সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহিত

সংসদ সদস্য একাব্বর হোসেনের মৃত্যুতে সংসদে শোক প্রস্তাব গৃহিত

ফাইল ছবি-

একাদশ জাতীয় সংসদের ১৩৬ টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য মো. একাব্বর হোসেনের মৃত্যুতে জাতীয় সংসদে আজ সর্বসম্মতিক্রমে শোক প্রস্তাব গ্রহণ করা হয়েছে।

স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী সংসদে এ শোক প্রস্তাব উত্থাপন করেন।

মো. একাব্বর হোসেন ১৯৫৬ সালের ১২ জুলাই টাঙ্গাইল জেলার মির্জাপুর উপজেলার পোষ্টকামুরী গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত  মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। গতকাল মঙ্গলবার বেলা ২টা ৫মিনিটে রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ইন্তেকাল করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৫ বছর।

সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী একাব্বর হোসেনের জীবন ও কর্মের ওপর আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়।

সংসদ নেতা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আলোচনায় অংশ নেন। এ ছাড়া বিরোধীদলের উপনেতা গোলাম মোহাম্মদ কাদের আলোচনায় অংশ নেন।

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, সরকারি দলের সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, আবদুস সোবহান মিয়া, বেনজির আহমেদ, আনোয়রুল আবেদীন খান ও বিরোধী দলের চিফ হুইপ মশিউর রহমান রাঙ্গা।
আলোচনায় অংশ নিয়ে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, বাংলাদেশের রাজনীতিতে মরহুম একাব্বর হোসেন ছিলেন একজন সত্যিকারের ভালো মানুষ। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের প্রতি নিবেদিত প্রাণ কর্মী একাব্বর হোসেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দুঃসময়ের পরীক্ষিত কর্মী ছিলেন। ওবায়দুল কাদের তার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন।
বেগম মতিয়া চৌধুরী বলেন, আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে একজন নিবেদিত আদর্শিক নেতা ছিলেন একাব্বর হোসেন। তিনি এমন নেতা ছিলেন যিনি কর্মীর কাতারে দাঁড়িয়ে দলের জন্য কাজ করে গেছেন।

শোক প্রস্তাবে তার জীবন বৃত্তান্তে জানানো হয়, মো. একাব্বর হোসেন ১৯৭১ সালে জাসুকী এন.এস.এ.জি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি এবং ঢাকা তিতুমীর কলেজ থেকে ১৯৭৪ সালে এইচএসসি পাশ করেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ১৯৭৭ সালে সমাজ বিজ্ঞানে বিএসএস ও ১৯৭৮ সালে এমএমএস ডিগ্রি অর্জন করেন। ছোটবেলা থেকেই তিনি রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। ১৯৬৮ সালে ছাত্রলীগে যোগদানের মাধ্যমে তিনি রাজনৈতিক জীবন শুরু করেন। তিনি ১৯৭১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করেন। কাদেরিয়া বাহিনীর ৪৫ নম্বর কোম্পানীর সহ-কোম্পনী কমান্ডার হিসেবে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং বহু পাকসেনা হতাহত করে মহান স্বাধীনতা অর্জনে বলিষ্ঠ ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৩ সালে তিনি সরকারী তিতুমীর কলেজ শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের পরিবারসহ নির্মম হত্যাকান্ডের প্রতিবাদে বিভিন্ন আন্দোলনে যুক্ত হয়ে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন এবং বেশ কয়েকবার গ্রেপ্তার হন।

 তিনি ১৯৭৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মহসীন হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক এবং ১৯৭৮ সালে একই শাখা ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। ১/১১ সময়কালে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার মুক্তির জন্য তিনি রাজপথে সক্রিয় আন্দোলনে অংশগ্রহণ করেন এবং গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলন, সংগ্রামে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি মির্জাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি, টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক উপকমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন। 

মো. একাব্বর হোসেন অষ্টম, নবম, দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী হিসেবে ১৩৬ টাঙ্গাইল-৭ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। অষ্টম সংসদে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য, নবম সংসদে পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটি ও সরকারি প্রতিশ্রুতি কমিটির সদস্য, দশম সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং একাদশ সংসদে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং ভূমি মন্ত্রণালয় সর্ম্পকিত স্থায়ী কমিটির সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন।

একাদশ জাতীয় সংসদের ১৩৬ টাঙ্গাইল-৭ আসনের সংসদ সদস্য, সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি মো. একাব্বর হোসেন এমপি’র মৃত্যুতে জাতীয় সংসদ থেকে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করা হয়।
পরে মরহুমের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শনে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করে তার আত্মার মাগফেরাত কামনা করে মোনাজাত করা হয়। মোনাজাত পরিচালনা করেন সরকারি দলের সদস্য এনামুল হক।
এরপরই সংসদের রেওয়াজ অনুযায়ী দিনের সব কার্যসূচি স্থগিত করে সংসদের বৈঠক মুলতবি করা হয়

সূত্র: বাসস