢুকতে না পেরে ফিরে আসেন, কারণ আগুন আরো ছড়িয়ে পড়েছে। তিনি বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার সময় বলেন, ‘বিষয় সম্পত্তি গুরুত্বপূর্ণ কিন্তু জীবন সবচেয়ে বেশি মূল্যবান’।

তুরস্কের কৃষি ও বন মন্ত্রী বেকির পাকডেমিরলি বলেন, কর্মীরা এখনো উপকূলীয় প্রদেশ এন্টালিয়া ও মুগলার জনপ্রিয় পর্যটন এলাকার সাতটি দাবানল মোকাবেলা করছে। এছাড়া উত্তর পূর্বে ৩৮০ কিলোমিটার দূরে ইস্পার্টা এবং দক্ষিণ-পশ্চিম তুরস্কের ডেনিজলি প্রদেশে বেশ কিছু দাবানল এখনো সক্রিয় আছে।

মন্ত্রী বলেন, দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের টুনসেলিতে আরেকটি আগুন নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়েছে। সব মিলিয়ে বুধবার থেকে ৩০ টিরও বেশি প্রদেশে ১২৯টি আগুন নিভানো গেছে।
পাকডেমিরলি বলেন, ‘আমরা এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সংগ্রাম করছি, যখন তাপমাত্রা ১০৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট এর উপরে, যেখানে বাতাস প্রবল এবং আর্দ্রতা অত্যন্ত কম’।

বোজালানে, ইসরা সানলী তার গ্রামে আগুন জ্বলতে দেখে কান্না চেপে রাখতে পারলেন না। কাঁদতে কাঁদতে তিনি বলেন, ‘কোন বিমান নেই, হেলিকপ্টার নেই, রাস্তা নেই। এই আগুন কিভাবে নিভবে? কিভাবে? দমকল গাড়ি তাদের সাইরেন বাজিয়ে যখন বোজালানের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন গ্রামবাসীদের তাদের এলাকা থেকে গরু নিয়ে পালিয়ে যেতে দেখা যায়।

রোববার আগুন আরো কাছাকাছি চলে এলে বাসিন্দারা পার্শ্ববর্তী গ্রাম কোকার্টমে চলে যেতে বাধ্য হয়। আগুন কিছুটা নিভে আসার সাথে সাথে অনেকেই ছোট নৌকায় এবং অন্যরা গাড়িতে করে রওনা হয়।

বোড্রামের মেয়র আহমেট আরাস আগুনের ভয়াবহতাকে নরক বলে বর্ণনা করেন। দুটি তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র রক্ষা করার জন্য প্রয়োজনীয় সতর্কতা অবলম্বন করা হয়েছিল। মুগলা প্রদেশের মারমারিসের সমুদ্রতীরবর্তী রিসোর্টের কাছে তুরুনক শহর থেকে সরে যাবার আদেশ জারি করা হলে সুটকেস হাতে নিয়ে অনেক মানুষ ছোট ছোট নৌকায় করে পালিয়ে যায়।

ইইউ বলেছে, তারা তুরস্ককে সাহায্য করার জন্য ক্রোয়েশিয়া এবং স্পেন থেকে অগ্নিনির্বাপক বিমানগুলি একত্রিত করতে সাহায্য করেছে। ইউক্রেন, রাশিয়া, আজারবাইজান এবং ইরানের বিমানগুলিও আগুনের সাথে লড়াই করছে। স্পেন বলেছে যে তারা দুটি পানি বর্ষণকারী বিমান এবং একটি পরিবহন বিমানের পাশাপাশি ২৭ জন সৈন্যকে সাহায্য করার জন্য পাঠাচ্ছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নের পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেছে যে, তুর্কি সরকার পশ্চিমা দেশগুলোর সাহায্য প্রত্যাখ্যান করে অগ্নিনির্বাপণ প্রচেষ্টাকে ব্যাহত করছে। পাকডেমিরলি এই অভিযোগ খণ্ডন করে বলেন, সরকার কেবলমাত্র সেই বিমানগুলির সাহায্য প্রত্যাখ্যান করেছিল, যাদের পানি নিক্ষেপ ক্ষমতা ৫ টনেরও কম। তিনি বলেন, মোট ১৬ টি বিমান, ৫১ টি হেলিকপ্টার এবং ৫ হাজারেরও বেশি কর্মী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে চেষ্টা করে যাচ্ছে।

মারমারিসের মেয়র মেহমেত ওকতায় বলেন, দুটি স্থানে এখনো আগুন জ্বলছে এবং অনুমান করা হচ্ছে যে ১১ হাজার হেক্টর বনাঞ্চল পুড়ে গেছে। সোমবার, একটি আগুন হিসারোনু গ্রামে পৌঁছে যায়। এ সময় সেখানে বেশ কয়েকটি ঘর-বাড়ি পুড়ে যায় এবং পাহাড়ের ঢাল বেয়ে আগুন রাস্তার দিকে নেমে এলে পুলিশ অ্যাম্বুলেন্স ক্রু এবং সাংবাদিকদের সেখান থেকে সরিয়ে দেয়।

ওকতায় হবার্টর্ক টেলিভিশনকে বলেছেন, ‘আমাদের ফুসফুস গত পাঁচ দিন ধরে জ্বলছে’।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী ফাহরেটিন কোকা বলেছেন, অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত কমপক্ষে ২৭ জন মানুষ এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন এবং শত শত মানুষকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে এবং চিকিৎসা শেষে অনেককে ছেড়ে দেয়া হয়েছে।

দক্ষিণ ইউরোপ জুড়ে একটি তাপপ্রবাহ, উত্তর আফ্রিকা থেকে আসা উত্তপ্ত বাতাসের সহায়তায় ভূমধ্যসাগর জুড়ে দাবানলের সৃষ্টি করেছে। ফলে ইতালি এবং গ্রিসসহ ওই এলাকার মানুষকে আগুনের হাত থেকে বাঁচাতে সমুদ্রপথে সরিয়ে নেয়া হয়।
সূত্র : ভয়েস অফ আমেরিকা