শামীম পাটোয়ারি : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার যেভাবে সাত ম্যাচ খেলেই বিশ্বকাপে

শামীম পাটোয়ারি : আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার যেভাবে সাত ম্যাচ খেলেই বিশ্বকাপে

শামীম পাটোয়ারি

অভিষেকের মাত্র চার মাসের মধ্যেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে নাম উঠলো শামীম পাটোয়ারির। আর এখনই তাকে 'বাংলাদেশের ফিনিশিং সমস্যার সমাধান' হিসেবে সম্ভাবনা দেখছেন বিশ্লেষকরা।

চাঁদপুরেই বড় হয়ে ওঠা এবং পরবর্তীতে জাতীয় দলের ক্রিকেট খেলা একমাত্র ক্রিকেটার তিনি।

আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে শামীমকে নিয়ে এখনই কোনো উপসংহার টানার সময় এখনো আসেনি।

এখনো অনেক সময় বাকি, সে সফল, সম্ভাবনাময় নাকি ব্যর্থ সেই কথা বলা যাবে আরো গোটা বিশেক ম্যাচের পরে।

মাত্র সাতটি আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছেন তিনি। তাই বিশ্বকাপে খুব বেশি চাপ নেবেন না বলে জানিয়েছেন শামীম পাটোয়ারি।

‘চাপ সব খেলাতে থাকে। দলের মধ্যে এখন একটা চাঙ্গা ভাব আছে। অন্তত সেমিফাইনাল খেলার আশা আছে আমাদের দেখা যাক কী হয়।’

শামীমও এতো হিসেব নিকেশ করতে চান না, তিনি বলেছেন বিশ্বকাপ দল সুযোগ পেয়ে তিনি খুশি, তবে 'নিজেকে প্রমাণ' করাই এখন মূল লড়াই।

অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ী দলের সদস্য শামীম করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যেই মূলত নজর কাড়েন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে।

অনুর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপ জয়ের পরই আত্মবিশ্বাসে জোর বাড়ে শামীম পাটোয়ারির, বিকেএসপি থেকে বয়সভিত্তিক দল হয়ে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়ার আগে বলেন, 'এটা স্বপ্নের মতো'।

তবে তিনি বাস্তবতাও জানেন, ‘জাতীয় দলে ঢোকার আগে আমি অনেক নির্ভার ছিলাম। কিন্তু এখানে খেলাটা ভিন্ন। এখন টিকে থাকতে হবে, পারফর্ম করতে হবে। আমার কাছে অনেক চাওয়া, প্রত্যাশা। শুধু দলের না, পরিবারও চায় যাতে আমি ভালো খেলি। বাংলাদেশের হয়ে কিছু করি।’

প্রথম যখন ম্যাচ জেতান শামীম তখনই অনুভব করেন, দলকে জিতিয়ে নিয়ে মাঠ ছাড়ার আনন্দ অন্যরকম।

তিনি বলেন, ‘এমন সময় আসে যে মনে হয় জিতে যাবো সেই কন্ডিশন থেকে একটা বা দুইটা উইকেট পড়ে গেলেই বিপদে পড়ে যেতে হয়। তখন যখন মাঠে নামি একটা চাপ থাকে। আর অনুর্ধ্ব-১৯ বা ঢাকা প্রিমিয়ার লীগ থেকে অনেক আলাদা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট। এখানে খারাপ বল কম পাওয়া যায়।’

জিম্বাবুয়ের মাটিতে শামীম অভিষেক ম্যাচে মাঠে নেমেই ২০০ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা শুরু করেন।

এরপরের ম্যাচেই বাংলাদেশের সামনে আসে ২০০ রানের টার্গেট। ১৫ বলে অপরাজিত ৩১ রান করে সেই ম্যাচ জয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন শামীম।

এমন শুরুর পর অবশ্য অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের সাথে তেমন বলার মতো রান নেই শামীমের ব্যাটে। সাত ম্যাচে মাত্র ৭২ রান।

তবে সাকিব আল হাসান এই দুই সিরিজের উইকেটের আচরণ দেখে বলেছেন, এই উইকেটে কোনো ব্যাটসম্যানকে বিচার করাটা অন্যায় হবে।

শামীম এখন পর্যন্ত ৩৭টি ঘরোয়া পর্যায়ের টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেলেছেন যেখানে তার স্ট্রাইক রেট ১৪৫। এটা যেকোনো বাংলাদেশের যে কোনো পজিশনের ব্যাটসম্যানের তুলনায় অনেক বেশি।

শামীমের বড় শক্তি হাত ও চোখের সমন্বয়, পাওয়ার হিটিং দিয়ে বড় শট খেলতে পছন্দ করেন তিনি।

বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে প্রায়ই পাওয়ার হিটিং নিয়ে আক্ষেপ দেখা যায়। শামীম পাটোয়ারি সেই শূন্যস্থান পূরণ করতে পারবেন বলে আশাবাদী টিম ম্যানেজমেন্ট।

এর আগে ২০২১ সালের মার্চে শামীমের গায়ের জোর নিয়ে একটি ইন্টারভিউও বেশ ভাইরাল হয়। গণমাধ্যমের প্রশ্ন উত্তর পর্বে প্রশ্ন রাখা হয়, কী খান তিনি যে গায়ে এতো জোর।

শামীম খুব নির্মোহভাবে উত্তর দেন- 'ভাত খাই'।

এটি দ্রুতই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। শামীমের টিমমেটরা তাকে 'পাটু' বলে ডাকেন- পাটোয়ারির সংক্ষিপ্ত রূপ।

দলে 'ড্যান্সার' হিসেবের খ্যাতি আছে তার, ইউটিউব ও ফেসবুকে প্রায়ই তার ড্রেসিং রুম কিংবা টিম হোটেলে নাচের ভিডিও পাওয়া যায়।

তিনি বলেন, ‘খেলার বাইরের জীবনে কতো কিছুই তো করি।’

বিশেষত কোয়ারেন্টিন এবং বায়োবাবলের এই সময়ে ক্রিকেটারদের দল হিসেবে চাঙ্গা রাখতে এমন স্কোয়াডম্যান অনেক সময় ভালো ভূমিকা পালন করে থাকেন।

শামীমের আরেক পরিচয় গ্রাউন্ডে দারুণ ফিল্ডিংয়ে।

তিনি বলেন, ছোটবেলা থেকেই ফিল্ডিং অনেক ভালো ছিল। অনুর্ধ্ব ১৪ তে যখন খেলতাম তখন থেকেই ফিল্ডিং নিয়ে প্রশংসা পাই আমি।

ফিল্ডিংয়ে শামীম পাটোয়ারির আইকন ক্রিকেট ইতিহাসে অন্যতম সেরা ফিল্ডার দক্ষিণ আফ্রিকার জন্টি রোডস।
সূত্র : বিবিসি