কুবির আঙিনায় হেমন্তের ছোঁয়া

কুবির আঙিনায় হেমন্তের ছোঁয়া

কুবির আঙিনায় হেমন্তের ছোঁয়া

ষড়ঋতুর দেশ আমাদের বাংলাদেশ। বর্ষার বারিধারা শেষে প্রকৃতিতে হেমন্ত আসে শীতের আগমনী বার্তা নিয়ে। কার্তিক এবং অগ্রহায়ণ মিলে আবেগ ছড়ানো এই ঋতুতে প্রকৃতি সাজে এক নতুন রূপে। প্রতিবারের ন্যায় এবারও আগমনী ছোঁয়া লেগেছে লালামাটির পাহাড়ে ঘেরা সৌন্দর্যের অনন্য লীলাভূমি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি) ক্যাম্পাসেও।

ঋতুর পালাবদলের সাথে সাথে ক্যাম্পাসের প্রকৃতিও সাজে ভিন্ন রূপে। শরতের শেষ বিকেলে পাতাঝরা হেমন্ত দোলা দিয়ে যাচ্ছে ক্যাম্পাসের প্রকৃতিতে। দূর্বা ঘাসে কিংবা গাছের কচি পাতায় মুক্তার মতো আলো ছড়িয়ে ভোরের শিশির যখন জানান দেয় হেমন্তের অনুভূতি, ঘন কুয়াশা ভেদ করে পূর্ব দিগন্তে সূর্য যখন উদিত হয় আপন ঢঙে, কিংবা মিষ্টি রোদের তাপে বিকেল পেরিয়ে যখন সন্ধা নামে ক্যাম্পাসের আঙিনায় তখন অস্ফুট কন্ঠে জীবনানন্দের কবিতা মনে পড়ে প্রেমিক মনে- এদেহ অলস মেয়ে পুরুষের সোহাগে অবশ চুমে লয় রৌদ্রের রস হেমন্ত বৈকালে উড়ো পাখপাখালির পালে উঠানের পেতে থাকে কান, শোনে ঝরা শিশিরের ঘ্রাণ অঘ্রাণের মাঝরাতে।

(কার্তিক-অগ্রহায়ণ) মাস নিয়ে হেমন্ত।হেমন্তকে বলা হয় শীতের পূর্বাভাস। (পৌষ-মাঘ) মাস নিয়ে শীত ঋতু। পালাবদল প্রকৃতির নিয়ম। আমাদের দেশ ছয় ঋতুর দেশ।

প্রত্যেক ঋতু'ই নিয়ে আসে অপরূপ সৌন্দর্য। সাজিয়ে তুলে প্রকৃতি। সাজিয়ে তুলে পুরো বাংলা। তারই ছোয়া লেগেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে। স্নিগ্ধ সন্ধ্যায় হালকা শীত শীত অনুভূতি মন জুড়িয়ে যাওয়ার মতো। সন্ধ্যার পর রাতে ক্যাম্পাস আবারো কুয়াশাচ্ছন্ন হয়। যেন চারদিকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে প্রকৃতির অপরূপ মায়া।

স্নিগ্ধতায় মুড়ানো প্রকৃতি যেন ক্যাম্পাসকে আগলিয়ে রাখার জন্য আকুল হয়ে বসে আছে। শিশিরস্নাত ভোরকে বিদায় জানিয়ে সূর্য আসে কাচাসোনা রোদ নিয়ে। উপভোগ্যের পাশাপাশি দৃষ্টিনন্দন এই দৃশ্য যেন সবাইকে ব্যাকুল করে দেয়। ঘাসের ডগায় জমাট বাঁধা স্নিগ্ধ শিশির ঝলমল করে উঠে রোদের আলোয়।

কুয়াশার চাদরে ঢেকে যায় ক্যাম্পাসের পথ-ঘাট, বিস্তীর্ণ খেলার মাঠ, এবং শহীদ মিনার। শিশির বিন্দু ঝরার টুপটাপ শব্দ আর মৃদু শীতলতা জানান দেয় ঋতু পরিবর্তনের খবর। শিশিরস্নাত সকাল, পাখির কলকাকলি ভরা ভেজা সন্ধ্যা আর মেঘমুক্ত আকাশে জোছনা ডুবানো আলোকিত রাত হেমন্তকালকে যেন আরও রহস্যময় করে তোলে সবার চোখে; প্রকৃতিতে এনে দেয় ভিন্নমাত্রা। হেমন্তের এ মৌনতাকে ছাপিয়ে বাংলার মানুষের জীবনে নবান্ন প্রবেশ করে জাগরণের গান হয়ে।

মানুষের জীবনে এনে দেয় সর্বজনীন উৎসবের ছোঁয়া। এই আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে বাংলাদেশের সর্বত্র। একইভাবে এই আনন্দ উপভোগ করে লাল মাটির ক্যাম্পাসের শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাঈদ হাসান তার অভিব্যক্তি ব্যক্ত করে বলেন- 'সকালে বেশ কয়েকদিন ধরে ব্যায়াম করার জন্য আসা হয়। তখন বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্ছ, শহীদ মিনার, কেন্দ্রীয় মাঠ কুয়াশাচ্ছন্ন হয়ে থাকে। মনে হয় যেন- এটা পুরোপুরি ভিন্ন এক জগত, যেন স্বর্গীয় অনুভূতি।

কুয়াশাজড়ানো এই ক্যাম্পাস তখন স্বর্গীয় রূপ ধারণ করে। হালকা শীতের অনুভূতি পাশাপাশি কুয়াশা-মাখানো ছবির ক্যাম্পাসের দৃশ্য এক ভাল লাগা সৃষ্টি করে মনে মধ্যে।'