রাসূলের শাফায়াত পরম সৌভাগ্য

রাসূলের শাফায়াত পরম সৌভাগ্য

রাসূলের শাফায়াত পরম সৌভাগ্য

শাফায়াত অর্থ সুপারিশ। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন শুধু হজরত মুহাম্মদ সা:কে শাফায়াতের ক্ষমতা দিয়েছেন। মাকামে মাহমুদে অবস্থান করে রাসূলুল্লাহ সা: আল্লাহর হুকুমে ‘শাফায়াত’ করবেন।
আল্লাহ সর্বপ্রথম হজরত মুহাম্মদ সা:কে সুপারিশ করার অনুমতি দেবেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আবু হুরায়রা রা: বলেন, রাসূলুল্লাহ সা: বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন আমি আদম সন্তানের নেতা হবো। সর্বপ্রথম আমাকেই কবর থেকে উঠানো হবে। কিয়ামতের দিন আমিই সর্বপ্রথম সুপারিশ করব এবং আমার সুপারিশই সর্বপ্রথম গ্রহণ করা হবে’ (সহিহ মুসলিম)।

কিয়ামতের ময়দানে হিসাব-নিকাশ চলাকালীন আল্লাহর কাছে উম্মতদের জন্য নবী-রাসূল কর্তৃক শাফায়াতের চমৎকার বর্ণনা পবিত্র হাদিস শরিফে উল্লেখ রয়েছে। মাবাদ ইবনে হিলাল আল আনাজি রহ: থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমরা বসরাবাসী কিছু লোক একত্র হয়ে আনাস ইবনে মালিক রা:-এর কাছে গেলাম। আমাদের সাথে সাবিত রা:কে নিলাম, যাতে তিনি আমাদের কাছে আনাস রা: থেকে বর্ণিত শাফায়াত সম্পর্কিত হাদিস জিজ্ঞেস করেন। আমরা তাকে তার মহলেই চাশতের সালাতরত পেলাম। তার কাছে প্রবেশের অনুমতি চাইলে তিনি আমাদেরকে অনুমতি দিলেন। তখন তিনি তার বিছানায় উপবিষ্ট অবস্থায় আছেন। অতঃপর আমরা সাবিত রা:কে অনুরোধ করলাম, তিনি যেন শাফায়াতের হাদিসটি জিজ্ঞেস করার আগে অন্য কিছু জিজ্ঞেস না করেন। তখন সাবিত রা: বললেন, হে আবু হামজাহ! এরা বসরাবাসী আপনার ভাই, শাফায়াতের হাদিস সম্পর্কে জানতে এসেছেন।

অতঃপর আনাস রা: বললেন, আমাদের কাছে মুহাম্মদ সা: হাদিস বর্ণনা করেছেন যে, ‘কিয়ামতের দিন মানুষ সমুদ্রের ঢেউয়ের মতো ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে। তাই তারা আদম আ:-এর কাছে এসে বলবে, আমাদের জন্য আপনার রবের কাছে সুপারিশ করুন। তিনি বলবেন, ‘এ কাজের জন্য আমি নই। বরং তোমরা ইবরাহিম আ:-এর কাছে যাও। কারণ, তিনি হলেন আল্লাহর খলিল।’ তখন তারা ইবরাহিম আ:-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, ‘আমি এ কাজের জন্য নই। তবে তোমরা মূসা আ:-এর কাছে যাও। কারণ তিনি (সরাসরি) আল্লাহর সাথে কথা বলেছেন।’ তখন তারা মূসা আ:-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, ‘আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা ঈসা আ:-এর কাছে যাও। কারণ তিনিই রূহুল আল্লাহর ও বাণী।’ তারা তখন ঈসা আ:-এর কাছে আসবে।

তিনি বলবেন, ‘আমি তো এ কাজের জন্য নই। তোমরা বরং মুহাম্মদ সা:-এর কাছে যাও।’ এরপর তারা আমার কাছে আসবে। আমি বলব, আমিই এ কাজের জন্য। আমি তখন আমার রবের কাছে অনুমতি চাইব। আমাকে অনুমতি দেয়া হবে। আমাকে প্রশংসাসূচক বাক্য ইলহাম করা হবে যা দিয়ে আমি আল্লাহর প্রশংসা করব, যেগুলো এখন আমার জানা নেই। আমি সেসব প্রশংসাবাক্য দিয়ে প্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাব। তখন আমাকে বলা হবে, ইয়া মুহাম্মদ! মাথা উঠাও। তুমি বলো, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। সুপারিশ করো, গ্রহণ করা হবে। তখন আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমার উম্মত! আমার উম্মত! বলা হবে, যাও যাদের হৃদয়ে জবের দানা পরিমাণ ঈমান আছে, তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করে দাও। আমি গিয়ে এমনই করব। তারপর আমি ফিরে আসব এবং আবার সেসব প্রশংসাবাক্য দ্বারা আল্লাহর প্রশংসা করব এবং সিজদায় পড়ে যাব।

তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠাও। তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। সুপারিশ করো, গ্রহণ করা হবে। তখনো আমি বলব, হে আমার রব! আমার উম্মত! আমার উম্মত! তখন বলা হবে, যাও যাদের এক অণু কিংবা সরিষা পরিমাণ ঈমান আছে তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বের করো। আমি গিয়ে তাই করব। আমি আবার ফিরে আসব এবং সেসব প্রশংসাবাক্য দিয়ে আল্লাহর প্রশংসা করব। আর সিজদায় পড়ে যাব। আমাকে বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠাও। বলো, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। সুপারিশ করো, গ্রহণ করা হবে। আমি তখন বলব হে আমার রব, আমার উম্মত! আমার উম্মত! এরপর আল্লাহ বলবেন, যাও, যাদের অন্তরে সরিষার দানার চেয়েও অতি ক্ষুদ্র পরিমাণও ঈমান আছে, তাদেরকেও জাহান্নাম থেকে বের করে আনো।

আমি যাব এবং তাই করব। তখন বলা হবে, হে মুহাম্মদ! মাথা উঠাও। বলো, তোমার কথা শোনা হবে। চাও, দেয়া হবে। শাফায়াত করো, গ্রহণ করা হবে। আমি বলব, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে তাদের সম্পর্কে শাফায়াত করার অনুমতি দান করুন, যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে (তবে অবশ্যই ঈমানের ওপর অটল থেকে মৃত্যু বরণ করতে হবে)। তখন আল্লাহ বলবেন, আমার ইজ্জত, আমার পরাক্রম, আমার বড়ত্ব ও আমার মহত্ত্বের শপথ! যারা ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ’ বলেছে, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের সবাইকে জাহান্নাম থেকে বের করব’ (সহিহ বুখারি-৭৫১০)।


যারা শাফায়াত লাভ করবে

উপরিউক্ত হাদিস থেকে জানা গেল যে, যারা মুখলেস ঈমানদার, যাদের অন্তরে শস্য পরিমাণ বা তার চেয়েও কম ঈমান আছে এবং সেই ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন তারা ধাপে ধাপে রাসূল সা:-এর শাফায়াত লাভ করবেন। মুহাম্মদ ইবনে সালামা রহ: আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস রা: থেকে বর্ণনা করেন। তিনি নবী করিম সা:কে বলতে শুনেছেন, ‘যখন তোমরা মুয়াজ্জিনকে আজান দিতে শুনবে তখন সে যেরূপ বলে, তোমরাও তদ্রƒপ বলবে। অতঃপর তোমরা (আজান শেষে) আমার প্রতি দরুদ পাঠ করবে।

কেননা, যে ব্যক্তি আমার ওপর একবার দরুদ পাঠ করবে আল্লাহ তায়ালা তার ওপর ১০টি রহমত নাজিল করবেন। অতঃপর তোমরা আল্লাহর কাছে আমার জন্য ‘ওয়াসিলা’ প্রার্থনা করো এবং ‘ওয়াসিলা’ হলো জান্নাতের একটি বিশেষ স্থান। আল্লাহ তায়ালার একজন বিশিষ্ট বান্দা ওই স্থানের অধিকারী হবেন এবং আমি আশা করি আমিই সেই বান্দা। অতঃপর যে ব্যক্তি আমার জন্য ‘ওয়াসিলার’ দোয়া করবে তার জন্য শাফায়াত করা আমার ওপর ওয়াজিব হবে’ (সহিহ আবু দাউদ-৫২৩)।
যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যারা রাসূল সা:-এর আনুগত্য করে, পাপী হওয়া সত্ত্বেও যারা রাসূলের মিল্লাতে বিশ্বাসী তারাও রাসূলুল্লাহ সা:-এর শাফায়াত লাভ করবেন।

মো: আবদুল গনী শিব্বীর : মুহাদ্দিস