যে ৩ সময়ে আয়াতুল কুরসি বড়ই ফজিলতের

যে ৩ সময়ে আয়াতুল কুরসি বড়ই ফজিলতের

ছবি: সংগৃহীত

আয়াতুল কুরসি পবিত্র কোরআনের সবচেয়ে ফজিলতপূর্ণ আয়াত। সুরা বাকারার ২৫৫ নম্বর আয়াতকে আয়াতুল কুরসি বলা হয়। মুমিনের কর্তব্য, এই পবিত্র আয়াতকে প্রতিদিনের নিয়মিত আমল বানিয়ে নেওয়া। তিন সময়ে আয়াতুল কুরসি পাঠ বড়ই ফজিলতপূর্ণ আমল। সেগুলো হলো-

১. প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর
প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পড়া নবীজির সুন্নত। এর ফজিলত সম্পর্কে আবু উমামা (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি প্রত্যেক ফরজ নামাজের পর আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে, তার জান্নাতে প্রবেশের পথে মৃত্যু ছাড়া আর কোনও অন্তরায় থাকবে না।’ (শুআবুল ঈমান: ২৩৯৫; নাসায়ি: ৯৪৪৮, তাবারানি: ৭৮৩২)

২. শোয়ার সময়
ঘুমানোর আগে আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে সওয়াব তো হবেই, উপরন্তু সারারাত শয়তান থেকে মুক্ত থাকা যাবে। এ সম্পর্কে একটি সুন্দর ঘটনা সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে। হাদিসটিতে এক শয়তানের ঘটনা বর্ণিত হয়েছে, যেখানে শয়তান বন্দী হচ্ছিল, তখন সে মুক্তি পাওয়ার শর্তে প্রকাশ করে দিয়েছে যে, আয়াতুল কুরসি পড়ে ঘুমালে আল্লাহ তাআলা পাহারাদার নিযুক্ত করেন, ওই পাহারাদার সঙ্গে থাকেন। শয়তান সকাল পর্যন্ত তার কাছে আসতে পারে না। (দ্র: সহিহ বুখারি: ২৩১১) অন্য হাদিসে নবীজি বলেছেন, ‘যখন তুমি শয্যা গ্রহণ করবে তখন আয়াতুল কুরসি পাঠ করবে। তাহলে সর্বদা আল্লাহর পক্ষ হতে তোমার জন্য একজন হেফাজতকারী থাকবে এবং সকাল পর্যন্ত তোমার কাছে  শয়তান আসতে পারবে না। (সহিহ বুখারি: ৫০১০)

৩. সকাল-সন্ধ্যায় একবার করে
পার্থিব নিরাপত্তায় আয়াতুল কুরসি অনন্য এক আমল। হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সকাল-সন্ধ্যায় একবার আয়াতুল কুরসি পাঠ করলে পাঠকারী সারা দিন-রাত শয়তানের আক্রমণ থেকে নিরাপদ থাকবে। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সকালে আয়াতুল কুরসি তেলাওয়াত করবে সে এর মাধ্যমে সন্ধ্যা পর্যন্ত (আল্লাহর) হেফাজতে থাকবে। আর যে ব্যক্তি সন্ধ্যায় তা তেলাওয়াত করবে সে এর মাধ্যমে সকাল পর্যন্ত (আল্লাহর) হেফাজতে থাকবে। (তিরমিজি: ২৮৭৯)

প্রতিদিন মোট আটবার আয়াতুল কুরসি পাঠের নির্দেশনা পাওয়া যাচ্ছে এখানে- সকাল-সন্ধ্যায়, পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর এবং শোয়ার সময়। এই মোবারক আয়াতটি অর্থসহ নিচে দেওয়া হলো। পাঠকরা অর্থ জেনে নেবেন। এই আয়াতের অর্থ জানা আরেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আল্লামা ইবনে কাসির (রহ)-এর বক্তব্য অনুসারে এই মহিমান্বিত আয়াতে ১০টি স্বয়ংসম্পূর্ণ বাক্য রয়েছে। যেগুলোর মূল বিষয়বস্তু, তাওহিদ। শুরই হয়েছে اَللهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَ আল্লাহ তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই- এই পবিত্র বাক্য দিয়ে।

আয়াতুল কুরসি (আরবিতে)
اللَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ

আয়াতুল কুরসির বাংলা উচ্চারণ
আল্লাহু লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়্যুল কাইয়ুম, লা তা’খুজুহু সিনাতুঁও ওয়ালা নাউম। লাহু মা-ফিসসামা-ওয়া-তি ওয়ামা ফিল আরদ্ব। মান জাল্লাজি ইয়াশফা’উ ইনদাহু ইল্লা বিইজনিহি। ইয়া’লামু মা বাইনা আইদিহিম ওয়ামা খালফাহুম। ওয়ালা ইয়ুহিতুনা বিশাইইম মিন্ ইলমিহি ইল্লা বিমা- শাআ। ওয়াসি‘আ কুরসিয়্যুহুস সামা-ওয়াতি ওয়াল আরদ্ব। ওয়ালা ইয়াউদুহু হিফজুহুমা ওয়া হুয়াল আলিয়্যূল আজিম।

আয়াতুল কুরসির অর্থ
আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই, তিনি চিরঞ্জীব, সবকিছুর ধারক। তাঁকে তন্দ্রা ও নিদ্রা স্পর্শ করতে পারে না। আসমান ও জমিনে যা কিছু রয়েছে, সবই তাঁর। কে আছ, যে সুপারিশ করবে তাঁর কাছে তাঁর অনুমতি ছাড়া? দৃষ্টির সামনে কিংবা পেছনে যা কিছু রয়েছে, সে সবই তিনি জানেন। তাঁর জ্ঞানসীমা থেকে তারা কোনো কিছুকেই পরিবেষ্টিত করতে পারে না, কিন্তু যতটুকু তিনি ইচ্ছা করেন। তাঁর কুরসি সমস্ত আসমান ও জমিনকে পরিবেষ্টিত করে আছে। আর সেগুলোকে ধারণ করা তাঁর পক্ষে কঠিন নয়। তিনিই সর্বোচ্চ এবং সর্বাপেক্ষা মহান।